ব্রিটিশ কাউন্সিল সাময়িক বন্ধের ঘোষণা: অন্যায় সিদ্ধান্ত

বিভাষ বাড়ৈ |

brit

হঠাৎ করেই নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশে কার্যক্রম স্থগিত করায় অনিশ্চয়তায় পড়েছে ইংলিশ মিডিয়ামের হাজার হাজার ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন। সন্তান নিয়ে চরম উদ্বেগে পড়েছেন অভিভাবকরা। কিন্তু বিশ্বের বহু দেশে দফায় দফায় জঙ্গী হামলার পরও যেখানে কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশে একটি জঙ্গী হামলার পরই ব্রিটিশ কাউন্সিলের এমন ঘোষণায় ব্যাপক আপত্তি উঠেছে।

প্রশ্ন উঠেছে জঙ্গীকবলিত পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, লেবাননসহ অন্যান্য দেশে যদি কার্যক্রম চলতে পারে তাহলে বাংলাদেশের বিষয়ে কেন এমন অবস্থান? ব্রিটিশ কাউন্সিলের অবস্থানকে ‘অন্যায়, আপত্তিকর ও রাজনৈতিক’ অভিহিত করে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদসহ বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা নিয়ে।

আন্তর্জাতিক রাজনীতির খেলায় বাংলাদেশকে ফেলা হয়েছে- অভিযোগ করে বিশেষজ্ঞরা ব্রিটিশ কাউন্সিল তথা ব্রিটিশ সরকারকে বাস্তবতা বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কেউ কেউ এ পদক্ষেপকে বাংলাদেশের ‘ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা’ বলে অভিযোগ এনে বলেছেন, আগ বাড়িয়ে এ ধরনের কোন চেষ্টা সফল হবে না। কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়ে আপত্তি তুলেছেন উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরাও।

বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিলের ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেটে অফিস রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডে প্রধান অফিস ছাড়াও ঢাকার ধানম-ি, উত্তরা এবং গুলশানে শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রতিটি অফিসের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বিশেষ করে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর নানামুখী সম্পর্ক রয়েছে।

এটি শুধু কেবল কোন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নয়; শিক্ষা প্রসারে বিভিন্ন কার্যক্রম ছাড়াও সামাজিক সাংস্কৃতিক নানান অঙ্গনে জড়িয়ে রয়েছে ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশ অফিস। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ‘ও’ লেভেল, ‘এ’ লেভেল পরীক্ষা গ্রহণ, আইইএলটিএস পরীক্ষা গ্রহণ, লাইব্রেরি সেবা হিসেবেই ব্রিটিশ কাউন্সিল অধিক পরিচিত হলেও মূলত এর কার্যক্রম অনেক বিস্তৃত।

যুক্তরাজ্যে পড়তে ইচ্ছুকদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান, স্কলারশিপ, সব বয়সী এবং পেশার লোকজনের জন্য নানান ধরনের ইংরেজী শিক্ষা কোর্স পরিচালনাসহ শিল্প, সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে বহুমুখী সম্পর্ক স্থাপনে কাজ করে যাচ্ছিল ব্রিটিশ কাউন্সিল ১৯৫১ সাল থেকেই। বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরির সদস্য সংখ্যা ছয় হাজারের বেশি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১১০টি দেশে প্রায় একই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। যেখানে প্রতিষ্ঠানটির অফিস আছে ১৯১টি।

এমন এক পরিস্থিতিতে সম্প্রতি গুলশানে জঙ্গী হামলা, জঙ্গী দমন অভিযানে কল্যাণপুরে ৯ জঙ্গী নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে ২৭ জুলাই নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের ব্রিটিশ কাউন্সিলের সব অফিস। কাউন্সিল অফিস বন্ধ করে দেয়ায় এর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত লোকজনের মধ্যে উদ্বেগ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

অনলাইনে বিভিন্ন বিষয়ে তথ্যসেবার সুযোগ খোলা রাখা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন বিভিন্ন কোর্সের শিক্ষার্থীরা। কার্যক্রম স্থগিত করে বিবৃতিতে ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের পরিচালক বারবারা উইকহ্যাম বলেছেন, আমরা লক্ষ্য করেছি সাধারণ জনগণ নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং তাদের মধ্যে আতঙ্ক দিন দিন বাড়ছে।

ব্রিটিশ কাউন্সিলে যারা কাজ করেন এবং এখান থেকে যারা সেবা গ্রহণ করে থাকেন, তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই মূলত আমরা সাময়িকভাবে বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সব অফিস বন্ধ ঘোষণা করছি। সাময়িকভাবে বন্ধ থাকা অবস্থায় আমাদের গ্রাহকরা যদি কোন ধরনের তথ্য জানতে চান, তবে তারা ই-মেল করে তথ্য জানতে পারবেন।

প্রতিষ্ঠানটি গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বন্ধ ঘোষণা করার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড় দেখা যায় ব্রিটিশ কাউন্সিলের সামনে। পূর্বঘোষণা ছাড়া হঠাৎ করে সব অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে প্রতিদিনই খোঁজ নিতে আসছেন অভিভাবকরাও। শনিবারও সকাল থেকে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলসহ বিভিন্ন কোর্সের শিক্ষার্থীরা এসে ভিড় জমিয়েছেন। খোঁজ নিতে এসেছেন কবে খুলবে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু এসেও কোন লাভ হয়নি, তারা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ দেখতে পান। ধানমন্ডি ও গুলশান অফিসেও দেখা যায় একই চিত্র। নিরাপত্তা কর্মীদের পাহারায় অফিসগুলোতে তালাবন্ধ থাকায় কোন তথ্য দেয়া হচ্ছে না। প্রতিটি অফিসের সামনে বন্ধের বিজ্ঞপ্তি লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।

ফুলার রোডে ব্রিটিশ কাউন্সিলের অফিসে আসা ‘ও’ লেভেলের পরীক্ষার্থী আতাউর রহমান বলছিলেন, আগামী ডিসেম্বর মাসে আমার পরীক্ষা শুরু কথা রয়েছে। তাই রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। কিন্তু হঠাৎ পত্রিকায় দেখলাম ব্রিটিশ কাউন্সিল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে। তারপর থেকে আমি দুশ্চিন্তায় আছি। তিনি আরও বলেন, এসব পরীক্ষায় রেজিস্ট্রেশন করতে অনেক টাকা খরচ হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা না হলে রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে যায়।

এসব বিষয় জানতে এখানে এলেও কিছুই জানতে পারলাম না। ‘এ’ লেভেল পড়ুয়া ছাত্র রাজীব মিত্র জনকণ্ঠ অফিসে ফোন করে বলেছেন, কোন দেশে তো এমন করেছে বলে শুনিনি। তাহলে হঠাৎ বাংলাদেশে এমন কেন করা হলো? কবে থেকে কার্যক্রম আবার শুরু হবে তাও বলা হয়নি। এখন কী হবে বুঝতে পারছি না।

স্কলাসটিকা স্কুলের ‘এ’ লেভেলে পড়ুয়া হোসাইন আখতার সমস্যার কথা তুলে ধরে বলছিলেন, হঠাৎ করেই ব্রিটিশ কাউন্সিল বন্ধ হয়ে যাওয়াতে বেশ ঝামেলায় পড়তে হবে বলে মনে হচ্ছে। দেশের যে অবস্থা তাতে নিরাপত্তারও দরকার রয়েছে। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যত দ্রুত সম্ভব জোরদার করে অফিসটি খুলে দেয়া উচিত। তবে একই সঙ্গে তার প্রশ্নওÑ সরকার তো শক্ত অবস্থান নিয়েছে, তাহলে অফিস বন্ধ করার কী দরকার ছিল? যেহেতু ব্রিটিশ দূতাবাস খোলা আছে এটাও তো খোলা রাখা যেত।

বিদেশে স্কলারশিপ নিতে আগ্রহীরাও বিপাকে পড়েছেন। তারা ব্রিটিশ কাউন্সিলের অধীনে আইইএলটিএস, জিমেট, জিআরইসহ বিভিন্ন কোর্সের রেজিস্ট্রেশন করেছেন। কেউ কেউ তাদের ক্লাস শুরু করতে চেয়েছিলেন, আবার অনেকেরই ক্লাস শেষ পর্যায়ে। কিন্তু এখন মাঝপথে এসে তাদের পরিকল্পনা সব থমকে গেল বলে মনে করছেন অনেকেই।

এদিকে ব্রিটিশ কাউন্সিলের হেড অব মার্কেটিং এ্যান্ড কমিউনিকেশন আর্শিয়া আজিজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, এ মুর্হূতে আমাদের অফিসের নিরাপত্তা রিভিউ (মূল্যায়ন) করছি। তারা সিকিউরিটি দেখবে, কোথাও সিকিউরিটি উন্নত করার প্রয়োজন হলে সেগুলো আমাদের জানাবে। আইইএলটিএসসহ অন্যান্য পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, অফিস বন্ধের ফলে পরীক্ষার ওপর কোন প্রভাব পড়বে না।

কারণ পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন অনলাইনে এবং ফি ব্যাংকে জমা দেয়ার সব ব্যবস্থা আছে। এ পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা করার কোন কারণ নেই বলে জানান তিনি। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, বিশ্বের ১১০টি দেশে বাংলাদেশের মতো ব্রিটিশ কাউন্সিলের কার্যক্রম বিস্তৃত। কবে থেকে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করা যাবে? শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন কোন তথ্য আছে কিনা? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না কোন নতুন তথ্য নেই। যদি কোন আপডেট থাকে তবে আবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হবে।

এদিকে জঙ্গী হামলার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে সকল অফিস বন্ধ করে কার্যক্রম স্থগিত করার ঘোষণা দেয়া হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম সম্পর্কে তাদের ওয়েবসাইটেই দেখা গেছে বিশ্বের জঙ্গী ও সন্ত্রাস কবলিত দেশগুলোতে ঠিকই তারা চালিয়ে যাচ্ছে কার্যক্রম। বিশ্বের যেসব দেশে প্রায় প্রতিদিন জঙ্গী হামলায় অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে, যেসব দেশ আন্তর্জাতিক জঙ্গীদের রীতিমতো আস্তানায় পরিণত হয়েছে সেখানেও কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। সিরিয়া ছাড়া সকল দেশেই কার্যক্রম চলছে প্রতিষ্ঠানটির।

জঙ্গীকবলিত পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, লেবাননসহ অন্যান্য দেশে চলছে কাজ। আফগানিন্তানের কাবুলে অফিস রয়েছে ব্রিটিশ কাউন্সিলের। পাকিস্তানের পাঁচটি প্রদেশে অফিস আছে প্রতিষ্ঠানটির। ইসলামাবাদ, করাচী, লাহোর, মুলতান, ফয়সালাবাদে অফিস খুলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। কার্যক্রম চলছে জঙ্গী হামলা ও যুদ্ধকবলিত ইরাক, লেবানন, মিসর, জর্দান, তুরস্কসহ অন্যান্য দেশে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, জঙ্গীবাদীদের কারণে যেখানে প্রতিদিন মানুষ মরছে, যেখানে বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা নিয়মে পরিণত হয়েছে, সেখানে যদি কার্যক্রম চলতে পারে তাহলে বাংলাদেশের বিষয়ে কেন এমন নেতিবাচক অবস্থান?

ব্রিটিশ কাউন্সিলের এ ঘোষণায় আমাদের দেশের ভাবমূর্তিতে কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, আমি মনে করি জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সরকার যে কার্যকর ও কঠোর অবস্থান নিয়েছে, যেভাবে ব্রিটিশ কাউন্সিলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে, তাতে কার্যক্রম স্থগিতের কোন দরকার ছিল না।

বরং ব্রিটিশ কাউন্সিলের নিজস্ব ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা বা অপ্রতুলতা ছিল বলেই আমার মনে হচ্ছে। হয়ত নিজেদের এ দুর্বলতার কারণেই তারা কার্যক্রম স্থগিত করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে এ শিক্ষাবিদ বলছিলেন, বহু দেশে ব্রিটিশ কাউন্সিলের কার্যক্রম আছে কিন্তু আমাদের দেশের মতো এত ব্যাপক কার্যক্রম খুব কম দেশেই আছে। এখানে তাদের কাজের পরিধি অনেক বেশি।

বাংলাদেশ বিষয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের অবস্থানকে ‘আগ বাড়িয়ে’ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ এনেছেন জাতীয় শিক্ষানীতি প্রনয়ণ কমিটির সদস্য সচিব শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শেখ ইকরামুল কবীর। তিনি ব্রিটিশ কাউন্সিলের ঘোষণাকে হতাশাজনক অভিহিত করে বলেন, যেখানে দু’দিন পরপর জঙ্গী হামলা হচ্ছে, যেসব দেশে ট্রাক চালিয়ে জঙ্গীরা নির্বিঘেœ অসংখ্য মানুষকে হত্যা করছে, যেখানে শপিংমল ও থিয়েটার হলে বারবার হামলা হচ্ছে, সেখানে যদি কার্যক্রম চালানো যায় তাহলে বাংলাদেশে এ ধরনের ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।

অন্য বহু দেশে তাদের কার্যক্রম চলছে, যার তুলনায় আমাদের দেশের অবস্থা প্রায় ৮০ ভাগ ভাল। তাদের দেশের ২০ ভাগ জঙ্গী হামলা আমাদের দেশে হয় না। একদিকে সরকারের কঠোর অবস্থান, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের জঙ্গীবাদবিরোধী মনোভাব অন্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি ইতিবাচক এখানে। তার পরও ব্রিটিশ কাউন্সিল আগ বাড়িয়ে এ ধরনের ঘোষণা দিল। তিনি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, যেখানে অহরহ জঙ্গী হামলা হচ্ছে; ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক দফা হামলা হলো। আমাদের দেশের অবস্থা কি তার চেয়েও খারাপ?

এদিকে, বিশ্বের বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় না নিয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করলেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। বাংলাদেশের বিষয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সিদ্ধান্তকে তিনি অমানবিক ও অন্যায় হিসেবে অভিহিত করেছেন। বলেন, এর মধ্য দিয়ে আমাদের ওপর অন্যায় করা হয়েছে। এর চেয়ে জঙ্গীপ্রবণ দেশগুলোতে যদি কার্যক্রম নির্বিঘেœ চলতে পারে তাহলে এখানে হঠাৎ এ ধরনের ঘোষণা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

আমাদের দেশের অবস্থা শতভাগ ভাল তা আমরা বলছি না। তবে তারাও যেটা করেছে তাও ঠিক নয়। এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিটিশ কাউন্সিল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক বৈশ্বিক রাজনীতির খেলায় আমরা পড়ি তা আমরা চাই না।

কারণ ওই খেলায় অন্যায় আছে, অমানবিকতা আছে, বৈষম্য আছে, নোংরামি আছে। আমরা চাই না আমাদের দেশ নিয়েও বৈশ্বিক রাজনীতির কোন সিদ্ধান্ত হোক। কারণ জঙ্গীকবলিত বহু দেশে ব্রিটিশ কাউন্সিল কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাদের তুলনায় আমাদের দেশের অবস্থা নিশ্চয়ই খারাপ নয়।

এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি বিদেশীদের সঙ্গে আয়োজিত এক বৈঠকের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ওই বৈঠকে নিরপত্তাহীনতার কথা তুলে বিদেশী বন্ধুরা অনেকে বলে বসলেন, কর্মকর্তারা তাদের এখানকার দূতাবাসগুলোতে নন-ফ্যামিলি পোস্টিংয়ের কথা ভাবছেন। মানে এখানে তারা সন্তান, স্ত্রীদের নিয়ে পোস্টিং নেবেন না। কারণ নিরাপত্তা।

আমি সঙ্গে সঙ্গে তাদের বলেছি, আপনারা কি বাংলাদেশকে আফগানিস্তান পেয়েছেন? পাকিস্তান পেয়েছেন? এটা কী ধরনের প্রস্তাব ভাই? তারা উত্তর দিয়েছেন, এখানে সন্ত্রাসীর বিচার নিশ্চিত করার বিষয়টিতে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। ঠিকভাবে বিচারের বিষয়টি এগোয়না। রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, এটা তো অস্বীকার করা যাবে না যে, আমরা জঙ্গীদের বিচার ঠিকভাবে করতে পারছি না।

শত শত জঙ্গী জামিন নিয়ে বের হয়ে হাওয়া হয়ে যায়। এটা তো উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়। এসব বিষয়ে আমাদের খেয়াল রাখা জরুরী। তবে ব্রিটিশ কাউন্সিলের ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0060570240020752