ভাতা পেলেন সেই মেধাবী রাজকুমার

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি |

ভাতা পেলেন অসহায় ও মানসিক ভারসাম্যহীন ঢাকা মেডিকেলের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাজকুমার শীল। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদে ডেকে নিয়ে রাজকুমার ও তার সহদর আনন্দ শীলের খোঁজ খবর নিয়ে মাসিক ভিত্তিতে প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড তুলে দেন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম। সেই সাথে উপজেলা প্রশাসনের দেয়া বাড়ির পাশাপাশি আরো সরকারি জমি বরাদ্দ দিয়ে সেখানে নতুন ঘর তৈরি করে দেয়ার কথা বলেন এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি স্থায়ী তহবিল করে দেয়ার আশ্বাসও দেন জেলা প্রশাসক। এর আগে, রাজকুমারের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয় বিরামপুর উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরও।

রাজকুমার ও তার সহোদর আনন্দ শীল এর খোজ খবর নিয়ে মাসিক ভিত্তিতে প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড তাদের হাতে তুলে দেন দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম।  ছবি: মেহেদী হাসান উজ্জল

মেধাবী ছাত্র রাজকুমার শীল (৫৬)। দারিদ্র্যতার কষাঘাতে বেড়ে উঠলেও নামের সঙ্গে রয়েছে রাজকীয় ভাব, চেহারাতেও রয়েছে সেই ছাপ। মেধার খেলায় চমক দেখিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পাড়ি দিয়েছেন বেশ কয়েকটি কঠিন ধাপ। কিন্তু নিয়তির কি পরিহাস! স্বাস্থ্য বিড়ম্বনায় সে আজ মাত্র ৩০-৫০ টাকার দিনমজুর।

রাজকুমার শীলের বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুর পৌরশহরের ঘাট পাড় এলাকায়। নগিন শীল ও  মা পার্বতী রাণীর ছেলে তিনি।  পেশায় নাপিত ছিলেন বাবা নগিন শীল। বাবা মারা গেছেন ৭ বছর আগে। পরিবারের চার ভাইয়ের মধ্যে সে মেঝ। এ ছাড়াও ২ বোন রয়েছে। 

বেশ কিছুদিন আগে রাজকুমার শীলের মা পার্বতী রাণী বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. বেলায়েত হোসেনের কাছে ছেলের শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজ সত্যায়িত করতে যান। তার দু’টি ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য কার্ড করতে এ কাগজ দরকার ছিল। এসময় ডা. বেলায়েত হোসেন কাগজ হাতে নিয়ে রাজকুমার শীলকে জিজ্ঞাসা করেন পড়াশোনা কতো দূর করেছেন। তখন রাজকুমার শীল নিজেকে ঢাকা মেডিকেলের ছাত্র বলে পরিচয় দেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে ওই চিকিৎসক ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে রাজকুমার শীলের জীবনের গল্প তুলে ধরেন। মুহূতেই সেই ফেসবুক স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়ে যায়।  

ছোট বেলা থেকেই রাজকুমার শীল ছিলেন খুবই মেধাবি। প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়েছিল সে। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে বিরামপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করে রাজকুমার। এরপর ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয় সে। প্রথম প্রফেশনাল পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলেও দ্বিতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় ফার্মাকোলজিতে অকৃতকার্য হওয়ার পর দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেও ভালো রেজাল্ট করতে না পেরে গুরুতর মানসিক অসুস্থতায় ( সিজোফেনিয়া) পড়ে যায় মেধাবী রাজকুমার। এরপর দীর্ঘ ১৪/১৫ বছর ধরে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় রাজকুমার শীল। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে সে নিজেই বাড়িতে ফিরে আসে। এর মধ্যে একবছর পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে রাজকুমার। রাজকুমার শীলের আরেক ভাই আনন্দ শীল (৫০) ঢাকা তিতুমীর কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিল। তিনিও একই রোগে আক্রান্ত হয়ে স্নাতক সম্পন্ন করতে পারেননি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033791065216064