ভারতে করোনার মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা!

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ভারতে কোভিড মহামারির মধ্যে এ বছরের ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিকেল কলেজগুলোর ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা সমীচীন কি না,তা নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে।

দুদুবার পেছোনোর পর সরকার অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেপ্টেম্বরের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে পঁচিশ লক্ষরও বেশি ছাত্রছাত্রীর জন্য এই পরীক্ষাগুলোর আয়োজন হবে। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী যুক্তি দিচ্ছেন, অভিভাবকরা চাইছেন বলেই এই পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু কংগ্রেসসহ বিভিন্ন বিরোধী দল এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছে। পরীক্ষা আয়োজনের বিরুদ্ধে তারা শুক্রবার দেশ জুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভেরও ডাক দিয়েছে। এ বছর পরীক্ষা হওয়া উচিত কি না,তা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও দ্বিমত আছে।

ভারত ও ভারতের বাইরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দেড়শো শিক্ষাবিদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এক খোলা চিঠি লিখে জানিয়েছেন, ভারতে এ বছরের ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিক্যাল কলেজগুলোর জাতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার অর্থ হবে লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা।

পরীক্ষা আরও পিছিয়ে দেওয়া হলে এই সব ছাত্রছাত্রীর কেরিয়ার অন্ধকারের মুখে পড়বে বলে যুক্তি দিচ্ছেন তারা - আর আপাতত সরকারও সেই যুক্তি মেনে নেওয়ারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়ালের বক্তব্য, "অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা বহুদিন ধরেই আমাদের ওপর চাপ দিচ্ছিলেন এই জেইই ও এনইইটি পরীক্ষা আয়োজনের জন্য। তাদের প্রশ্ন ছিল, পরীক্ষা যদি অনির্দিষ্টকাল পিছিয়ে যায় তাহলে ছেলেমেয়েরা কতদিন ধরে পড়তে থাকবে?"

"এখন দুবার পেছোনোর পর আমরা আগামী মাসে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী অনলাইনে তাদের অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোডও করে নিয়েছেন। নিশ্চিন্ত থাকুন, আমরা শিক্ষার্থীদের সাথেই আছি - প্রথমে তাদের সুরক্ষা, তারপর তাদের শিক্ষা।"

তবে কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ডাকা অনলাইন বৈঠকে গতকাল বিকেলেই দেশের বিরোধী দলীয় মুখ্যমন্ত্রীরা প্রায় সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন,এই মহামারির মধ্যে পরীক্ষা আয়োজনের কোনও সুষ্ঠু পরিবেশই নেই।

মিস ব্যানার্জি যুক্তি দিচ্ছেন, "পঁচিশ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর জন্য সাড়ে চার হাজারেরও বেশি পরীক্ষাকেন্দ্র করতে হবে। এখন যেখানে লকডাউনে ট্রেন, প্লেন, পরিবহন কিছুই ঠিকমতো চলছে না সেখানে ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষার সেন্টারে পৌঁছবে কীভাবে?"

"এর আগে কেন্দ্রই তো আমাদের পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেছিল এ বছর অন্য কোনও ব্যবস্থা করা হবে। সেই সিদ্ধান্ত আবার পাল্টাল কেন? আমি তো বুঝতেই পারছি না আমাদের ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষায় বসবে কীভাবে?"

বিরোধীরা শুক্রবার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভেরও ডাক দিয়েছেন - অন্য দিকে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পরীক্ষায় বসা নিয়ে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন মত।

পাটনার ছাত্র কিশোর রাইয়ের যুক্তি, "দেশের পুলিশ বা ডাক্তারদের মতো কোভিড-যোদ্ধারা যদি দিনরাত এক করে মাসের পর মাস কোভিডের বিরুদ্ধে লড়তে পারেন, তাহলে ছাত্রছাত্রীরা সমস্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে মাত্র একটা দিন একটা পরীক্ষায় বসতে পারবে না?"

দিল্লিতে মেডিকেলে ভর্তির প্রত্যাশী কোমল আবার বলছিলেন, "পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকা বা বেরোনোর কোনও আলাদা স্লট রাখা হয়নি। ফলে বুঝতেই পারছেন সেখানে একসাথে কী ধরনের ভিড় হবে।"

"আর দেশ জুড়ে এই যে হাজার হাজার সেন্টার, সেগুলোর সবগুলোতে সব ধরনের ব্যবস্থা ঠিকমতো নেওয়া হবে সেই নিশ্চয়তাই বা কোথায়?"

ফলে এ বছর ভারতে যে লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পাঠক্রমে যোগ দেওয়ার কথা, তার পদ্ধতি নিয়ে অনিশ্চয়তা ও ক্ষোভ-বিক্ষোভ কিন্তু এখনও রয়ে যাচ্ছে।

সূত্র: বিবিসি


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055160522460938