বরখাস্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস পলাতক থাকায় চরম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। প্রশাসনিক কোনো আদেশ-নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে না। আর্থিক লেনদেন পুরোপুরি বন্ধ। আলমারির চাবি নাজনীন ফেরদৌসের কাছে থাকায় রেজ্যুলেশন বুকসহ গুরুত্বপূর্ণ নথি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। এমনকি, তিনি অনুপস্থিত থাকায় গভর্নিং বডির সভা পর্যন্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে সভাপতির ক্ষমতাবলে বরখাস্ত করা হলেও সিদ্ধান্তটি আনুষ্ঠানিকভাবে গভর্নিং বডির সভায় এখন পর্যন্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। আবার নতুন কাউকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বও দেওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে পুরো প্রতিষ্ঠানে নেমে এসেছে স্থবিরতা।
গতকাল সকালে বেইলি রোডে বিদ্যালয়ের মূল শাখায় অধ্যক্ষের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ভেতরের সভাকক্ষে বসে গভর্নিং বডির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার ও সদস্য আতাউর রহমান দাপ্তরিক কাজ করছেন। বুধবার থেকে অধ্যক্ষ পলাতক থাকায় মূলত তাদের মৌখিক আদেশ-নির্দেশেই বিদ্যালয় চলছে। শিক্ষকরা নানা বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য তাদের কাছে বার বার ছুটে আসছিলেন।
কয়েক শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা চলমান। ছাত্রীদের আন্দোলনে ব্যাহত হওয়া পরীক্ষাগুলোর বিষয়ে পুনঃরুটিন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির মৌখিক নির্দেশে নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে, ধানমণ্ডি, আজিমপুর ও বসুন্ধরা শাখার প্রধানরা সংশ্নিষ্ট শাখাগুলোর নানা বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য এখন ঝুলে আছেন। কিছু কিছু বিষয়ে তারা সভাপতির মুখের কথায় কাজ করছেন। ৯ ডিসেম্বর রোববার থেকে বিদ্যালয়ে ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রীদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা। অধ্যক্ষ পলাতক থাকায় ওইদিন থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর বিষয়টিও বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা জানান, প্রতিষ্ঠানের সব লেনদেন করা হয় অধ্যক্ষের স্বাক্ষর ও সভাপতির প্রতিস্বাক্ষরে। তিনি না থাকায় ব্যাংক থেকে কোনো অর্থ উত্তোলন করা যাচ্ছে না। ফলে চলমান পরীক্ষা সংশ্নিষ্ট ব্যয়গুলোও বহন করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
গভর্নিং বডির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার বলেন, কীভাবে কী করব বুঝতে পারছি না। প্রতিষ্ঠানের সব জরুরি চাবিগুলো তার (নাজনীন ফেরদৌস) কাছে রয়েছে। তিনি না এলে তো গভর্নিং বডির সভা করে অন্য কাউকে দায়িত্ব দিতে পারছি না। কারণ তিনি এ বডির সদস্য সচিব। আর নতুন কাউকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া না গেলে প্রতিষ্ঠান চলছে না। আইনের চোখে এখন তো তিনি পলাতক।
গভর্নিং বডির একটি সূত্র জানায়, তারা নানাভাবে নাজনীন ফেরদৌসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন। তবে তিনি কোনোভাবেই তাতে সাড়া দেননি।
রাজধানীর অন্যতম এই খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেইলি রোডের মূল শাখাসহ বসুন্ধরা, আজিমপুর ও ধানমণ্ডি শাখা মিলিয়ে ২৫ হাজারের বেশি ছাত্রী পড়াশোনা করছে। মোট শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন ৬৫০ জন। এর বাইরেও কর্মচারী রয়েছে প্রায় আড়াইশ'।
গত সোমবার শান্তিনগরে নিজের বাসায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে
এ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি অধিকারী। তার আগের দিন পরীক্ষায় নকল করার অভিযোগে তাকে পরীক্ষা হল থেকে বের করে দিয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, অরিত্রি পরীক্ষায় মোবাইল ফোনে নকল নিয়ে টেবিলে রেখে লিখছিল। অন্যদিকে স্বজনদের দাবি, নকল করেনি অরিত্রি। এরপর সোমবার অরিত্রির বাবা-মাকে ডেকে নেওয়া হয় স্কুলে। তখন অরিত্রির সামনে তার বাবা-মাকে অপমান করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। অরিত্রির স্বজনরা বলছেন, বাবা-মায়ের 'অপমান সইতে না পেরে' আগেই ঘরে ফিরে আত্মহত্যা করে ওই কিশোরী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজেও দেখা যায়, বাবা-মায়ের আগেই অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায় অরিত্রি। এর পরই সে বাসায় ফিরে আত্মহত্যা করে।