ভিকারুননিসায় এইচএসসি টেস্টে ফেল করা ছাত্রীদের কাছ থেকে ৮০ লাখ টাকা আদায়

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ভিকারুননিসা নূন কলেজের এইচএসসির টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীদের মূল পরীক্ষায় অংশ নেয়ার ব্যাপারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তাদের দিয়ে ফরম পূরণ করাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বিনিময়ে মাথাপিছু ৪ হাজার টাকা অবৈধভাবে আদায় করা হচ্ছে। এতে প্রায় ৮০ লাখ টাকা উঠছে। ফেল করা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা অনেকটা নিরুপায় হয়ে এই টাকা দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাসিনা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, কিছু ছাত্রী টেস্ট পরীক্ষায় অ্যালাও (উত্তীর্ণ) হয়নি। কিন্তু সেই সংখ্যা কত তা এখনই বিচার্য বিষয় নয়। আমরা চাইব সব ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিক। ফরম পূরণে বাড়তি টাকার বিষয়ে তিনি কথা বলতে চাননি। অভিভাবকদের মতে প্রায় ২৫ শতাংশ ছাত্রী টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করেছে। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিকারুননিসা থেকে এবার প্রায় ২ হাজার ছাত্রী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ১৪৯২ জন এবং মানবিক ও বিজনেস স্টাডিজে যথাক্রমে ২০০ ও ৩০০ পরীক্ষার্থী। বিজ্ঞান বিভাগেই তিনের অধিক বিষয়ে ফেল করেছে ১১৯ জন। তাদের মধ্যে এ গ্রুপে ১৪, বি গ্রুপে ১২, সি গ্রুপে ১০, ডি গ্রুপে ১৩, ই গ্রুপে ৫, এফ গ্রুপে ১২, জি গ্রুপে ১৪, এইচ গ্রুপে ২, জে গ্রুপে ২৫ জন ফেল করেছে। বিজ্ঞানের আই গ্রুপ এবং মানবিক ও বিজনেস স্টাডিজ গ্রুপে ফেল করা ছাত্রীর পরিসংখ্যান জানা যায়নি। এক ও দুই বিষয়ে ফেল করা ছাত্রীর সংখ্যা আরও বেশি। এ সংখ্যা শতাধিক হতে পারে। সবমিলে ফেলের হার ২৫ শতাংশ বলে সূত্র জানায়। নামকরা প্রতিষ্ঠানে এত শিক্ষার্থীর ফেল করা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে কানাঘুষা চলছে। 

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমরা চাই না কেউ পাবলিক পরীক্ষার বাইরে থাকুক। আমরা আশা করব তারা পরীক্ষা দিক। পাস করুক। এজন্য পরে যত্ন নেয়া হবে।’ 

ঢাকা বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী, টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীদের মূল পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া যাবে না। এ ব্যাপারে ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘আমাদের নির্দেশনা পরিষ্কার, ফেল করা কেউ বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। কোনো প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ দিলে নিজ দায়িত্বে দেবেন।’

গত ২৯ নভেম্বর ঢাকা বোর্ডের জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ফরম পূরণে বিজ্ঞানে ২৪৫০ টাকা, মানবিকে ও বিজনেসে ১৮৯০ টাকা নেয়া হবে। এর বাইরে ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য সর্বোচ্চ ২৮০ টাকা আদায় করা যাবে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে হাইকোর্টের আদেশ উল্লেখ করে বলা হয়, ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ নেয়া যাবে না। কিন্তু অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলাপে জানা যায়, অতিরিক্ত ৪ হাজার টাকা করে শ্রেণী শিক্ষকদের কাছে নগদে জমা দেয়ার পরই তারা ফরম পূরণের অর্থ জমার ব্যাংক-রসিদ পেয়েছেন।

এদিকে ভিকারুননিসার শাখা খোলার অনুমতির কাগজপত্র এবং বিগত ৫ বছরের অডিট রিপোর্ট তলব করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদারকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে সব কাগজপত্র তিন কার্য দিবসের মধ্যে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে লিখিতভাবে জমা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া ভিকারুননিসার কতটি শাখা রয়েছে এবং ৮ম ও ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সংখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) ঢাকা বোর্ড সূত্র দৈনিক শিক্ষাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখার নবম-দশম ও একাদশ শ্রেণির অনুমোদন নেই। নিম্ন-মাধ্যমিক অর্থাৎ ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের অনুমোদন রয়েছে। অথচ চলতি বছর বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই বসুন্ধরা শাখায় একাদশ শ্রেণি চালু করেছে। আর কয়েকবছর যাবত শাখাটিতে চলছে নবম-দশম শ্রেণি।

এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান সম্প্রতি কড়া ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে টেস্টে ফের করা শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করার সুযোগ দেয়াও দুর্নীতি এবং এ জন্য শাস্তি পেতে হবে। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026850700378418