ভিকারুননিসায় টাকার বিনিময়ে শাখা পরিবর্তন, অধ্যক্ষ বললেন ভিন্নকথা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শাখা ও শিফট পরিবর্তন নিয়ে অসাধু বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ নিয়ম ভেঙে টাকার বিনিময়ে অনেক শিক্ষার্থীর শাখা পরিবর্তন করেছেন। আর এজন্য ছাত্রীপ্রতি ঘুষ বাবদ এক থেকে দেড় লাখ টাকা নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সে হিসেবে সাড়ে তিনশ শিক্ষার্থীর শাখা পরিবর্তনের নামে কমপক্ষে সাড়ে তিন কোটি টাকা ঘুষ লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। তাই বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেছেন তারা।

অভিভাবকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে পরিষ্কার এবং স্পষ্ট করে বলা হয়েছিল একজন ছাত্রী বাংলা ও ইংরেজি দুই শাখায় আবেদন করতে পারবে না এবং কোনো অবস্থাতেই ব্রাঞ্চ বা শিফট পরিবর্তন করতে পারবে না। এজন্য যারা একাধিক আবেদন করেছিল তাদের ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করা হয়। সে অনুযায়ী ব্রাঞ্চ ও শিট পরিবর্তনের আবেদন করলেও ভর্তি বাতিল হওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে বর্তমানে ব্রাঞ্চ ও শিফট পরিবর্তনের উৎসব চলছে স্কুলে। এজন্য লেনদেন হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। আমরা বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ সুজন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, চলতি বছর প্রায় সাড়ে তিনশ শিক্ষার্থী শাখা ও শিফট পরিবর্তন হয়েছে। এজন্য প্রতি শিক্ষার্থীর অভিভাবকের কাছ থেকে এক থেকে দেড় লাখ টাকা করে অবৈধভাবে আদায় করা হয়েছে। সে হিসাবে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার বেশি ঘুষ বাবদ লেনদেন হয়েছে। অভিভাবকরা বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে অবৈধভাবে শাখা ও শিফট পরিবর্তনের বিষয়টি তদন্তের দাবি জানিয়েছন অভিভাবকদের সংগঠন ‘মহিলা অভিভাবক ফোরাম’। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে পাঠানো এক আবেদনে সংগঠনটির সভাপতি জেসমিন আক্তার বলেন, বর্তমানে ব্রাঞ্চ ও শিট পরিবর্তনের কাজে অগ্রণী ভূমিকায় রয়েছেন অধ্যক্ষ ফওজিয়া। তিনি সব অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। বর্তমান জনবান্ধব সরকার সরকারি কলেজের শিক্ষক  ফওজিয়াকে এ প্রতিষ্ঠানের সব দুর্নীতি বন্ধ করার লক্ষ্যে প্রেষণে নিয়োগ দিয়েছিলেন। কিন্তু নিয়োগ পেয়ে তিনি সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছেন না। কার স্বার্থে এবং কিসের বিনিময়ে এই গণহারে ব্রাঞ্চ ও শিফট পরিবর্তন হচ্ছে তা অবশ্যই তদন্তের দাবি রাখে। তাই তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য জোরালো দাবি জানানো হয় শিক্ষামন্ত্রীকে দেয়া আবেদনে।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ফওজিয়া। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কয়েকজনের শাখা ও শিফট পরিবর্তন করা হয়েছে। একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন দেখা আমার দায়িত্ব। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পড়ে অনেক শিক্ষার্থী শাখা বা শিফট পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। তারা আমাদের কাছে এসে কান্নাকাটি করে আবেদন করে। তখন মানবিক বিবেচনায় কয়েকজনের শাখা বা শিফট পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে, এখানে যে বাণিজ্যের বা লেনদেনের অভিযোগ করা হয়েছে তা একদম সঠিক নয়। যারা অভিযোগ করেছে তাদের ব্যাপারে বলব যে, তারা পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে হেরে গেছেন। আর আমার মতো একজন সরকারি কর্মকর্তা এই প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পাওয়ায় সব দুর্নীতি বন্ধ হয়ে গেছে। পরাজিতদের অবৈধ আয়ের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা সামান্য ও ভিত্তি ছাড়া অভিযোগ নিয়ে  শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়কে বিরক্ত করছেন।

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ মোট চারটি শাখায় পরিচালিত হয়। বেইলি রোড, ধানমন্ডি, আজিমপুর ও বসুন্ধরা এ চারটি শাখা প্রতিষ্ঠানটির। এর মধ্যে বেইলি রোড শাখা বা মেইন শাখার প্রতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এমনকি শিক্ষকদের মধ্যেও এক অজানা আগ্রহ রয়েছে। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037460327148438