ভিকারুননিসায় নিম্নমানের পোশাকে কোটি টাকার বাণিজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক |

পরিচালনা পর্ষদের যোগসাজশে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রায় ২৫ হাজার ছাত্রীকে নিম্নমানের পোশাক সরবরাহ করে  বছরে পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ইব্রাহিম মোল্লা নামের একজন ঠিকাদার। অভিযোগ উঠেছে, ছাত্রীদের কাছ  থেকে মোটা অংকের টাকা নেয়া হলেও পোশাক দেয়া হয় নিম্নমানের। গত ১৪ বছর ধরে ইব্রাহিম মোল্লা নামের এক ঠিকাদার পোশাক তৈরির টেন্ডার পাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের উৎকোচ দিয়ে  টেন্ডার বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

ভিকারুননিসার চারটি শাখার প্রধান শাখাটি রাজধানীর নিউ বেইলি রোডে। বাকি তিনটি ধানমন্ডি, আজিমপুর ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। চারটিতে মোট ছাত্রী প্রায় ২৫ হাজার। এই বিপুল সংখ্যক ছাত্রীর জন্য ড্রেসকোড নির্ধারণ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ইব্রাহিম মোল্লা প্রত্যেক ছাত্রীকে পোশাক সরবরাহ করেন। এ জন্য প্রতি ছাত্রীর ড্রেসের জন্য নেয়া হয় দুই হাজার টাকা। পোশাকের জন্য দুই বছর পর পর টেন্ডার দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির ২৫ হাজার ছাত্রীর কাছ থেকে প্রতিবার ড্রেস বিক্রি বাবদ ইব্রাহিম মোল্লা ৫ কোটি টাকা আয় করেন। এর মধ্যে পোশাক বানানো বাবদ এক কোটি টাকাও তার খরচ হয় না।ইব্রাহিম মোল্লা একেক জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এক সেট ড্রেসবাবদ দুই হাজার টাকা নেন। কিন্তু বাইরে এই ড্রেস বানালে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা খরচ হতো। ইব্রাহিম মোল্লার প্রতিষ্ঠানটি ২০০৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে পোশাক সরবরাহ করছেন।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সাবেক এক অভিভাবক প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ইব্রাহিম মোল্লা নিজে চার-পাঁচজনকে দিয়ে টেন্ডার ড্রপ করান, যাতে ঘুরে-ফিরে তিনিই টেন্ডার পান। আর উৎকোচ নিয়ে এই কাজে সহযোগিতা করেন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা।

এক ছাত্রীর বাবা ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান জানান, ভিকারুননিসায় পোশাক বিক্রি করে প্রতিবার কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ইব্রাহিম মোল্লা। বছরের পর বছর স্কুলটির পোশাক বানানোর টেন্ডার নিয়ে বাণিজ্য করছেন তিনি।

নাজনীন রহমান নামে এক অভিভাবক বলেন, সবচেয়ে নিম্নমানের পোশাক দেয় ভিকারুননিসা কর্তৃপক্ষ। বারবার এটা নিয়ে কথা বললেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ইব্রাহিম নামে এক লোক স্কুলটাকে জিম্মি করে ফেলেছে। তিনি যতদিন আছেন এই পোশাকের মান আর ভালো হবে না।

নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মা সুমি বেগম জানান, আমার মেয়ে চর্মরোগে ভুগেছে বেশ কয়েকদিন। ডাক্তার জানিয়েছেন, তার স্কুলড্রেস স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সারাদিন এই নিম্নমানের ড্রেসে থাকার কারণে তার শরীরে ফোসকা পড়ে গেছে।

বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ স্কুলটির দায়িত্ব নেয় ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে। নির্বাচিত এই পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নেয়ার পর একজন সদস্য ছাত্রীদের পোশাকের মান ভালো করার উদ্যোগ নেন। তিনি প্রস্তাব দেন, বর্তমানে যে পোশাক দেয়া হচ্ছে এর চেয়েও কম টাকায় সুতি কাপড়ের পোশাক দেয়া যাবে, যা উন্নতমানের। ছাত্রীরা পরেও আরাম পাবে। তিনি বেশকিছু পোশাক নিজের টাকায় বানিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে দেখান। সেটি ছাত্রীরা বেশ ভালোভাবে গ্রহণও করেছিল। দাম ধরেছিলেন এক হাজার ২০০ টাকা।

তিনি বলেছিলেন, পোশাক সরবরাহের জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কাউকে দেয়া হবে। তবে তিনি এটা তত্ত্বাবধায়ন করবেন, যাতে কেউ এখানে দুর্নীতি না করতে পারে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তার প্রস্তাব আমলে নেয়া হয়নি। পরে পরিচালনা পর্ষদকে ‘ম্যানেজ’ করে ওই ইব্রাহিম মোল্লাই এটির কাজ বাগিয়ে নেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইব্রাহিম মোল্লার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

দীর্ঘদিনের টেন্ডার বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের প্রধান গোলাম আশরাফ তালুকদার বলেন,  সব কাজ আইনের ভেতরে থেকেই করা হচ্ছে।  আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ আসলে এবং তা প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052700042724609