ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) ভিসির দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া। এমবিবিএস ডিগ্রিধারী এ চিকিৎসক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চ্যান্সেলর (রাষ্ট্রপতি) কর্তৃক নিয়োগ পেয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী তার এ পদে নিয়োগ পাওয়ার কথা নয়। এভাবেই দেশের বিভিন্ন বিশ্বদ্যিালয়ে ভিসি নিয়োগে চলছে তেলেসমাতি কারবার। এদিকে অধ্যাপক ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া দাবি করেন- রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীর অনুমোদন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিওটির সুপারিশেই ভিসি পদে নিয়োগ পেয়েছি।
সূত্র জানিয়েছে, ২৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সতর্ক করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাতে কড়া ভাষায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়/প্রতিষ্ঠানে পদায়নের প্রস্তাবে সংশ্লিষ্ট আইন/বিধি যথাযথভাবে পর্যালোচনা করা হয় না বলে প্রতীয়মান আছে। যে পদের ক্ষেত্রে যে ধরনের যোগ্য ব্যক্তির নাম থাকা দরকার তা যথাযথভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না। চিঠিতে প্রস্তাব পাঠানোর ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দেয়া হয়। এর আগে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নিতে একইভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। জানা গেছে, শুধু ইউএসটিসিই নয়, এ রকম আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা পূরণ না করা ব্যক্তিদের ভিসি হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া কোথাও স্বঘোষিত আবার কোথাও বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওজি) কর্তৃক নিযুক্ত ‘ডেজিগনেটেড’ ব্যক্তিরা ভিসির দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ এভাবে ভিসি নিয়োগ বা দায়িত্ব পালন কোনোটিই বৈধ নয়।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ভিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৩১ নম্বর ধারায় সুলিখিত শর্ত উল্লেখ আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নানাভাবে নিযুক্তরা ভিসির দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের কেউ স্বঘোষিত। কেউ আছেন তথাকথিত দায়িত্বপ্রাপ্ত। কিন্তু আইনের দৃষ্টিতে ভিসি হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে চ্যান্সেলর বা রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি; যিনি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতির অধিকারও খর্ব করে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিওটি নিজেরাই ‘ডেজিগনেটেড’-এর নামে ভিসি নিয়োগ দিচ্ছে। এ বিধিবদ্ধ নিয়ম যারা মানছেন না, তারাই বেআইনি কাজ করছেন।
দেশে বর্তমানে ১০৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে ৯১টি চালু হয়েছে। অথচ ভিসি আছেন ৭০টিতে। প্রোভিসি আছে ২১টিতে। আইন অনুযায়ী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষ অবশ্যই থাকতে হবে, যাদের কাজ নির্দিষ্ট করা আছে। কিন্তু এ তিন কর্মকর্তা আছেন মাত্র ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এমন পরিস্থিতিতে ইউজিসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নেই, সেখানে নতুন করে কোনো বিভাগ ও অনুষদ অনুমোদন দেয়া হবে না। এ সংক্রান্ত সার্কুলার ইতিমধ্যে জারি করা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, আইনে উল্লিখিত যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা পূরণ না করার পরও ভিসি হিসেবে পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ। কয়েকদিন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ করা হয়। জানা গেছে, ওই ভিসির আইনে বর্ণিত শিক্ষকতার প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা নেই। ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। ধানমণ্ডি এলাকার আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা পূরণ না করা ব্যক্তিকে একইভাবে ভিসি পদে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। তাকে নিয়োগ করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত অবশ্য ভিসির পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান আরও তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ করে বলেন, সেখানে শিক্ষকের বাইরে অন্য পেশার ব্যক্তিদের ভিসি করা হচ্ছে, যেটা আইন সমর্থন করে না।
সৌজন্যে: যুগান্তর