মেডিকেল অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন মেডিকেল থেকে পাস করা ছাত্রলীগের সাবেক কিছু ডাক্তার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ও তার পরিবারকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে একজন মুমূর্ষু রোগীর অপারেশনের সময় তাকে অপারেশন থিয়েটারে তিনঘণ্টা আটকে রেখে গালাগাল ও হত্যার হুমকি দেয়া হয়। তারা নিয়োগ পরীক্ষায় ফেল করলেও তাদের নিয়োগ দিতে হবে বলে চাপ সৃষ্টি করে। পরে রোগী ও স্বজনদের উত্তেজনা ও হইচইয়ের মধ্যে নিয়োগপ্রার্থী দলবাজ ডাক্তাররা ওই হাসপাতাল ত্যাগ করে। এ বিষয়ে আজ থানায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আইনি পদক্ষেপ নিলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভিসি বলেন, মেধার ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হবে। হুমকিতে কাজ হবে না। হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, নিয়োগ পরীক্ষায় ফেল করার পরও দেশের বিভিন্ন সরকারি ও প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করা ডাক্তাররা ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রভাব বিস্তার করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির জন্য ভিসির ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে। ছাত্রলীগ করা এ নেতারা ডাক্তার হিসেবে নিয়োগ পরীক্ষায় পাস না করলেও চাকরি তাদেরই দিতে হবে। এজন্য প্রায় ২০০ ডাক্তার গত বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে মেডিকেল ভার্সিটিতে গিয়ে ভিসির ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। তারা গালাগাল, হুমকি ও ভাঙচুর করেছে। তাদের যে কোনোভাবে নিয়োগ দিতে হবে! কিন্তু ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ এতে রাজি না হওয়ায় তারা গত ৯ মাস ধরে অবরোধ, ভাঙচুরসহ নানা তাণ্ডব চালিয়ে আসছে।
সর্বশেষ গত বৃস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীতে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে একজন জরুরি রোগীর অপারেশন করার সময় দলবাজ ডাক্তাররা ওই হাসপাতালে ভিসি কনক কান্তি বড়ুয়ার ওপর আক্রমণ করে। গালাগাল থেকে শুরু করে যত ধরনের খারাপ আচরণ আছে সবই করেছে। এরপর ভিসি তাদের নানাভাবে শান্ত করার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে ভিসি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তদারকিতে রয়েছেন বলে জানান। এক্ষেত্রে তার কিছু করার নেই। এরপর ভিসি তাদের তালিকা চেয়েছেন। বলেন তালিকা নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হবে। তখন নিয়োগ প্রার্থী ছাত্রলীগ করা ডাক্তাররা ভিসি ও তার পরিবারকে হত্যা করে নিজেরা আত্মহত্যা করার হুমকি দেন। এরপরও ভিসি চরম ধৈর্য ধরে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। তখন তারা বাগবিতণ্ডা করে অপারেশন থিয়েটারে বিশৃঙ্খলা করে। তারা ৩ ঘণ্টার বেশি সময় ভিসিকে অবরুদ্ধ করে রাখার পর হত্যার হুমকি দিয়ে ফিরে যায়। এর আগে আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীরা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা চত্বরে বৃহস্পতিবার রাতে মশাল মিছিল ও ব্যানার, ফেস্টুনে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে ভার্সিটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
ভার্সিটি সূত্র জানায়, গত মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত মেডিকেল অফিসার হিসেবে নেয়া নিয়োগ পরীক্ষার শীঘ্রই ফল প্রকাশ করা হবে। পরীক্ষায় মেধার ভিত্তিতে যারা পাস করবেন তাদের নিয়োগ দেয়া হবে। আর তদবির ও ফেল করা রোগীমারা ডাক্তারদের জাতির পিতার প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়া সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরো বিষয়টি নিয়ে ভার্সিটি কর্তৃপক্ষকে গাইডলাইন দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নিয়োগ পরীক্ষার উত্তীর্ণদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।
এদিকে, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতা প্রফেসর ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী মেডিকেল অফিসার নিয়োগ দেয়া হবে। দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে একই প্রক্রিয়া চলছে। ছাত্রলীগ বা রাজনীতি করে আসলে তাকে চাকরি দিতে হবে-নীতিমালায় এমন কিছু নেই। এরপরও বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে তিনি স্বাচিপের নেতা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করবেন।
এদিকে, ভার্সিটির একজন সিনিয়র অফিসার বলেন, মেধা নেই এমন ডাক্তারদের নিয়োগ দিলে আন্তর্জাতিকভাবে ভার্সিটির সুনাম নষ্ট হবে। তাই নিয়ম অনুযায়ী মেধার ভিত্তিতে তাদের নিয়োগ দেয়া উচিত। এমনি আন্তর্জাতিকভাবে চিকিৎসার মান এখনো অনেক কম। যার ফলে রোগীরা এখনো ভারত, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। চিকিৎসা ও সেবার মান উন্নত হলে রোগীদের বিদেশ যাওয়া কমবে।