ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দেওয়া এসএসসি পরীক্ষার্থীদের খাতা আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। একই সঙ্গে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।
শনিবার ঢাকা, চট্টগ্রাম, জামালপুর, নওগাঁ, শেরপুর, সাতক্ষীরা, মুন্সিগঞ্জ, গাইবান্ধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বাগেরহাট ও মাদারীপুরের ২০টিরও বেশি কেন্দ্রে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পুরনো সিলেবাসের প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়। সেদিন ছিল বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা। এসব প্রশ্নপত্র ছিল পুরোনো পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য।
সংসদে প্রশ্নোত্তরে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “প্রশ্নটি অত্যন্ত যৌক্তিক। গতকাল শনিবার থেকে সারা দেশে যে এসএসসি, দাখিল ও ভোকেশনাল এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তাতে কিছু জেলার কয়েকটি কেন্দ্রে এই সমস্যাটি হয়েছে। যেটি হয় পরীক্ষায় অনিয়মিত কিছু পরীক্ষার্থী থাকে। তাদের প্রশ্নপত্র তাদের সময়কার সিলেবাসে করা হয়। যারা নিয়মিত তাদের নতুন সিলেবাস অনুযায়ী হয়। নিয়মিত ও অনিয়মিতদের প্রশ্নপত্র আলাদাই যায়।”
“নির্দেশনা থাকে নিয়মিত ও অনিয়মিতরা ভিন্ন জায়গায় বসবে। যাতে সহজে তাদের মাঝে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা যায়। যেখানের কেন্দ্রগুলোতে এই সমস্যাটা হয়েছে সেখানকার কেন্দ্র সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের ভুলের কারণে এই ঘটনাটি ঘটেছে। ওই সব কেন্দ্রে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের যারা অনিয়মিতদের প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীদের খাতা ভিন্নভাবেই দেখা হবে। যাতে কোনভাবেই তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আর যাদের ভুলের কারণে এই ঘটনা ঘটেছে ইতোমধ্যে তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সাংসদ মুজিবুল হক তার সম্পূরক প্রশ্নে শনিবারের এসএসসি পরীক্ষায় নতুন ও পুরনো সিলেবাসের পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র বিতরণে তালগোল পাকিয়ে ফেলার প্রসঙ্গ টেনে জানতে চান, “১৮টি কেন্দ্রের কয়েকশত নিয়মিত ছাত্রকে অনিয়মিত ছাত্রদের সিলেবাসের প্রশ্ন দেয়া হয়েছে। ওই সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়ার জন্য তারা প্রস্তুতি নেয়নি। ঘটনায় কয়েকজন কেন্দ্র সচিবকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এতে তো সমস্যার সমাধান হবে না। এতগুলো জায়গায় এই ভুলটা কেন হলো, জন্য কে দায়ী? আর এই ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ কী হবে? সারা দেশের মানুষ এটি জানার জন্য অপেক্ষায় আছেন।”
ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের এক সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি বলেন, “অনিয়মিতদের সিলেবাসটি পুরোটাই কিন্তু ভিন্ন নয়। সিলেবাসে খানিকটা ভিন্নতা আছে। পরীক্ষায় যে প্রশ্ন এসেছে তার সব কিন্তু নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সিলেবাসের বাইরে ছিলো না। খুবই অল্প জায়গায় ভিন্নতা আছে।”
মন্ত্রী বলেন, “পরীক্ষা বাতিল করে আবার পরীক্ষার ব্যবস্থা নিলে তো অন্য যারা পরীক্ষা দিয়েছে সেই একই প্রশ্নে তারা পরীক্ষা দিতে পারল না। কারণ সেই প্রশ্নে তো ইতোমধ্যে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। কাজেই নতুন পরীক্ষা হলেও ভিন্ন প্রশ্নে তাদের পরীক্ষা দিতে হবে। সেখানেও কিন্তু সমান মানদণ্ড দেয়া যাবে না। ঘটনার বাস্তবতায় সব থেকে ভালো সমাধানটিই আমরা বেছে নেয়ার চেষ্টা করেছি। এর থেকে ভালো, যুক্তিযুক্ত ও একই মানদণ্ড বজায় রেখে অন্য কিছু করার পরামর্শ থাকলে সেটা আমাদের দেয়া হলে বিবেচনা করা হবে।”
সরকারি দলের নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা মন্ত্রী জানান, মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করতে জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে শিক্ষকদের পৃথক বেতন কাঠামো প্রণয়নের বিষয়টি সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে।