সিলেটের ঐতিহাসিক নিদর্শন আবু সিনা ছাত্রাবাসটি অবশেষে ভেঙেই ফেলা হচ্ছে। বিভিন্ন সংগঠন থেকে ছাত্রাবাসটি রক্ষায় জোরালো দাবি উঠলেও তাতে কাজ হয়নি। গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে শুরু হয় সেটি ভাঙার কাজ। তবে প্রতিবাদও অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বুধবার নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
আবু সিনা ছাত্রাবাস ভবন সিলেট অঞ্চলের শতবছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারক। আসাম ও ব্রিটিশ স্থাপত্যরীতির নান্দনিক স্থাপনা ১৬৯ বছরের ঐতিহ্যের স্মারক ভবনটি। ১৮৫০ সালে সিলেট নগরীর কেন্দ্রস্থলে ইউরোপীয় মিশনারিরা এ ভবনের প্রথম পর্বের নির্মাণ কাজ করেন।
প্রায় তিন একর জায়গাজুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয় এ স্থাপনার সঙ্গে দুটি বিশ্বযুদ্ধ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের বুদ্ধিজীবী হত্যার স্মৃতি। ছাত্রাবাসটি ভেঙে ২৫০ শয্যার সিলেট জেলা হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত মার্চ থেকে হাসপাতাল নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়।
তবে ছাত্রাবাস ভবনটি না ভেঙে হাসপাতাল নির্মাণ করার দাবি ওঠে সিলেটের নাগরিক সমাজ থেকে। ভবন ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করায় গতকার বুধবার সিলেটের ঐতিহ্য রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়।
সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে কমরেড ধীরেন সিংহের সভাপতিত্বে ও বাপার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিমের পরিচালনায় বক্তব্য দেন সিলেটের ঐতিহ্য সংরক্ষণে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব জাসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাকির আহমদ, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম, ভাষাশহীদ মতিন উদ্দিন চৌধুরী জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রাহক ডা. মোস্তাফা শাহজামান চৌধুরী বাহার, গণতন্ত্রী পার্টির সিলেট জেলা সভাপতি আরিফ মিয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় পলিটব্যুরোর সদস্য কমরেড সিকন্দর আলী, গণজাগরণ মঞ্চ সিলেট-এর মুখপাত্র দেবাশীষ দেবু।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সিলেটবাসীর আবেগ-অনুভূতির তোয়াক্কা না করে একগুঁয়েমি সিদ্ধান্তে শতবছরের প্রাচীন এই ঐতিহ্যবাহী ভবন ভেঙে ফেলা ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।
পরে ঐতিহ্য রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ নাগরিক সমাজের জরুরি সভা চৌহাট্টার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয় আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উন্মুক্ত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।