মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশ ছাড়া এসিটি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সেকায়েপ ও সেসিপ প্রকল্পের অধীনে নিয়োগপ্রাপ্ত ছয় হাজারের বেশি শিক্ষককে মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছাড়া এমপিওভুক্ত করা যাবে না। প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ায় এসব শিক্ষক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিওভুক্তির নীতিমালার শর্ত পূরণ না করায় এই ছয় হাজার শিক্ষকের নিয়োগ এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের প্রচলিত বিধান অনুযায়ী হয়নি। দৈনিক শিক্ষার সঙ্গে আলোচনায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এমপিও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তবে কর্মকর্তারা এও বলেছেন, এই ছয় হাজার শিক্ষক খুবই যোগ্য এবং ভালো অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের। যদিও অনেকেই অন্য চাকরি পেয়ে অনত্র চলে গেছেন। প্রকল্পের বিধান অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত এই শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করতে হলে এমপিওভুক্তি প্রচলিত বিধান শিথিল অথবা মন্ত্রণালয় থেকে কোনও নির্বাহী আদেশ জারি করতে হবে। কারণ তাদের অনেকের নিবন্ধন সনদ নেই এবং তারা নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের তালিকাভুক্ত বা সুপারিশকৃতও নয়।

 এদিকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এসিটি শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করিয়ে দেয়ার নামে কতিপয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, স্থানীয় ও ঢাকার দালাল এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা তৎপর হয়েছেন। ভৈরব উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রশ্নফাঁসে অভিযুক্ত সৈয়দ শাহরিয়ার মেনজিসকে দেখা গেছে সাভার, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও রূপগঞ্জের কয়েকজন এসিটি শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষা অধিদপ্তরে ঘোরাঘুরি করতে। শিক্ষা ভবনের এমপিও দালাল জালাল উদ্দিনকেও দেখা গেছে এসিটি শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার চুক্তি করতে।   
 
জানা যায়, মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করতে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত সেকায়েপ প্রকল্পের অধীনে দুর্গম ৬৪টি উপজেলার দুই হাজার ১১টি স্কুলে গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিষয়ে ছয় হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ‘সেকায়েপ’ প্রকল্পে এসিটি কম্পোনেন্টটি যুক্ত হয়, যা শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় ফিরিয়ে আনা, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সামনে এগিয়ে নেওয়া লক্ষ্যে অভিভাবকদের সমন্বয় সভা, অতিরিক্ত ক্লাসের মাধ্যমে কোচিং বাণিজ্য, বাল্য বিবাহ ও শিশু নির্যাতন বন্ধসহ নানা ধরণের ইতিবাচক কার্যক্রম সফলতার সাথে সম্পন্ন করতে এডিশনাল ক্লাসরুম টিচার (এসিটি) প্রচেষ্টা যথেষ্ট ভূমিকা পালন করছে। এই কম্পোনেন্টে প্রায় পাঁচ হাজার দুইশ এসিটি শিক্ষক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দুই হাজার মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই তা নেই। 
অপরদিকে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ) প্রকল্পে রিসোর্স টিচার (আরটি) পদে ১ হাজার ৪৪৩ জন রয়েছে। গত বছর অস্থায়ী ভিত্তিতে এসব শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো। 
 
সেকায়েপ প্রকল্পটির মেয়াদ গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। এমপিওভুক্তির দাবিতে এবছরের শুরু থেকে কয়েক দফা বাংলাদেশ এসিটি শিক্ষক অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে এ প্রকল্পের শিক্ষকরা ঢাকাসহ সারাদেশে মানববন্ধন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেন। 
 
অধিদপ্তরের একজন উপপরিচালক দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, প্রকল্পভুক্ত এসব শিক্ষক নিয়োগের সময় মহাপরিচালকের প্রতিনিধি ছিলেন না। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। অথচ এমপিওভুক্তিতে এসব বাধ্যতামূলক।
উপপরিচালক বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে সেকায়েপ ও সেসিপ প্রকল্পের অধীনে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সম্ভাব্য শর্তাবলি ও আর্থিক সংশ্লেষসহ একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব দেয়ার নির্দেশনা পাওয়ার পর একাধিক বৈঠক করেছেন অধিদপ্তরের এমপিওসংশ্লিষ্টরা। মন্ত্রণালয়ের সুষ্পষ্ট নির্দেশনা না পেলে ছয় হাজার ৬৪৩ শিক্ষকের এমপিওভুক্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।  
 
জানা গেছে, সেকায়েপ এবং সেসিপের আওতায় নিয়োগকৃত অতিরিক্ত শ্রেণিশিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়ে গত ১১ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সেকায়েপ ও সেসিপ প্রকল্পের শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিকরণের সম্ভাব্য শর্তাবলি ও আর্থিক সংশ্লেষসহ একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে গত ২৮ আগস্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে একটি চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রকল্প দুটিতে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সম্ভাব্য শর্তাবলি ও আর্থিক সংশ্লেষসহ একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। 
 
মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর গত ৩০ আগস্ট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি পাঠায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। চিঠিতে জেলা ও উপজেলাভিত্তিক নিয়োগকৃত সেকায়েপের অতিরিক্ত শ্রেণিশিক্ষক এবং সেসিপ প্রকল্পের রিসোর্স টিচারদের তালিকার হার্ড কপি এবং সফট কপি তিন কার্যদিবসের মধ্যে অধিদপ্তরে পাঠানোর জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বলা হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033199787139893