মহান পেশা শিক্ষকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা কেন?

প্রফেসর মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান |

‘শাসন করুন, অপমান নয়’-- কথাটি উত্থাপিত হলো ভিকারুননিসার ছাত্রী অরিত্রীর অনাকাঙ্ক্ষিত আত্মহননের পরিপ্রেক্ষিতে। ঘটনাটি যে অত্যন্ত বেদনাদায়ক, তা নিয়ে কারোর দ্বিমত করার অবকাশ নেই। এর পেছনে যে বিষয়গুলো কাজ করেছে, তাতে মনে হয় যারা এ পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তারা সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তবে এই দুঃখজনক ঘটনার জন্য সমগ্র শিক্ষক সমাজকে দায়ী করাটা নিশ্চয়ই সুবিবেচনাপ্রসূত নয়। কেননা, শিক্ষক কখনোই শিক্ষার্থীর অমঙ্গল কামনা করেন না। আমরা জানি, শিক্ষার্থীর জন্য নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন। এককালে এই শিক্ষক অর্থাৎ গুরুগৃহেই শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠগ্রহণ করত আর গুরু তার সবটুকু ভালোবাসা এবং স্নেহ দিয়ে তাকে প্রকৃত মানুষরূপে গড়ে দিতেন। আদর্শ শিক্ষক কখনোই প্রশ্ন করেন না, কী পেলাম? তাঁর প্রশ্ন আমি কী দিতে পারলাম?

অরিত্রীর ক্ষেত্রে হয়তো এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল যার ফলশ্রুতিতে এ ধরণের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে গেল। কিন্তু এই একটিমাত্র ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে শিক্ষক সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার কথা ভাবলে জাতির জন্য অমঙ্গলই বয়ে আনবে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ  নি:সন্দেহে একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যাকে নিয়ে জাতি গর্ববোধ করে। তাই তো এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে পাঠ গ্রহণ করতে সবাই আগ্রহী। এর জন্য হয় তীব্র প্রতিযোগিতা। এই ঐতিহ্য তো একদিনে গড়ে ওঠেনি। তিলে তিলে গড়ে ওঠা এ সুনামের পেছনে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরই অবদান সর্বাধিক। তাছাড়া অভিভাবকদের সহযোগিতা নিয়েই এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরাও কাজ করে আসছেন।

তবে, অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে যেকোনও অঘটনের পেছনে থাকা কিছু ভ্রান্ত পদক্ষেপ বা কার্যক্রমের প্রকৃত চিত্র। সেদিন ভিকারুননিসার পরীক্ষা পরিচালনা সংশ্লিষ্টদের কিছু যোগ্যতার ঘাটতি ছিল এবং সে সঙ্গে তাদের প্রশাসনিক দক্ষতা ও বিচক্ষণতাও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় এ ক্ষেত্রে মূল্যবোধের অবক্ষয় বা এথিক্যাল ভ্যালুর বিচ্যুতি ঘটার কারণেই কতিপয় অযোগ্য বা অদক্ষ ব্যক্তি শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় ঢুকে অশিক্ষকসুলভ আচরণ করার সুযোগ পেয়েছে। সেজন্য তো সমগ্র শিক্ষক সমাজকে দায়ী করা বা হেয় প্রতিপন্ন করা কোনওভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। কেননা এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।

যেকোনও হঠকারী সিদ্ধান্তই এ ধরণের বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক ঘটনার সৃষ্টি করে। এখানে যেমন একটি অমিত সম্ভাবনাময় জীবনের অকাল পরিসমাপ্তি ঘটল, ক্ষতিগ্রস্থ হলো একটি পরিবার, দেশ হারাল একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। আবার তেমনই এর ফলশ্রুতিতে মহল বিশেষকর্তৃক দেশের মহান পেশায় নিয়োজিত শিক্ষক সমাজের প্রতি একটা বিরূপ মনোভাব গড়ে তোলার অপচেষ্টার সূত্রপাত। তাই, কোন অবস্থাতেই শিক্ষাঙ্গনগুলোতে এ ধরণের অদক্ষ, অযোগ্য ও হঠকারী সিদ্ধান্তের দ্বারা শিক্ষার সুষ্ঠু, সুন্দর পরিবেশ বিনষ্ট করা সমীচীন হবে না এই প্রত্যাশাই করি। 

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদ ও উপদেষ্টা সম্পাদক দৈনিক শিক্ষাডটকম।  


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.005702018737793