মা-বাবা যখন স্বপ্নের হত্যাকারী!

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মা কিংবা বাবা কতই না মিষ্টি শব্দ! সন্তানের জন্মের পর থেকে বাবা-মা অনেক কষ্ট করে লালন-পালন করেন। ধীরে ধীরে সন্তান যখন পরিণত বয়সে উপনীত হয়, তখন তার নিজস্ব চিন্তাশক্তি, ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি হয়। যেমন কারও গান গাইতে ভালো লাগে, কেউবা আবার ছবি আঁকতে ভালোবাসে।

কেউ কবিতা আবৃত্তি করতে ভালোবাসে তো কেউ আবার ছড়া, কবিতা, গল্প লিখতে ভালোবাসে। কারও আবার স্বপ্ন থাকে খেলোয়াড় হওয়ার। কিন্তু আমাদের বাবা-মায়েরা সন্তানের অনেক সময় এসব ইচ্ছার কোনো মূল্যই দিতে চান না। প্রধান লক্ষ্য নির্ধারণে এসবের কোনোটি তো নয়ই; বরং পড়ালেখার পাশাপাশি এসব চর্চায়ও বাধা আসে।  রবিবার (২১ জুলাই) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধনে এ তথ্য জানা যায় । নিবন্ধনটি লিখেছেন মো. আখতার হোসেন আজাদ।

আমাদের সমাজে অভিভাবকেরা মনে করেন, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে একমাত্র পথই আছে এবং সেটি পড়ালেখা আর পড়ালেখা। শিশু মনের যে একটি আত্মা রয়েছে, তাতে যে-কোনো কিছুর চাহিদা থাকতে পারে, তা যেন আমাদের বাবা-মায়েরা ভুলেই যান। সন্তানকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অভিভাবকদের চেষ্টার কোনো কমতি থাকে না।

কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত চেষ্টার ফলে শিশু মনে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে কি না, সেটি দেখার সময় কোথায়! গণিতে ৯৮ পেলে বাকি ২ মার্কস কেন পায়নি, তার জন্য বাবা-মায়ের কাছে যেখানে জবাবদিহি করতে হয়, সেখানে অন্য কিছু ভাববার অবকাশ থাকতেই পারে না। সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পরে কোনো রকমে নাশতা করিয়ে নিজের ওজনের চেয়ে ভারী বই বোঝাই করা ব্যাগ ঘাড়ে চাপিয়ে পাঠানো হয় স্কুলে।

এরপর দুপুরে বাসায় এসে তড়িঘড়ি করে গোসল ও দুপুরের খাবারের পর শুরু হয় কোচিং সেন্টারে পাঠানোর প্রস্তুতি। কোচিং থেকে এসেই সন্ধ্যার পরেই ঘটে প্রাইভেট টিউটরের আগমন। শিশুকাল থেকেই এমন চাপ প্রয়োগের ফলে শিশুমনের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে না। পড়ালেখার অতিরিক্ত চাপে শিশুমনের কোমল হূদয় বাইরের জগতের আলো থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকে। থাকে না সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের কোনো পথও।

এভাবেই হত্যা করা হয় অসংখ্য সম্ভাবনাময় প্রতিভাসমূহকে। কখনো দেখা যায়, ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রস্তুতি শুরুর পরে যদি সন্তান কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ না পায়, তবে অভিভাবকের বাক্যবাণ তো থাকেই। বাবা-মায়ের বকুনি সহ্য করতে না পেরে সন্তানের আত্মহত্যার ঘটনাও আমাদের সমাজে রয়েছে।

একটি প্রবাদ আছে, ‘আত্মার স্বাধীনতা যদি খর্ব করা হয়, পৃথিবীর সকল ধনদৌলত সেখানে তুচ্ছ’। সন্তানের ইচ্ছা-অনিচ্ছার দিকে অভিভাবকদের দৃষ্টিপাত করতে হবে অবশ্যই। পরামর্শ দিতে হবে, ভালো-মন্দ দিক বোঝাতে হবে। কিন্তু সন্তানের ওপর কোনো কিছু জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। স্মরণে রাখতে হবে, আত্মার স্বাধীনতাই পরম প্রশান্তি।

লেখক :শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028378963470459