আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে নগরীর পরিবেশ উৎসবমুখর হয়ে উঠলেও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য তা হয়ে দাঁড়িয়েছে অস্বস্তিকর। কখনও গানের সুরে, আবার কখনও আবৃত্তির ঢঙে একক ও দ্বৈতকণ্ঠে মাইকে চলছে নির্বাচনী প্রচার। বিশেষ করে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনার বারোটা বেজে যাচ্ছে। ৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা। মাস দুয়েক পর এইচএসসি। এ মুহূর্তে মাইকের আওয়াজে কানে তালা লাগার উপক্রম ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থীসহ বাসিন্দাদের।
এক পরীক্ষার্থীর অভিযোগ, মাইকের শব্দে পরীক্ষার প্রস্তুতি মাটি হয়ে যাচ্ছে। পড়াশোনা লাটে উঠছে। রাস্তাঘাটে, অলিগলিতে কান ফাটানো আওয়াজ শুনেই তাদের দিন কাটছে। পাড়ার মোড়ে মোড়ে নির্বাচনী অফিসে সাউন্ডবক্স আর বাইরে রাস্তায় রাস্তায় রিকশা কিংবা সিএনজি অটোরিকশায় চলছে মাইকিং। এলাকার পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা এ নিয়ে আড়ালে-আবডালে উষ্ফ্মা প্রকাশ করলেও সরাসরি প্রতিবাদের সাহস দেখাতে পারছেন না কেউ।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কানের পর্দা ফাটানো নির্বাচনী প্রচারের শব্দ এখন ঢাকা শহরের যে কোনো এলাকাতেই শোনা যাচ্ছে। প্রায় সব প্রার্থীকে নিয়ে গাওয়া গান আর কিছুক্ষণ পরপর তাকে জনগণের সেবা করার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে প্রচারে।
কেন তিনি অন্যদের চেয়ে যোগ্য প্রার্থী, সে নিয়ে চলছে প্রচার প্রতিযোগিতা। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রাত ৮টার পর মিছিল, উচ্চশব্দে অসংখ্য মোটরসাইকেলের হর্ন বাজিয়ে, মাইকে জোরে চিৎকার করে স্লোগান ও গান বাজিয়ে প্রচার চলছে বিভিন্ন পাড়ায়।
অথচ মাইক ব্যবহারে লাগাম পরাতে নির্বাচন কমিশনের বিধি রয়েছে। সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬ বলছে, 'নির্বাচন-পূর্ব, অর্থাৎ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ফল গেজেট আকারে প্রকাশের তারিখ পর্যন্ত কোনো প্রার্থী মিছিল বা শোডাউন করতে পারবেন না।
পুর ২টার আগে এবং রাত ৮টার পর মাইক বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী অন্য যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। একজন প্রার্থী একটি করে মাইক ব্যবহার করতে পারবেন। জনগণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে, এমন কোনো সড়কে পথসভা করতে পারবেন না।' কিন্তু একদিকে সচেতনতার অভাব এবং অন্যদিকে আইন প্রয়োগে অবহেলার কারণে মাইক ব্যবহারকারী প্রার্থীরা পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহূত সাউন্ডবক্স ও মাইকের উচ্চ স্বরে অতিষ্ঠ হয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকেই।
দুই সিটিতে মেয়র পদে লড়ছেন মোট ১৩ প্রার্থী। ঢাকা উত্তরের সর্বমোট ৩৩১ কাউন্সিলর প্রার্থী ও ঢাকা দক্ষিণে সর্বমোট ৪০৯ কাউন্সিলর প্রার্থী। হিসাব করে দেখা গেছে, একেকটি ওয়ার্ডে একসঙ্গে মেয়র পদের পাঁচ প্রার্থী, অন্তত সাতজন কাউন্সিলর প্রার্থী ও চারজন নারী কাউন্সিল প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা মাইক নিয়ে প্রচারে নামতেই পারেন। এতে একটি ওয়ার্ডে একযোগে ১৬টি মাইক চলতে থাকলে বিধি লঙ্ঘন হবে না ঠিকই, কিন্তু নগরবাসীর অবস্থা কী হতে পারে!
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক এম এ মতিন বলেন, সারাবিশ্বে নির্বাচনী প্রচারে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার যেভাবে হচ্ছে, এদেশে হচ্ছে ঠিক তার উল্টোটা। এখন আদি যুগের মতো মাইকে প্রচার না চালিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচার চালানো যায়। এটা বরং প্রার্থীর জন্য অনেক বেশি ভালো হবে।