কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে বসবাসরত প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা শিশুকে মানসম্মত শিক্ষা দেয়া কথা ভাবছে সরকার। এ তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য মিয়ানমারের ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম (কারিকুলাম) তৈরি করবে ইউনিসেফ।
এ বছর জাতিসংঘের জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের (জেআরপি) অধীনে এই শিক্ষাদানের পাইলট প্রকল্প শুরু হবে। প্রথমে ১০ হাজার শিশুকে এর আওতায় আনা হবে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষা কারিকুলাম তৈরির জন্য ইউনিসেফকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তারা এ বছরই তাদের পাইলট প্রকল্প শুরু করবে। এর অধীনে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গ্রেড ৬ থেকে ৯-এর শিশুদের শিক্ষা দেয়া হবে।
এই প্রকল্পের অধীনে শিশুদের শুধু শিক্ষাই দেয়া হবে না, একটি নির্দিষ্ট বয়সের রোহিঙ্গাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণও দেয়া হবে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের ভাষায় শিক্ষা দেয়া হবে, যাতে করে তারা নিজের দেশে ফেরত গেলে উপকার পায়।
২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের আগস্টে মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের যে ঢল নেমেছিল তা থেকে বাদ যায়নি এ শিশুরাও। ফলে গত আড়াই বছর ধরে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় এ শিশুরা। রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ায় বাংলাদেশকে স্বাগত জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলোতে বসবাসরত প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা শিশুকে মানসম্মত শিক্ষার অধিকার উপভোগের সুযোগ করে দিতে প্রচারণা চালিয়ে আসছিল। অন্যথায় রোহিঙ্গারা ‘একটি হারানো প্রজন্মের’ মুখোমুখি হবে বলেও সতর্ক বার্তা উচ্চারণ করেছিল মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাউথ এশিয়া ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি বলেন, এটি বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যন্ত ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি, যা শিশুদের স্কুলে পড়াশোনার সুযোগ এবং তাদের ভবিষ্যৎ স্বপ্নের পেছনে দৌড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে। তারা ইতোমধ্যেই দুইটি শিক্ষাবর্ষ হারিয়েছে। শ্রেণিকক্ষের বাইরে তারা আর কোনও সময় নষ্ট করতে পারে না।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় সম্প্রদায়সহ কক্সবাজার অঞ্চলের সব শিশুদের মধ্যে উপযুক্ত, অনুমোদিত ও মানসম্পন্ন শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ৩ বছর থেকে ১৪ পর্যন্ত বয়সী শিশুদের শিক্ষা এবং ১৫ বা তার বেশি বয়সী বাচ্চাদের দক্ষতা বৃদ্ধি (স্কিল ডেভেলপমেন্ট) প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে কক্সবাজারে ৩ হাজার ২০০ লার্নিং সেন্টারে ৩ লাখ ১৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর জন্য অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে।