মাদরাসা জরিপের নামে অর্ধকোটি টাকার বাণিজ্য : ৫ মোড়লের কাছে জিম্মি শিক্ষকরা

লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধি |

ভোলার লালমোহনে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জরিপের নামে বেতন ভাতাবিহীন অসহায় শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ মাদরাসা কমিটির স্ব ঘোষিত নেতাদের বিরুদ্ধে। জরিপে ভালো ফল দেখালে অতি দ্রুত এসব মাদরাসা সরকারিকরণ হয়ে যাবে বলে জরিপকালীন অফিস খরচ ও অন্যান্য খাত দেখিয়ে অসহায় শিক্ষকদের কাছ থেকে এসব টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। কোনো শিক্ষক বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে জরিপ থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেয় তারা।

অভিযুক্ত এ পাঁচ নেতা হলেন নূরুল ইসলাম মৌলভী, শাহে আলম মাওলানা, আবদুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা সাদেক ও ইউসুফ শরীফ।

অনুসন্ধানে গেছে, এ উপজেলায় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার সংখ্যা ২৩৮টি। সম্প্রতি স্বতন্ত্র মাদরাসার প্রতিষ্ঠানসহ সকল কার্যক্রম পরিদর্শনপূর্বক তথ্য চেয়েছে সরকার। আর তাকে পুঁজি করে বিভিন্ন দপ্তর ম্যানেজের কথা বলে মাদরাসা প্রতি মোটা অঙ্ক ধার্য করে স্ব ঘোষিত কমিটির এ পাঁচ মোড়ল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মাদরাসা প্রধান জানান, জরিপে ভালো ফলাফল দেখাতে অফিস ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রতি মাদরাসা থেকে দশ হাজার থেকে ত্রিশ হাজার টাকা পর্যন্ত ধার্য করেছে ওই মোড়লরা। এরমধ্যে যে সকল মাদরাসার শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে সেসব মাদরাসার জন্য ১৫ হাজার ও যেসব মাদরাসার কোনো শিক্ষার্থী সমাপনীতে অংশগ্রহণ করেনি সেসব মাদরাসার জন্য ৩০ হাজার টাকা ধার্য করা হয়েছে।

এদিকে, নিজ প্রতিষ্ঠানের নাম জরিপের আওতায় আনতে মুখ বুঝেই মোড়লদের হাতে এসব অর্থ তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকরা।

উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় নিজস্ব লোকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করছেন এই ৫ মোড়ল। আর উত্তোলনকৃত এসব টাকা জমা হচ্ছে নূরুল ইসলাম মৌলভীর কাছে।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, উপজেলার প্রায় সব স্বতন্ত্র মাদরাসার কাগজপত্র নিজের কাছে রেখে ওই সকল মাদরাসার নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক/শিক্ষিকা থাকার পরও নতুন নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে নুরুল ইসলাম মৌলভীর বিরুদ্ধে। এসব নিয়োগ পত্রে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ দিচ্ছেন তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নূরুল ইসলাম মৌলভী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘আমি কোনো টাকা নিচ্ছি না। এ দায়িত্বে আমি ছাড়াও শাহ আলম মাওলানা, আবদুর রহমান চৌধুরী, সাদেক মাওলানা, ইউসুফ শরীফও আছে।’

জানতে চাইলে মাওলানা শাহআলম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘আমরা মাদরাসা প্রতি ১০ হাজার টাকা ধার্য করেছি। তবে এ টাকা কোন খাতে ব্যয় হবে জানতে চাইলে তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আইয়ুব আলী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ‘কেউ টাকা নিচ্ছে কি না আমার জানা নেই ‘

উপজেলার মাদরাসা জরিপ কমিটির সদস্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘আমাদের যেটুকু দায়িত্ব আমরা তা পালন করেছি। বিনিময়ে আমরা কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নেইনি। যদি কেউ অফিস খরচের কথা বলে টাকা নিয়ে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055952072143555