মাদরাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি |

আখাউড়ায় গতকাল দুপুরে একটি মহিলা মাদরাসার শিক্ষকের যৌন হয়রানির শিকার এক ছাত্রীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। আখাউড়া পৌরশহরের দুর্গাপুর এলাকার আন নূর মহিলা মাদরাসা ও এতিমখানায় এ ঘটনা ঘটে। উদ্ধার হওয়া শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে ওই মাদরাসার শিক্ষক শওকত হোসেন রিপন ও মাদরাসার পরিচালক আসমা বেগম পলাতক রয়েছে। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মাদরাসায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দুর্গাপুর গ্রামের প্রবাসী আবুল হোসাইন সম্রাট আন-নূর মহিলা মাদরাসা ও এতিমখানা চালু করে। তার স্ত্রী আসমা আক্তার মাদরাসাটি পরিচালনা করেন। শিশু শ্রেণি থেকে ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চলে ওই মাদরাসায়। ১১ জন শিক্ষকের মধ্যে একজন পুরুষ শিক্ষক। আবাসিক ও অনাবাসিক মাদরাসাটিতে শতাধিক ছাত্রীর মধ্যে প্রায় ৬০ জন আবাসিক। গতকাল সোমবার সকালে হঠাৎ করে ৩-৪ জন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে স্থানীয় লোকজন শিক্ষকের অপকর্মের কথা জানতে পেরে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ৬ষ্ঠ শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে।

সোমবার দুপুরে সরজমিনে মাদরাসায় গেলে একাধিক গ্রামবাসী বলেন, ৩-৪ মাস ধরে মাদরাসার হুজুরের এসব অপকর্মের কথা এলাকায় প্রচারও হলেও মাদরাসা পরিচালনা কমিটি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গ্রামবাসী জুনাঈদ বলেন, আমার ভাতিজি মাদরাসায় পড়ে। সে বলেছে হুজুর প্রায়ই ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করত।

এ ব্যাপারে মাদরাসার কয়েকজন ছাত্রী জানায়, হুজুর প্রায় সময় ছাত্রীদের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতেন। অনেক সময় ছাত্রীকে মাদরাসার বাইরে নিয়ে যেত। বড় ম্যাডামকে (আসমা বেগম) কে এসব কথা জানানো হলে তিনি শরম শরম বলে চুপ থাকতে বলতেন। এ ধরনের অন্তত ১০ জন ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে বলে তারা জানায়।

মাদরাসা থেকে নিজের মেয়েকে নিতে এসে অভিভাবক স্কুলশিক্ষক গিয়াস উদ্দিন বলেন, লম্পট শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ভবিষ্যতে যেন কোনো শিক্ষক এ ধরনের কাজ করার সাহস না পায়।

সংশ্লিষ্ট এলাকার পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. তাজুল ইসলাম বলেন, মাদরাসার হুজুর রিপন একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি মাদরাসা কমিটিকেও জানিয়েছি।

আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. সানজিদা আক্তার বলেন, প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মেয়েটিকে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মেয়েটির সারা শরীরে ব্যথা করছে বলে জানিয়েছে। 
এ ব্যাপারে আখাউড়া থানার ওসি (তদন্ত) মো. আরিফুল আমিন বলেন, কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জেনেছি ওই হুজুর ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করতেন। ছাত্রীদের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতেন। যৌন নিপীড়নের শিকার অসুস্থ ছাত্রীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ওই ছাত্রীর মা জেসমিন আক্তার শিক্ষক শওকত হোসেন রিপন ও মাদরাসার পরিচালক আসমা বেগমকে আসামি করে থানায় মামলা দিয়েছেন। আসামি গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028979778289795