মাদরাসা সুপারের অবহেলায় পরীক্ষা দেয়া হলো না লিসার

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি |

আর দশজন শিক্ষার্থীর মত চলমান ইবদেতায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় বসার কথা ছিল মেধাবী বাকপ্রতিবন্ধী ছাত্রী লিসা আক্তারের। কিন্তু প্রবেশপত্রে মাদরাসা সুপারের প্রতারণা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের অবহেলায় রোববার (১৭ নভেম্বর) সকালে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষায় বসা হয়নি তার। 

চোখের পানি নিয়ে বাবার সঙ্গে বাড়ি ফিরেছে ওই পরীক্ষার্থী। লিসা আক্তার ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নাগেশ্বরবাড়ী গ্রামের ওয়ালিউর রহমানের মেয়ে। চলমান ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় নাগেশ্বরবাড়ী মিয়ারদ্দীন দাখিল মাদরাসা থেকে বানাগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা ছিল তার। মাদরাসা সুপার এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসের কারণে প্রবেশপত্রে নাম, পিতার নাম ও মাতার নাম ভুল হলেও তা সংশোধন করে পরীক্ষায় বসার সুযোগ প্রদান করা হয়নি তাকে।

প্রবেশপত্রে লিসা আক্তারের নামের পরিবর্তে মৌরি আক্তার, তার পিতার নাম মো. ওয়ালিউর রহমানের পরিবর্তে মো. মমিরুল ইসলাম এবং মাতার নাম মোছা. লিপি আক্তারের পরিবর্তে মহসিনা বেগম দিয়ে প্রবেশপত্র ইস্যু করা হয়েছে। যেখানে নাগেশ্বরবাড়ী মিয়ারদ্দীন দাখিল মাদরাসা সুপার আবু তালেব, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন মণ্ডলের স্বাক্ষরের সঙ্গে মৌরি আক্তারের স্বাক্ষর রয়েছে। তবে কে এই মৌরি আক্তার, এটা জানে না মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এমনকি উপজেলা শিক্ষা অফিসও পরিচয় দিতে ব্যর্থ।

তবে বিষয়টি আগে থেকেই জানতো মাদরাসা সুপারসহ ওই মাদরাসার সকল কর্মচারী। এমন অভিযোগ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর বাবা ওয়ালিউর রহমানের। তিনি বলেন, বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রবেশপত্রে লিসার ছবি ব্যবহার করে অন্য শিক্ষার্থীর পরিবর্তে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আমার মেয়ের হাতে প্রবেশপত্র হাতিয়ে ধরিয়ে দেন মাদরাসা পিয়ন এবার উদ্দীন। গত শনিবার ২০ টাকাও নিয়েছে প্রবেশপত্র প্রদানের জন্য। এর আগেও পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য ১০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে। প্রবেশপত্রে নিজের নামের স্থলে মৌরি আক্তারের নাম দেখে বাড়িতে ইশারায় বাবা ও মাকে বোঝানোর চেষ্টা করে লিসা আক্তার।  

শনিবার বিকালে পিয়ন এবার উদ্দীনকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি পরীক্ষায় অংশ নিতে বলেন। নিজের মেয়ে বাকপ্রতিবন্ধীর সুযোগ নিয়ে একটি বছর নষ্ট করার জন্য মাদরাসা  সুপারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন লিসার বাব ও তার স্বজনেরা। 

মাদরাসার পিয়ন এবার উদ্দীনের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও মোবাইল বন্ধের কারণে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 

নাগেশ্বরবাড়ী মিয়ারদ্দীন দাখিল মাদরাসা সুপার আবু তালেব মুঠোফোনে জানান, আমার মাদরাসায় ৪র্থ শ্রেণি পরীক্ষা পাশের পর পাশের একটি প্রতিবন্ধী স্কুলে লিসাকে ভর্তি করায় অভিভাবক। পরবর্তীতে ডিআর ফরম পূরণ করার পর পুনরায় তার অভিভাবক মাদরাসায় নিয়ে আসে লিসাকে পড়ানোর জন্য। চলতি সমাপনী পরীক্ষায় তার নামে প্রবেশপত্র ইস্যুর জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করেছি উপজেলা শিক্ষা অফিসের সাথে। কিন্তু অফিস বলছে সংশোধন করার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া সমস্ত বিষয়ে ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবককে জানানো হয়েছে। রোববার সকালে ইউএনও স্যারের অফিসে বিয়ষটি জানানো হলে তিনি ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পরীক্ষায় বসা বন্ধ করে দিতে বলেন। 

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন মণ্ডল জানান, পরীক্ষায় ডিআর ফরম অনুসারে প্রবেশপত্র ইস্যু করা হয়। ছবির সঙ্গে নামের মিল আছে কিনা তা যাচাই করে সুপার স্বাক্ষর করার পর আমি প্রবেশপত্রে স্বাক্ষর করি। এত শিক্ষার্থীর ছবি চিহ্নিত করার সুযোগ নেই। তাছাড়া মাদরাসা সুপার সময় মতো বিষয়টি অফিসে জানাতে ব্যর্থতার কারণেই এমনটা হয়েছে। আমাদের এখানে সংশোধনের আর কোন সুযোগ ছিল না। 

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, জেএসসি পরীক্ষায় বড় ধরণের ভুলক্রটি সমাধান করে নেওয়া সম্ভব বোর্ড থেকে। প্রাথমিকের বেলায়ও সম্ভব। উপজেলা শিক্ষা অফিস এবং মাদরাসা কর্তৃপক্ষ একটু আন্তরিকতার সহিত বিষয়টি দেখলেই সম্ভব ছিল। প্রতিবন্ধী বাচ্চাটার পরিণতি দেখে আমিও খুব কষ্ট পেয়েছি। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরীক্ষার দু’দিন আগেও কালমেঘ মাদরাসার ১০ জন শিক্ষার্থীকে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা অফিস কর্তৃপক্ষ। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার খায়রুল আলম সুমনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আসলাম জুয়েল বলেন, মেয়েটির পরিবারের লোকজন ঘটনার কথা আমাকে জানিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036821365356445