মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

বগুড়া প্রতিনিধি |

বগুড়ার সরকারি মুস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদ্রাসার আরবি ও ইসলাম শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক হযরত আলী নানা অভিযোগে অভিযুক্ত । সব সময় দাপটের সঙ্গে চলেন। ইচ্ছামতো মাদ্রাসায় আসেন আর ইচ্ছামতোই চলে যান। ছুটি ছাড়াই তিনি দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকেন প্রতিষ্ঠানে। এ কারণে চলতি বছরের শুরুতে তার বিরুদ্ধে শোকজ করে বেতন ভাতা বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। দুইমাস পরে ক্ষমা প্রার্থনা করলে বেতন ভাতা চালু হয়। এরপরেও থেমে নেই হযরত আলী।

আবারো ইচ্ছামতো প্রতিষ্ঠানে আসেন ও চলে যান। ছুটি ছাড়াই আগের মতো প্রতিষ্ঠানে আসেন না। ফলে আবারো তার বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১৮ই জুলাই সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক শাইখ নজরুল ইসলাম এবং ২রা আগস্ট ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান বিনা ছুটিতে ক্লাস ও প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকার জন্য আলাদা দু’টি কারণ দর্শানো নোটিশ ইস্যু করেছেন হযরত আলীর বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও ফাযিল ভর্তি সংক্রান্ত কার্যক্রমে দায়িত্বে অবহেলার জন্য ১০ই অক্টোবর আবারো তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, হযরত আলী মৌখিক পরীক্ষায় নম্বর বেশি দেয়ার কথা বলে ২০১৯ সালের কামিল পরীক্ষার্থীদের থেকে ২শ’ টাকা করে অবৈধভাবে উত্তোলন করে অধ্যক্ষের অনুমতি ছাড়াই। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ কিছুই জানেন না। এ ছাড়াও তৌহিদুল ইসলাম নামের অপর এক হিসাবরক্ষকের সঙ্গে যোগসাজশে হযরত আলী বিভিন্নভাবে মাদ্রাসার অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এমন অভিযোগে ইতিমধ্যেই তৌহিদুল ইসলামকে শাস্তিস্বরূপ এই মাদ্রাসা থেকে বদলি করা হয়েছে।

এ ছাড়াও হযরত আলী সম্পর্কে তারা আরো বলেন, ক্লাস পরীক্ষা কোনো কিছুতে পাত্তা দেন না তিনি। সহকর্মীদের বিরুদ্ধে লেগে থাকেন সবসময়। সহকারী অধ্যাপক মো. আব্দুল জলিলের নামে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ সংবলিত আবেদন নিজ হাতে কম্পোজ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে দাখিল করেন। যদিও কোনো সহকর্মীর বিরুদ্ধে কোনো কর্তৃপক্ষের নিকট মিথ্যা কিংবা তুচ্ছ অভিযোগ করা অসদাচারণ ও সার্ভিস বিধি পরিপন্থি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে প্রফেসর শায়খ নজরুল ইসলাম যোগদানের পর তার নানা অনিয়ম ও প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিতির বিষয়ে তাকে একাধিকবার শোকজ করেন।

এদিকে চলতি অক্টোবরের ৭ তারিখে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, হযরত আলী ছাত্রদের পরীক্ষার রুমে নকলে সহায়তা করেন। ২০১৯ সালের আলিম পরীক্ষায় কিছু শিক্ষক নকলের বিরুদ্ধে ছাত্রদের সাবধান করলে হযরত আলী ছাত্রদের উস্কে দেয় এবং পরীক্ষার আগের দিন ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে অধ্যক্ষের অফিস ঘেরাও করেন। ছাত্রদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন হযরত আলী। এরপরে পরীক্ষা নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় হযরত আলী সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রদের উস্কে দিচ্ছেন এবং নকল বিরোধী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ডিসি অফিসসহ বিভিন্ন অফিসে মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করেছেন। তাতেই ক্ষান্ত নন হযরত আলী বিভিন্ন পত্রিকা অফিসে ছাত্রদের দিয়ে অভিযোগ করাচ্ছেন। মাদ্রাসার নানান উন্নয়নমূলক কাজকে দুর্নীতি বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। মাদ্রাসার প্রশাসন ও কয়েকজন শিক্ষক তার ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন বারবার। মাদ্রাসার লেখাপড়ার পরিবেশ দারুণভাবে বিনষ্ট করছেন তিনি।

এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই উল্লেখ করে প্রভাষক হযরত আলী বলেন, বিষয়গুলো তদন্তের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তিনি মনে করেন, সুষ্ঠু তদন্ত হলে আসল ঘটনা বের হয়ে আসবে। তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট। তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নোটিশ দেয়ার পর অধ্যক্ষ তার কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন।

এদিকে সরকারি মুস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান বলেন, ক্লাস ও প্রতিষ্ঠানে ছুটি ছাড়া অনুপস্থিত থাকার কারণে তাকে একাধিকবার কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নোটিশ দিলেই হযরত আলী তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে আর এ রকম হবে না মর্মে ওয়াদা দেন। কিন্তু সেই ওয়াদা শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারেন না।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028061866760254