বর্তমানে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারের পাশাপাশি কবি-সাহিত্যিক হওয়ার সুযোগ আছে বলে দাবি করেছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।
জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের আগে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কোরবানিতে গুরু জবাই করা ছাড়া অন্য ‘কোনো কাজ ছিল না’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে শুক্রবার সংগঠনটির সদস্যদের সন্তান যারা গত প্রাথমিক সমাপনী ও জেএসসিতে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন তাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শিল্পমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “শিক্ষানীতি যখন প্রণয়ন করা হয় তখন এক শ্রেণির মাদ্রাসা শিক্ষকরা আন্দোলন করেছিল- এই শিক্ষানীতি প্রবর্তন হলে মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধ হয়ে যাবে।
“কিন্তু আমরা লক্ষ করছি- মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধ হয়নি, বরং আগে মাদ্রাসাগুলোতে একটি ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল, যে শিক্ষার মাধ্যমে শুধু তারা সিপারা পড়ানো ও কোরবানিতে গরু জবাই দেওয়া ছাড়া তাদের কোনো কাজ ছিল না।”
আমুর ভাষ্য, “আজকে যারা মাদ্রাসায় পড়ে তারা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কবি, সাহিত্যিক সব কিছু হওয়ার সুযোগ আছে, ওটার (সিপাড়া পড়া) পাশাপাশি, ওটাও বন্ধ হয়নি।”
শিল্পমন্ত্রী বলেন, এই দেশে প্রকৃত অর্থে ৪০-৪১ বছরে কোনো শিক্ষানীতি ছিল না। দেশ স্বাধীন হওয়ার সাথে সাথে ড. কুদরত-ই-খোদার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা কমিশন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু মারা যাওয়ার পর সেই শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট আর আলোর মুখ দেখেনি।
“পরে শেখ হাসিনা প্রথম যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন।যাতে ছেলে-মেয়েরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে পারে সেই ধারায় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।”
আমু বলেন, শুধু শিক্ষানীতি প্রবর্তন নয়, এদেশে কোনো শিশু যাতে পয়সার অভাবে, আর্থিক অনটনের কারণে লেখাপড়া থেকে ঝরে না পড়ে সেজন্য প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে নানা রকম উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।
জাতীয় সংস্কৃতিকে ধারণ করে সেগুলোকে রক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষর্থীদের উদ্দেশে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “আমাদের নিজস্ব কৃষ্টি অনেক ভালো, সেগুলোর লালন করে প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
“আমরা ২০১০ সালে যখন ক্ষমতায় আসি তখন শিক্ষিতের হার ছিল ৪৭ শতাংশ, সেটাকে এখন ৭৭ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব হয়েছে। এটাকে ১০০ পারসেন্ট করার মধ্য দিয়ে এ দেশেকে একটি শিক্ষিত জাতি হিসেবে পরিগণিত করতে চাই।”
বাংলাদেশের অনেকে বিশ্বে সুনাম অর্জন করেছেন জানিয়ে আমু আশা করেন আগামীতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
শিক্ষাখাতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি উত্তরা ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য ড. ইয়াসমিন আরা লেখা ডিআরইউ সদস্যদের সন্তানদের জন্য উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনায় বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দেন।
সংবর্ধনা পেল ৬৫ শিক্ষার্থী
গত প্রাথমিক সমাপনী উত্তীর্ণ ৩৪ জন, জেএসসি উত্তীর্ণ ৩০ জন এবং একজন হাফেজকে ক্রেস্ট, সনদ এবং নগদ দুই হাজার টাকা করে তুলে দেন শিল্পমন্ত্রী। এরা সবাই ডিআরইউর সদস্যদের সন্তান।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ২০১৩ সাল থেকে সংগঠনটির সদস্যদের পাবলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সন্তানদের সংবর্ধনা দিয়ে আসছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাবেক সভাপতি শাবান মাহমুদ, ঢাকা টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন এবং ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক শুক্কুর আলী শুভ।