মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকদের ব্যাপক বেতন বৈষম্য

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক বেতন বৈষম্য রয়েছে। সরকারি, এমপিওভুক্ত এবং ননএমপিও—এই তিন ধরনের শিক্ষকদের বেতন কাঠামো বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে এমন তথ্যই তুলে ধরা হয়েছে। ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক স্তরের এক পঞ্চমাংশ শিক্ষক সবচেয়ে বেশি আয় করেন। যে এক পঞ্চমাংশ শিক্ষক বেশি আয় করেন তাদের গড় আয় সবচেয়ে কম আয় করেন এমন এক পঞ্চমাংশ শিক্ষকের গড় আয়ের সাড়ে তিনগুণ। সরকারি বিদ্যালয়ের আয় সবচেয়ে বেশি। তাদের আয় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আয়ের প্রায় দ্বিগুণ। আর এমপিওভুক্ত নন এমন শিক্ষকদের আয়ের প্রায় সাড়ে ৩ গুণ।

রোববার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর এলজিইডি মিলনায়তনে প্রকাশিত শিক্ষা বিষয়ক এনজিও ব্যবসায়ী গণসাক্ষরতা অভিযানের ‘এডুকেশন ওয়াচ রিপোর্ট ২০১৮-১৯’-এ এসব তথ্য উঠে আসে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকের গড় আয় ৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। আর এমপিওভুক্ত শিক্ষকের বার্ষিক আয় ২ লাখ ৮৬ হাজার। এছাড়া এমপিওবিহীন শিক্ষকের আয় ১ লাখ ৪১ হাজার টাকা। দেশের বিভিন্ন স্থানের শিক্ষকদের বক্তব্য নিয়ে এই গবেষণা করা হয় বলে জানানো হয়েছে।

জরিপের ৫ শতাংশ শিক্ষক জানিয়েছেন, তারা সব সময়ই অভাবে ছিলেন। ২০ শতাংশের বেশি শিক্ষকেরা জানিয়েছেন তারা মাঝে মাঝে অভাবে ছিলেন। প্রায় ৩৫ শতাংশ খেয়ে পড়ে সমান ছিলেন। তার ৪০ শতাংশ শিক্ষক জানিয়েছেন বছরের সব খরচ মিটিয়ে তাদের কিছু টাকা উদ্বৃত্ত ছিল।

আরও পড়ুন: মাধ্যমিকের ৩৭ শতাংশ শিক্ষক নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের ওপর নির্ভরশীল

জরিপের দুই তৃতীয়াংশ শিক্ষকের দ্বিতীয় একটি পেশাও রয়েছে। শিক্ষকদের এক পঞ্চমাংশের দ্বিতীয় পেশা হিসেবে গৃহব্যবস্থাপনা রয়েছে। নারীদের ক্ষেত্রে এই হার ৮৬ শতাংশ। শিক্ষকদের ২৩ শতাংশের দ্বিতীয় পেশা কৃষি কাজ। ১১ শতাংশের গৃহশিক্ষকতা। ব্যবসা ৪ শতাংশের। সরকারি স্কুলের ৫৭ শতাংশের বেশি এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এক তৃতীয়াংশ শিক্ষকের একমাত্র পেশা শিক্ষকতা।

তথ্য অনুযায়ী, শ্রেণিকক্ষে ক্লাসের চাপ সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের চেয়ে বেসরকারি স্কুলে বেশি। বর্তমান রুটিন অনুযায়ী সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের সপ্তাহে ২১টি ক্লাস নিতে হয়। এ সংখ্যা বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে প্রায় ২৩টি। আর দাখিল মাদ্রাসার ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ২৬টি। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ৬০ শতাংশ শিক্ষক সপ্তাহে ১৯ থেকে ২৭টি পিরিয়ড পরিচালনা করেন। সপ্তাহের এতগুলো পিরিয়ড পরিচালনাকে শিক্ষকরা অতিরিক্ত কাজের চাপ হিসেবে দেখছেন। তাই তারা কাজের চাপ কমানোর প্রস্তাব করেছেন।

আরও পড়ুন: ৪২ শতাংশই অন্য চাকরি না পেয়ে শিক্ষকতায় এসেছেন

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানভেদে শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, অবকাঠামো ও অন্যান্য সুবিধাসংক্রান্ত যেসব পার্থক্য রয়েছে সেগুলো দূর করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের ধরনভেদে শিক্ষকদের একই পদ্ধতিতে নিয়োগদান এবং চাকরি ও অবসরকালীন আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধার ক্ষেত্রে সমতা বিধান করতে হবে। বলা হয়, প্রচলিত শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতি সময়ের সঙ্গে শুধু অসমতা বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে এর একটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা এখন সময়ের দাবি। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দাখিল মাদরাসার প্রতি বিশেষ নজর দেয়া উচিত বলে মনে করা হয়।

গত প্রায় ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষার উন্নয়নের কথা বলে বিদেশ থেকে হাজার কোটি টাকা এনেছে গণসাক্ষরতা অভিযানভুক্ত শিক্ষা বিষয়ক এনজিওগুলো। সময় সময় তারা বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু ঠিক কতজনকে সাক্ষরতা শিখিয়েছে বা শিক্ষার কী কী উন্নয়ন করেছে তার কোনও পরিসংখ্যন জাতির সামনে অদ্যাবধি তুলে ধরেনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা - dainik shiksha রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ - dainik shiksha ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ - dainik shiksha উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ - dainik shiksha আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0047650337219238