মানুষ হওয়ার সহজ পদ্ধতি বই পড়া: মুহম্মদ জাফর ইকবাল

নিজস্ব প্রতিবেদক |

মানুষ হওয়ার সহজ পদ্ধতি বই পড়া বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। শুক্রবার  (১ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে শীতকালীন মৌসুমি পথনাট্য প্রদর্শনীর উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। 

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, পরিষদের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান ও কার্যনির্বাহী সদস্য ড. রতন সিদ্দিকী, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, নাট্যজন তপন দাস ও নাট্যজন আহম্মেদ ইকবাল হায়দার প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি নাট্যজন মান্নান হীরা।

পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ গিয়াসের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উদ্বোধনী পর্ব। উদ্বোধনের সময় মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, পথনাটক বিষয়টি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন। যারা পথনাটক করে আসছে টানা ২৮ বছর এটা একটি বিশাল ব্যাপার। যে আয়োজন ২৮ বছর ধরে চলে আসছে এটা নিশ্চয়ই অনেক গুরুত্বপূর্ণ কেননা দর্শক এটা গ্রহণ করছে বলেই টিকে আছে। এটা অনেক বেশি দায়িত্ব পালন করেছে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আমি দেশে না থাকলেও পত্র পত্রিকায় পড়েছি পথনাটক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অনেকের ধারণা তখন প্রতিপক্ষ ছিল বলেই পথনাটক হতো, এখন প্রতিপক্ষ নেই, তাই পথনাটকের প্রয়োজন নেই। পথনাটক কখনও শেষ হবে না, হতে পারে না। একটি প্রতিপক্ষ না থাকলেও অন্য প্রতিপক্ষ থাকবে। এই মুহূর্তে প্রতিপক্ষ কে হতে পারে আমরা সবাই জানি।

গত দিন ছিল ৩১ অক্টোবর। এ দিন ছিল আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ একজন প্রকাশক দীপনের মৃত্যু দিবস। তার স্মরণে একটি অনুষ্ঠান হয় সেখানে আমি ছিলাম। যে বই প্রকাশ করাকে তার জীবনের উদ্দেশ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিল তাকে নির্মমভাবে মরতে হলো। যে ছেলেটি আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম সে কেন আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল? সে বলল আমি নাকি ইসলামের বিরোধী। আমি তাকে বলেছিলাম অনেক বই লিখেছি কিন্তু ইসলাম তো দূরে থাক কোন ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু বলি নাই। তোমার কেন ধারণা হলো যে আমি ইসলামের বিরোধী। সে বলল আপনি একটা বই লিখেছেন তার নাম ‘ভূতের বাচ্চা সোলায়মান’।

তাকে বলেছিলাম বইটা পড়েছ? সে বলল পড়ি নাই। এই হচ্ছে একজন জঙ্গীর চিন্তাধারা। তাহলে এবার বুঝুন পথনাটকের প্রতিপক্ষ এখন কি হতে পারে। আপনারা যদি পারেন মানুষকে মানুষের কাছে নিয়ে আসেন। মানুষ হওয়ার সহজ একটা পদ্ধতি আছে সেটা হচ্ছে বই পড়া। আমাদের মানুষ হতে হবে। আমরা যদি শুধুমাত্র স্পার্টফোনের দিকে তাকিয়ে একটা লাইন লেখা ও একটা লাইন পড়ার ভেতর নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখি তাহলে আমরা সত্যিকারের মানুষ হতে পারব না। আমাদের নতুন প্রজন্মকে বই পড়া শেখাতে হবেই হবে। যদি না শেখাতে পারি তাহলে কি হবে আমি জানি না। কাজেই আপনারা এদিকে লক্ষ্য রেখে পথ নাটক করেন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অসাম্প্রদায়িক, দুর্নীতিমুক্ত গণতান্ত্রিক যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই বাংলাদেশ গড়তে চাই। সেই লক্ষ্যে আমরা আমাদের সমস্ত সাংস্কৃতিক কার্যক্রমকে নিবেদন করতে চাই। মানুষকে জাগিয়ে তোলার জন্য সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের আদর্শে সবাই অনুপ্রাণিত হবে সেদিকে ধাবিত হতে চাই। আমাদের সংস্কৃতির একটি জাগরণ দরকার।

নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন, পথনাটকের গুরুত্ব আমরা বহু বছর আগে উপলব্ধি করেছিলাম। সেই সৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন। এছাড়া বিভিন্ন আন্দোলনের একটা প্লাটফর্ম হিসেবে এই পথনাটককে আমরা বাঁচিয়ে রেখেছি। এটা দিন দিন তার কলেবর বৃদ্ধি করছে।

বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের প্রথম আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তপন দাস বলেন, অনেকে মনে করছেন পথনাটক আর করার প্রয়োজন নাই, এটা ঠিক নয়। আশির দশক থেকে শুরু হয় সেন্সর বিরোধী পথনাটক। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এটা হয়েছে প্রতিবাদ স্বরূপ। আমি বলতে চাই পথনাটকের প্রয়োজন সব সময়ই আছে। পথনাটক পরিষদের কার্যনির্বাহী সদস্য ড. রতম সিদ্দিকী বলেন, উৎসবের আঙ্গিকে আমরা ১৯৯২ থেকে শুরু করেছি। প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পথনাটক প্রদর্শন হয়েছে। এই পথনাটক চূড়ান্ত রূপ পেয়েছিল ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ যখন সৈরাচার এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতায়। তার পর থেকে পথনাটককে উৎসবের পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় পথনাটককে ছড়িয়ে দিতে চাই। তারই ধারাবাহিকতায় আজ এখানে উদ্বোধন হচ্ছে। এর পরবর্তী শুক্রবারে এ নাট্য প্রদর্শনী হবে দনিয়ার মাসুদ মঞ্চে, তারপর ১৫ নবেম্বর গাজীপুর, ২২ নবেম্বর মিরপুরে, ২৯ নবেম্বর শিল্পকলার মাঠে, ৬ ডিসেম্বর মিরপুরে, ২০ ডিসেম্বর এখানেই হওয়ার কথা রয়েছে, ২৭ ডিসেম্বর টঙ্গীতে। আগামী বছর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বছরের শুরু থেকে বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে পথনাটক পরিষদ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর দেশের চারটি নাট্যদল পথনাটক পরিবেশন করে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051090717315674