মালিকানা দ্বন্দ্বে ধ্বংসের মুখে কার্ডিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল

নিজস্ব প্রতিবেদক |

মালিকানা দ্বন্দ্বে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে স্বনামধন্য ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল কার্ডিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। ২০১৫ সালের শুরুতেও এই স্কুলের চারটি ক্যাম্পাসে এক হাজারের ওপরে শিক্ষার্থী থাকলেও দুই বছরের ব্যবধানে শিক্ষার্থী সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪০০-তে।

এমনকি স্কুলের অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একজন ব্যবসায়ীকে। সরকারের বাধ্যবাধকতা থাকার পরও পালন করা হয় না জাতীয় দিবস। স্কুলের সিলেবাস থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার শিক্ষাও বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে স্কুলটির একাধিক অভিভাবক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। একই সঙ্গে কারণে-অকারণে ছোট শিক্ষার্থীদের শাস্তি প্রদান করায় মোহাম্মদপুর থানায় একাধিক জিডিও করেছেন অভিভাবকরা।

জানা যায়, ২০১৩ সালে কার্ডিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে স্কুলটিতে শিক্ষার্থীসংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল কয়েকজন পরিচালকের চাপের মুখে প্রতিষ্ঠান ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর ২০১৫ সালের মাঝামাঝি স্কুলের একজন পরিচালককে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যাঁর অতীত জীবনে শিক্ষকতা করার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই স্বেচ্ছাচারিতার রাজত্ব কায়েম করেন। ফলে একে একে কমতে থাকে শিক্ষার্থী। এমনকি চারটি ক্যাম্পাসের একটি বন্ধ করতেও বাধ্য হয় বর্তমান কর্তৃপক্ষ। মাত্র দেড় বছরে শিক্ষার্থীসংখ্যাও ৪০০-তে নেমে আসে। বন্ধ করে দেওয়া হয় ‘এ লেভেল’ শিক্ষা কার্যক্রম। তবে যারা ‘ও লেভেলে’ অধ্যয়ন করছে তারা ইচ্ছে করলেও অন্য স্কুলে যেতে পারছে না। ফলে একটি নামি স্কুলে পড়েও অনিশ্চয়তায় দিন পার করছে ৪০০ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক।

জানা যায়, স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানটি ভালোভাবে চালানোর জন্য বেশ কয়েকজনকে এর অংশীদার করেন। একই সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষককেও অংশীদার করেন। কিন্তু অংশীদার চারজন পরিচালক ও পাঁচজন শিক্ষক একত্র হয়ে স্কুলটি তাঁদের দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। দখলের নেতৃত্বে রয়েছেন জামায়াতি আদর্শের তিনজন ব্যবসায়ী ও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। তাঁরাই জামায়াতি আদর্শে স্কুলটি পরিচালনার জন্য প্রগতিশীলদের একে একে চলে যেতে বাধ্য করছেন। যার ফলে ধ্বংসের মুখে পড়েছে কার্ডিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।

গত মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিভাবকদের পক্ষে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মো. মোবারক হোসাইন কাউছার। অভিযোগে বলা হয়, কার্ডিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবস যেমন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, জাতীয় শোক দিবস পালন হয়ে আসছিল। কিন্তু ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে স্কুলের পক্ষ থেকে কোনো জাতীয় দিবস পালন করা হয়নি।   এ ছাড়া স্কুলের সিলেবাসে আগে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সব ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের উদ্দেশ্যে ‘রিলিজিয়াস স্টাডিজ ও মরাল সায়েন্স’ নামে একটি বিষয় চালু ছিল। বর্তমান অধ্যক্ষ সেটি বাদ দিয়ে মুসলিম ছাত্রদের জন্য ‘ইসলামী স্টাডিজ’ চালু করেছেন। এ ছাড়া পাঠ্যসূচি থেকে গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল পাঠ বাতিল করেছেন।

অভিযোগে আরো বলা হয়, আগে প্রতিদিন ছুটির পরে স্কুলে তিনটি হেলপ ক্লাস নামে অতিরিক্ত ক্লাস ছিল। কিন্তু বর্তমান অধ্যক্ষ দায়িত্ব নিয়েই তা বন্ধ করে দেন। এর বদলে ধানমণ্ডির প্রধান ক্যাম্পাসের বদলে নিকটবর্তী লালমাটিয়া আবাসিক এলাকায় স্কুলেরই কয়েকজন শিক্ষক কোচিং সেন্টার খুলেছেন। সেখানে শিক্ষার্থীদের যেতে বাধ্য করছেন।

এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের কারণে-অকারণে শাস্তি প্রদান করায় গত ডিসেম্বরে অভিভাবক সাইফুল হাসান, মাহবুবুল ইসলাম, সাজ্জাদুল ইসলাম পৃথকভাবে লালমাটিয়া থানায় তিনটি জিডি করেছেন। গত মাসে স্কুল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে অভিভাবকদের সহায়তা কামনা করেছে। স্কুলের বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলেও বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করে।

স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ এম এম খায়রুল বাশার বলেন, ‘গত ডিসেম্বরে বিজয় দিবসে স্কুল বন্ধ ছিল তাই জাতীয় দিবস পালন হয়নি। এখানে আমাদের কিছুই করার ছিল না। স্কুলের সিলেবাসেও পরিবর্তন আনা হয়নি। তবে সরকারি দলের স্থানীয় কয়েকজন নেতা ও কয়েকজন অভিভাবক মিলে আমাদের স্কুলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। তাঁরাই নানা কথা বলে বেড়াচ্ছেন। ’ পত্রিকায় স্কুলের নামে বিজ্ঞাপন দেওয়া হলেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054709911346436