মায়ের কোলে চড়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে অদম্য হামিদ

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি |

দাঁড়ানোর শক্তি নেই, এক কানে কম শোনে। তবে আছে অফুরন্ত মনোবল। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা পেছনে ফেলে মায়ের কোলে চড়ে প্রতিদিন পরীক্ষাকেন্দ্রে হাজির হচ্ছে খাগড়াছড়ির পানছড়ির জেডিসি পরীক্ষার্থী মো. আব্দুল হামিদ। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন জয়ন্তী দেওয়ান।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, পানছড়ি উপজেলার কলাবাগান এলাকার মো. আব্দুল আলী ও হামিদা আক্তারের চার সন্তানের মধ্যে সবার ছোট মো. আব্দুল হামিদ। হামিদসহ এই দম্পতির তিন সন্তান প্রতিবন্ধী। রোগে ভুগে গত বছর হামিদের প্রতিবন্ধী বোনের মৃত্যু হয়। দিন দিন চলাফেরায় কষ্ট বাড়ছে তারও। কিন্তু হাল ছাড়েনি সে। মায়ের কোলে চড়ে হলেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায় সে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল জেডিসির গণিতবিষয়ক পরীক্ষা। গতকাল সকালে ইসলামিয়া মাদরাসাকেন্দ্র গিয়ে দেখা যায়, মায়ের কোলে চড়ে পরীক্ষা দিতে এসেছে হামিদ। মা হামিদা আক্তার ছেলেকে পরীক্ষার কেন্দ্রে নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়ে দিয়ে আবার বাড়ি ফিরে গেছেন ঘরের কাজ করতে। দুই ঘণ্টা পর আবার আসবেন ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যেতে। 

আব্দুল হামিদের মা হামিদা আক্তার (৬১) বলেন, ছোট থেকে তাঁর তিন প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়ের পড়ালেখা প্রতি আগ্রহ ছিল। কিন্তু একসঙ্গে কোলে করে তিনজনকে মাদরাসায় নিয়ে আসা সম্ভব ছিল না। তাই দুই ছেলেমেয়েকে মাদরাসায় দিয়েছিলেন তিনি। গত বছর তাঁর ছোট মেয়ে মারা যায়।

তবে পরিবারের এমন বিপর্যয়ের পরও হামিদ লেখাপড়ার স্বপ্ন ছাড়েনি। ছেলেকে প্রতিদিন কোলে করে মাদরাসায় নিয়ে যান তিনি। ছেলের জন্য একটি হুইলচেয়ার পাওয়া গেলে কষ্ট কিছুটা লাঘব হতো।

পরীক্ষা শেষে কথা হয় আব্দুল হামিদের সঙ্গে। সে বলে, ‘পরীক্ষা ভালো দিয়েছি। তবে মায়ের কারণে আজ এত দূর পর্যন্ত আসতে পেরেছি। শিক্ষকেরা সব সময় খোঁজখবর নেন আর সহযোগিতা করেন। তা ছাড়া বন্ধুরাও সহযোগিতা করে। ইচ্ছে আছে পড়াশোনা করে একদিন শিক্ষক হয়ে বাবা-মার কষ্ট দূর করার।’

হামিদের বাবা মো. আব্দুল আলী (৬৮) বলেন, ‘প্রতিবন্ধী তিন সন্তানকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে জমি বিক্রি করেছি। সাত শ টাকা দোকান ভাড়ায় একটি চায়ের দোকান চালাই। সেটিও দুইবার আগুনে পুড়ে গেছে। বর্তমানে এই ছোট দোকান থেকেই সংসারের খরচ তুলতে হয়। এমন অবস্থায়ও ছেলের ইচ্ছের কারণে কষ্ট করে হলেও পড়ালেখা করাচ্ছি।’

পানছড়ি ইসলামিয়া সিনিয়র মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, রোদ–বৃষ্টি উপেক্ষা করে মায়ের কোলে করে এসে শতভাগ ক্লাসে উপস্থিত থাকে হামিদ। ক্লাস ফাঁকি দেয় না সে। মনোযোগ দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে। 

মাদরাসার অধ্যক্ষ আব্দুল আলী বলেন, ‘হামিদ  প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার প্রতি আমার যত্নশীল ছিলাম। সে পরীক্ষায় সুযোগ-সুবিধাগুলো পাচ্ছে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003018856048584