মায়ের কোলে চড়ে পরীক্ষার হলে, চান্স পেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে

ঢাবি প্রতিনিধি |

মায়ের শক্তিতেই বলীয়ান হৃদয়। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চশিক্ষার অঙ্গনে ‘পা’ রাখতে যাচ্ছেন নেত্রকোণার হৃদয় সরকার; যদিও দুই পায়ে চলার শক্তি নেই তার। সেই হৃদয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।  

আর তার এই যুদ্ধে সবসময় শক্তি যুগিয়েছেন মা সীমা সরকার। স্কুল থেকে কলেজ, তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা, সবখানেই মায়ের কোলে চড়েই দিতে গেছেন হৃদয়।  

অজানা এক রোগে জন্ম থেকে চলচ্ছক্তিহীন হৃদয়কে কখনোই কোল ছাড়া করেননি সীমা সরকার। গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা দিতেও মায়ের কোলে চড়ে এসেছিলেন হৃদয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা মায়ের কোলে হৃদয়ের এই ছবিই ফেইসবুকে ভাইরাল হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র মায়ের কোলে হৃদয়ের ছবি তুলে ফেইসবুকে পোস্ট করার অল্প সময়ের মধ্যেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। আর হৃদয় জয় করে নেন অসংখ্য মানুষের হৃদয়।

মঙ্গলবার প্রকাশিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের অধীনে ‘খ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার ফল। সেখানে ২ হাজার ৩৭৮টি আসনের বিপরীতে যোগ্য বিবেচিত হয়েছেন চার হাজার ৭৪৭ জন।

তার মধ্যে হৃদয়ের অবস্থান ৩ হাজার ৭৪০তম।  মেধাক্রমের এই অবস্থান থেকে যদিও সরাসরি ভর্তির সুযোগ কম, তারপরও প্রতিবন্ধী কোটায় হৃদয় ভর্তি হতে পারবেন।

সমীরণ সরকার ও সীমা সরকারের দুই সন্তানের মধ্যে বড় হৃদয় সরকার নেত্রকোণার আবু আব্বাস ডিগ্রি কলেজ থেকে জিপিএ ৪.৫০ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক ও নেত্রকোণা জেলা স্কুল থেকে জিপিএ ৪.০৬ পেয়ে মাধ্যমিক পাস করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তার সব অর্জনের কৃতিত্ব মাকেই দিয়েছেন হৃদয়।

ভর্তি পরীক্ষায় হৃদয়ের ফল। ভর্তি পরীক্ষায় হৃদয়ের ফল। তিনি বলেন, “আমার এই ফলাফলের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার মায়ের। সেই ছোট থেকেই তিনি আমাকে কোলে করে স্কুল-কলেজে নিয়ে যান।
“তিনি আমাকে কোনোদিন হুইল চেয়ার ব্যবহার করতে দেননি। তিনি বলেন, যতদিন তিনি বেঁচে আছেন, যতদিন সামর্থ্যে কুলায়, তিনি আমাকে কোলে করেই নিয়ে যাবেন।”

তবে হৃদয়ের এই ফলাফলে উচ্ছ্বসিত তার পুরো পরিবার। “আমার বাবা-মা অত্যন্ত খুশি হয়েছেন, তাদের কষ্ট স্বার্থক হয়েছে,” বলেন হৃদয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগও প্রতিবন্ধী হৃদয় সরকারের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস বলেন, “হৃদয়ের ফলাফল শোনার পরই আমি ওকে ফোন করেছি। ও যেহেতু আমার হল জগন্নাথ হলেই থাকবে সেহেতু ওর হলে সিটের ব্যবস্থা আমি করে দেব।”

“এছাড়া  আর্থিক, একাডেমিকসহ যে ধরনের সাহায্যের দরকার হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমরা করব।”


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029609203338623