মিন্নির জবানবন্দি এসপির সংবাদ সম্মেলনের আগে না পরে : হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত শাহ নেওয়াজ রিফাত শরীফের স্ত্রী কারাবন্দি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিনের আবেদনের শুনানি আজ মঙ্গলবার দুপুর ২টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার (১৯ আগস্ট) আংশিক শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

এদিকে আদালত বরগুনার এসপি কবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, এই সংবাদ সম্মেলন মিন্নির ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দির আগে না পরে করা হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মিন্নিকে কবে পুলিশ লাইনে নেয়া হয়েছে, সেটা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার আগে না পরে, তার তথ্য সুনির্দিষ্ট করে জানাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া রিমান্ডে নিয়ে কীভাবে আইনের লঙ্ঘন করা হয়েছে তারও তথ্য দিতে বলা হয়েছে। এসব তথ্য সংযোজন করে মিন্নির আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্নাকে সম্পূরক আবেদন করতে বলেছেন আদালত।

এর আগে গত ৮ আগস্ট বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের নেতৃত্বাধীন অবকাশকালীন বেঞ্চ জামিন দিতে রাজি না হওয়ায় আইনজীবী মিন্নির জামিনের আবেদন ফেরত নিয়েছিলেন। এ অবস্থায় বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহীমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে জামিনের আবেদনটি শুনানির জন্য গতকাল উপস্থাপন করা হয়। মিনির আইনজীবী বলেন, মিন্নি একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী। সে মামলার এক নম্বর সাক্ষী। অথচ তাকে গত ১৬ জুলাই পুলিশ লাইনে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয়। এর পরদিন ১৭ জুলাই তাকে আদালতে নিয়ে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর তাকে আবার পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। এসব তথ্য সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। আইনজীবী বলেন, মিনির পক্ষে যাতে কোনো আইনজীবী দাঁড়াতে না পারে সে জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। এ কারণে মিন্নির পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াতে পারেননি।

আদালত আইনজীবীর কাছে জানতে চান, জামিনের জন্য আপনার কী যুক্তি? জবাবে আইনজীবী বলেন, ‘১৯ বছরের একটি মেয়ে। কলেজছাত্রী। একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী। যার সঙ্গে মিলে রিফাতকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে বলে পুলিশ দাবি করছে, সে মামলার প্রধান আসামি ছিল। সে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে। আর পুলিশ তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করেছে। এটা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার লঙ্ঘন।’

এ সময় আদালত জানতে চান, ‘তাঁকে রিমান্ডে নেয়ার আগে না পরে পুলিশ লাইনে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে?’

জবাবে আইনজীবী বলেন, পুলিশ লাইনে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করার পরও পুলিশ লাইনে নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মিন্নি ওই জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। আবেদনে বলা হয়েছে, তাঁকে পুরুষ পুলিশ কর্তৃক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে।

এ সময় আদালত জানতে চান, পুলিশ সুপার (এসপি) কবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন? এসপি সাহেব কবে বলেছেন যে, মিন্নি দোষ স্বীকার করেছে? সেটা মিন্নির ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দির আগে না পরে?

জবাবে আইনজীবী সুনির্দিষ্ট তারিখ বলতে না পারায় আদালত এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তারিখ জানিয়ে আদালতে সম্পূরক আবেদন দিতে বলেন। এ নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টও সংযুক্ত করতে বলা হয়েছে।

গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে রিফাত শরীফকে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহত রিফাতের বাবা আব্দুল আলিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় মিন্নিকে এক নম্বর সাক্ষী করা হয়। এই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি রিফাত ফরাজী, টিকটক হৃদয়সহ বেশ কয়েকজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া এজাহারভুক্ত নয়ন বন্ড ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে। এ অবস্থায় ১৬ জুলাই রাতে মিন্নিকে গ্রেফতার করে পরদিন ১৭ জুলাই তাঁকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষ হওয়ার আগেই গত ১৯ জুলাই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মিন্নি। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগের দিন ১৮ জুলাই দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেন বরগুনার এসপি মারুফ হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে এসপি মারুফ হোসেন বলেন, ‘এ পর্যন্ত গ্রেফতার হওয়া আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও মিন্নির কথা থেকে পাওয়া সুস্পষ্ট তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মিন্নিকে এই মামলায় আসামি হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিন্নি এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতেন। শুরু থেকে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে খুনিদের সঙ্গে মিন্নির কথোপকথন হয়েছে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032799243927002