নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মুক্তিপণের ৫ লাখ টাকা না পেয়ে জয়ন্ত চন্দ্র দাস (১০) নামে এক স্কুলছাত্রকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে অপহরণকারীরা। বুধবার দুপুর থেকে বিকালের মধ্যে ঘটে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। বিকাল ৫টার দিকে উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের বানিয়াদি এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সন্দেহজনকভাবে দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ। থানায় অভিযোগ করেও পুলিশের সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ নিহত শিশুর পরিবারের। জয়ন্ত চন্দ্র দাস বানিয়াদি এলাকার চৈতন্য চন্দ্র দাসের ছেলে। সে শিশু মেলা কিন্ডার গার্টেন স্কুলের ৩য় শ্রেণির ছাত্র।
পুলিশ, নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, চৈতন্য চন্দ্র দাস একজন কলা বিক্রেতা। কলা বিক্রি করে কোনো রকম সংসার চলে তার। অনেক কষ্ট করে ছেলে জয়ন্ত চন্দ্র দাসের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে আসছেন তিনি। মঙ্গলবার বিকালে স্কুল থেকে আসার পথে অপহরণ করা হয় জয়ন্তকে। সন্ধ্যা হয়ে গেলেও বাড়িতে ফিরে না আসায় বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও পায়নি পরিবারের সদস্যরা। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অপহরণকারীরা চৈতন্য দাসের কাছে মোবাইল ফোনে জয়ন্ত দাসের মুক্তির বিনিময়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। বিষয়টি বাবা চৈতন্য দাসসহ পরিবারের সদস্যরা থানা পুলিশকে অবহিত করেন। এ সময় রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান মনির অপহরণের অভিযোগ আমলে না নিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করে দেন।
পরে পরিবারের সদস্যরা ওসি’র পায়ে ধরে ছেলে জয়ন্ত দাসকে উদ্ধার করার দাবি করেন। পরে একজন এএসআই দিয়ে বানিয়াদি এলাকা পরিদর্শন করানো হয় মাত্র। এদিকে, মুক্তিপণের ৫ লাখ টাকা নিয়ে বাজিতপুর নামে একটি এলাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য অব্যাহত চাপ প্রয়োগ করে অপহরণকারীরা। বিকালে বানিয়াদি এলাকার সুরিয়া বেগমের পরিত্যক্ত বাড়ির একটি ঘরে শিশুর হাত-পা ও মুখ বাঁধা লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
এদিকে এ ঘটনায় বানিয়াদি এলাকার রাজকুমারের ছেলে অনিক, জাহাঙ্গীরের ছেলে আলমগীরকে আটক করেছে পুলিশ। নিহতের চাচা রাম কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘আমরাতো গরিব। হের লাইগা পুলিশও আমাদের অভিযোগে গুরুত্ব দেয় নাই। এ জন্য আমার ভাতিজা খুন হলো।’ শিশু জয়ন্ত দাস হত্যাকাণ্ডের খবরে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিবারে চলছে শোকের মাতম।রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান মনির বলেন, আমরা যথাযথ চেষ্টা চালিয়েছি। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।