শারীরিক প্রতিবন্ধী ঈশ্বর কুমার মুখ দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে । পরীক্ষার খাতায় লেখার সময় কক্ষ পর্যবেক্ষকদের খাতার পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দিতে হয়। হাতে শক্তি না থাকায় একা একা খাতা ঠিক করে লিখতে পারে না সে।
মুখ দিয়ে লিখেই ঈশ্বর স্কুলের সব পরীক্ষা এবং পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের মৃত প্রফুল্ল চন্দ্র সূত্রধরের ছেলে ঈশ্বর খন্দকার আব্দুল মজিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়েছে সে। জন্মের পর থেকে তার দুই হাত অবশ। পা দুটিতেও শক্তি কম। কোনোভাবে ধীরে ধীরে হাঁটতে পারে সে।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) উল্লাপাড়া এইচ টি ইমাম গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে দেখা যায়, কক্ষে ঈশ্বর কুমারকে পৃথকভাবে একটি টেবিল সামনে দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। মুখ দিয়ে সে বেশ দ্রুতই লিখতে পারে।
ঈশ্বর জানায়, তার স্কুলের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক ইউসুফ আলী মন্টু ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে তার লেখাপড়ায় নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিখিল চন্দ্র ঘোষ স্কুলে তার পড়ালেখায় কোনো বেতন নেন না।
ঈশ্বর আরও জানায়, বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর একই গ্রামে বসবাসকারী তার বড় বোন রীভা রানী সূত্রধর তাকে লালন-পালন করছেন। তারা তিন বোন, দুই ভাই। ভাইদের মধ্যে সে-ই ছোট। বড় ভাই বিয়ে করে আলাদা থাকেন। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। বড় বোনই এখন তাকে মায়ের মতো লালন-পালন করছেন। মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় চলছে তার পড়ালেখা। ঈশ্বর ভবিষ্যতে একজন আইনজীবী হতে চায়।
এইচ টি ইমাম গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম জানালেন, চরম দারিদ্র্য ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করে ঈশ্বর কুমার আজ এসএসসি পরীক্ষার আসনে বসেছে- এটা ওর জন্য অনেক বড় অর্জন। দু'হাত অবশ হলেও মুখ দিয়ে লিখে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার এক অদম্য সাহসী সে। সরকারি নিয়মে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রতিবন্ধী হিসেবে যেসব সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্য সবই দেওয়া হচ্ছে তাকে।