মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া করে চিকিৎসক হবেন। তারপর ব্রতী হবেন মানুষের সেবায়- এমন স্বপ্ন বুকে নিয়েই এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন নিপু বিশ্বাস। পান জিপিএ ৫। এসএসসিতেও একই ফল তার। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এনজিও থেকে নেওয়া মায়ের ক্ষুদ্রঋণের টাকায় কয়েক মাস কোচিংও করেন। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়েছেন তিনি। খুলনা মেডিকেল কলেজের মেধা তালিকার প্রথম দিকে তার নাম এসেছে। মঙ্গলবার রাতে ফল জানার পর আনন্দে আত্মহারা হন নিপু। কিন্তু নিমেষেই সেই সুখানুভূতি হারিয়ে তার চোখেমুখে ফুটে ওঠে দুশ্চিন্তার ছাপ। কারণ ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান হলেও দারিদ্র্যের বাধা অতিক্রম করে মেডিকেলে ভর্তি হওয়াটা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে তার।
যশোর সদরের কনেজপুর গ্রামে রণজিৎ বিশ্বাস ও সাগরিকা বিশ্বাসের ছেলে নিপু বিশ্বাস। ঋষি পরিবারের সন্তান নিপুর বাবা রণজিৎ বিশ্বাস বাঁশের ঝুড়ি তৈরি করে সংসার চালান। প্রতিদিন তার আয় মাত্র ২-৩শ' টাকা। এই আয়ে পরিবারের চারজনের সংসার কোনো রকম চলে।
নিপু বংশপরম্পরার সেই পেশা গ্রহণ করতে চান না, চান ডাক্তার হতে। তার বাবা রণজিৎ বিশ্বাস বলেন, ছেলে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে এতে খুশি। কিন্তু আর্থিক অনটনের সংসার। অনেক কষ্টে ছেলেকে এতদূর এনেছেন। মেডিকেলে ভর্তি করাসহ পড়াশোনার ব্যয় বহনের মতো সঙ্গতি তার নেই। তাই কীভাবে ছেলের ভর্তির টাকার জোগান হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় তিনি।
নিপুর মা সাগরিকা বিশ্বাস বলেন, তাদের মাঠে কোনো জমি নেই। শুধু ভিটেটুকু আছে। স্বামী বাঁশের ঝুড়ি বুনে বাজারে বিক্রি করে যা আয় করেন, তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। কোচিংয়ের ফি জোগাতে এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি এখনও শোধ করতে পারেননি। এ অবস্থায় নিপু কীভাবে ডাক্তারি পড়বে তা তারা ভাবতে পারছেন না।
সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা ছাড়া অদম্য মেধাবী নিপুর মেডিকেলে ভর্তি অসম্ভব বলে জানান তার মা-বাবা। ডাকাতিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হেলেনা আকতার বলেন, নিপুদের অভাবের সংসার। স্কুলে সে যখন পড়ত, তাকে বিনামূল্যে আমরা খাতা-কলম এবং অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করেছি। সে এইচএসসি পরীক্ষায়ও ভালো রেজাল্ট করেছে। দারিদ্র্যের কারণে তার উচ্চশিক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।