মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস করে ঢাকায় গাড়ি-বাড়ি করেছে জসিম

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মেডিকেল কলেজ প্রশ্নফাঁসের হোতা জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া। গত কয়েক বছরে রাজধানীর মিরপুরে দুটি ছয়তলা বাড়ি, গার্মেন্টসহ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছে এসব করে। তিনটি দামী গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়ায়। শুধু তাই নয়, গত কয়েক বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকা কামিয়েছে। সিআইডির হাতে জসিম গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে প্রশ্নফাঁস করে অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থে তার এসব সম্পদের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, জসিমের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। অনুসন্ধান শেষে মানি লন্ডারিং আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নিয়াজ আহমেদ লাবু ।

 প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত ২০ জুলাই রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের হোতা জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নুসহ (৪৫) পাঁচজনকে গ্রেফতার করে সিআইডির সাইবার দল। অন্যরা হচ্ছে পারভেজ খান, জাকির হোসেন ওরফে দিপু, মোহাইমিনুল ওরফে বাঁধন ও এসএম সানোয়ার হোসেন। তিনি জানান, গ্রেফতারের সময় চক্রের মূলহোতা জসিমের কাছ থেকে দুই কোটি ২৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, দুই কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক এবং তার সহযোগী পারভেজ খানের (৩২) কাছ থেকে ৮৪ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে সিআইডি। তাদের বিরুদ্ধে সিআইডির এসআই প্রশান্ত কুমার সিকদার বাদী হয়ে ডিএমপির মিরপুর থানায় পাবলিক পরীক্ষা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। গ্রেফতারকৃত পাঁচ জনের মধ্যে জসিম, পারভেজ ও জাকিরকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বাকি দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।

সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, মেডিকেল প্রশ্ন পত্রের ফাঁসের হোতা জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থানার জয়মন্টব ইউনিয়নের খানবানিয়ারা গ্রামে। পারিবারিকভাবে নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বেড়ে ওঠা জসিম ঢাকায় খালাতো ভাই সালামের সঙ্গে ’৯০-এর দশক থেকেই প্রেসে যাতায়াত করত। সেখান থেকেই একপর্যায়ে দুই ভাই মিলে প্রশ্নফাঁসের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে।

জসিম তার সহকর্মীদেরও এই প্রশ্নফাঁস সিন্ডিকেটে কাজে লাগিয়ে ছাত্র জোগাড় করত। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রশ্নফাঁস করে জসিম গত কয়েক বছরে মিরপুরে দুটি ছয় তলা বাড়ি করেছে। মিরপুর-১ নম্বর সেকশনের শাহআলী এলাকার এইচ ব্লকের ১ নম্বর সড়কের ৪৩ নম্বর পৃথ্বী ভিলা ও ৪৫ নম্বর শাম্মি মঞ্জিল নামে দুটি ছয় তলা বাড়ি রয়েছে তার। এছাড়া মিরপুর এলাকায় শাম্মি ফ্যাশন্স নামে একটি গার্মেন্ট কারখানা রয়েছে। ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশে শিক্ষার্থী পাঠানোর একটি কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে তার। নিজের মালিকানায় তিনটি গাড়িও রয়েছে জসিমের।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করে এত অর্থ কীভাবে আয় করেছে তার কোন সঠিক জবাব দিতে পারেনি জসিম। তার স্থাবর-অস্থাবর আরও সম্পত্তির খোঁজ করা হচ্ছে। সম্পত্তির অনুসন্ধান শেষে তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করা হবে। একই সঙ্গে প্রশ্নফাঁস করে আয় করা অর্থ-সম্পত্তি বাজেয়াফত করে সরকারী হেফাজতে নেয়ার জন্যও আবেদন করা হবে।

সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার দাশ জানান, কয়েক বছর ধরে গ্রেফতারকৃত জসিম ও তার খালাতো ভাই সালাম মিলে একটি বিশাল চক্র মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করে আসছিল। গ্রেফতারকৃত জসিম এই প্রশ্নফাঁস করে অর্ধ শত কোটি টাকা কামিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে আরও তথ্য জানার চেষ্টা চলছে। সিআইডি সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃত জসিমের খালাতো ভাই আব্দুস সালাম স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর প্রেসে মেশিনম্যান হিসেবে কাজ করে। সালামের মাধ্যমে জসিম সারাদেশে প্রশ্নফাঁসের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। একসময় ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি আলিকোতে কাজ করা জসিম প্রশ্নফাঁস করে কোটি কোটি টাকা আয় করে। এর আগে ২০১১ সালে ও ২০১৫ সালে দুই দফায় র‌্যাবের হাতে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিল জসিম। কিন্তু জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আগের কাজেই ফিরে যায়। সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার দাশ জানান, এই চক্রের আরেক হোতা জসিমের খালাতো ভাই গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

সিআইডি সূত্র জানায়, প্রশ্নফাঁস করে জসিম যাদের কাছে তা বিক্রি করেছে। যারা ফাঁস হওয়া প্রশ্নের মাধ্যমে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে, তাদের একটি তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়েও অনুসন্ধান চলছে। এখন পর্যন্ত শোভন নামে একজন খুলনা মেডিকেল কলেজে, মাহমুদা পারভীন ঋতু নামে একজন বরিশাল মেডিকেল কলেজে, রিয়াদ নামে একজন সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজে ও মুবিন নামে একজন ইব্রাহিম কার্ডিয়াক মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে বলে সিআইডির কর্মকর্তারা তথ্য পেয়েছেন। সিআইডির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যারা ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র দিয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036900043487549