জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন ফারহান মাসুদ। কিন্তু তিনি তার ফল জানতে পেরেছেন ফলপ্রকাশের ১ মাস ৫ দিন পর। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে তার ফল প্রকাশ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ফারহান বলেন, অনেক ভালো পরীক্ষা দিয়েছিলাম। প্রথম-দ্বিতীয় হতে না পারি, অন্তত মেধাতালিকায় স্থান পাব সেই আত্মবিশ্বাস ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রাকাশিত ফলের তালিকায় বারবার খুঁজেও নিজের রোল না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো এক এসএমএসে জানতে পেরেছি আমার স্থান দ্বিতীয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে কলা ও মানবিকী অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ১৩তম, ১৫তম, ২৬তম, ৪০তম, ৪৭তম, ৪৯তমসহ মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া ২৫ জন শিক্ষার্থী তাদের ফলের খবর জানতেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৯ অক্টোবর সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা এবং মাদ্রাসা এই চারটি শাখার পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরিচালনা কমিটি। ব্যবসায় শিক্ষা ছাড়া বাকি তিনটি শাখার পূর্ণাঙ্গ ফল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ২০৯ জনের তালিকা প্রকাশ করার কথা থাকলেও ১৮৪ জনের ফল ওয়েবসাইটে ছিল। ফলে বাকি ২৫ জন শিক্ষার্থী তাদের ফল জানতে পারেননি।
এই মেধাতালিকায় বাদ পড়া ২৬তম স্থানের অধিকারী জুলকারনাইন বলেন, অনেক ভালো পরীক্ষা দিয়েছিলাম। ফল না পেয়ে হতাশ হয়েছিলাম। তাও ভালো যে মৌখিক পরীক্ষার আগেই ফল জানিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যবসায় শিক্ষা শাখার ফল দুই পাতায় প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে শুধু প্রথম পাতা তুলে দেওয়া হয়। ফল প্রকাশিত না হওয়া ২৫ জন ভর্তি ইচ্ছুকের তালিকা দ্বিতীয় পাতায় ছিল। ফল প্রকাশের ১ মাস ৫ দিন পর বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকের নজরে এলে ভর্তি পরিচালনা কমিটিকে অবহিত করা হয়। এরপর তড়িঘড়ি করে ওয়েবসাইটে এই ২৫ জনের ফল তুলে দেয় কর্তৃপক্ষ।
ভর্তি পরীক্ষায় প্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইটি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম শামীম কায়সার বলেন, সি ইউনিটের ব্যবসায় শিক্ষা শাখার দুই পাতার প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অসতর্কতাবশত কেবল একটি পাতা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। ফলে ২০৯ জন শিক্ষার্থী মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হলেও ওয়েবসাইটে ১৮৪ জন শিক্ষার্থীর তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল। এট অনেক বড় ভুল।
এ বিষয়ে কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বলেন, আমার কাছে ফলের যে কপিটি এসেছিল, তাতে কোন অপূর্ণতা ছিল না। তবে ওয়েবসাইটে অপূর্ণাঙ্গ ফল প্রকাশের ঘটনা জানার পরই আমি পূর্ণাঙ্গ ফল প্রকাশের জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি।
ভর্তি পরীক্ষার ফল তৈরির দায়িত্বে থাকা সফটওয়্যার কোম্পানি ‘অন্যরকম সফটওয়্যার লিমিটেড’ এর সিনেট কর্মকতা সবুজ পারভেজ বলেন, আমরা ফলের একাধিক কপি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখায় পাঠিয়েছি। আইটি শাখায় যে কপিটি দেয়া হয়েছে সেখানে হয়তো ভুলবশত একটি পাতা কমে গেছে। এর জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, বিষয়টি জানতাম না। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।