আরবি ভাষার লেখক হিসেবে প্রথম ম্যানবুকার সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হলেন ওমানের লেখক জোখা আলহার্থি। তিনি তার 'সেলেস্টিয়াল বডিজ' (স্বর্গীয় সত্ত্বা) উপন্যাসের জন্য এ সম্মানজনক আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেলেন। জোখার জন্মভূমি ওমানের ঔপনিবেশিক-পরবর্তী পরিবর্তনই ওই উপন্যাসের বিষয়বস্তু। মঙ্গলবার লন্ডনের রাউন্ড হাউসে এক অনুষ্ঠানে জোখার হাতে এ পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। আরও পাঁচ জন বাছাইকৃত লেখককে হারিয়ে এ পুরস্কার পেলেন ৪০ বছরের জোখা।
পুরস্কার পাওয়ার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি রোমাঞ্চিত যে উন্নত আরব সংস্কৃতির দিকে একটি জানলা খুলে গেল। গার্ডিয়ান ও নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে আর জানা যায়, এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধ্রুপদী আরবি সাহিত্যে শিক্ষালাভ করে বর্তমানে মাসকাটে সুলতান কাবুস বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন জোখা আলহার্থি। তার এ পর্যন্ত দুটি ছোটগল্প সংকলন, একটি ছোটদের বই ও তিনটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে।
জোখার পুরস্কার পাওয়া 'সেলেস্টিয়াল বডিজ' বইটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্লিন বুথ। তিনি ও জোখা দু'জনে পুরস্কারটির জন্য পাওয়া ৫০ হাজার পাউন্ড সমানভাগে ভাগ করে নেবেন। বইটি প্রকাশ করেছে ব্রিটেনের বিখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান স্যান্ডস্টোন প্রেস।
উপন্যাসটি নিয়ে জোখা বলেন, ওমান আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। কিন্তু আমার মনে হয়, আন্তর্জাতিক পাঠকরা এ বইয়ের মানবিক মূল্যবোধের সঙ্গে স্বাধীনতা ও ভালোবাসার সহমর্মিতা অনুভব করবেন।
পুরস্কারের জুরি বোর্ডের মতে, জোখার বইটি উন্নত কল্পনাসম্পন্ন, আকর্ষণীয় এবং সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বদলে যেতে থাকা ও এত দিন অজ্ঞাত হয়ে থাকা এক সমাজকে কাব্যিক অন্তর্দৃষ্টিতে দেখে লেখা। বইটি টানটান ও সুশৃঙ্খল কাঠামোয় গড়া। বইটিতে একটি পরিবারের বিচ্ছেদ ও ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে ওমানের পরিবর্তিত দিনের কথা বলা হয়েছে।
উপন্যাসের পটভূমি ওমানের আল-আওয়াফি নামের এক গ্রাম। সেখানে বাস করে তিন বোন- মায়া, আসমা ও খাওলা। মায়া একবার প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ধনী পরিবারের যুবক আবদাল্লাহকে বিয়ে করেছেন। আসমা বিয়ে করছেন দায়িত্ববোধের কারণে আর খাওলা অপেক্ষারত তার প্রেমিকের জন্য, যিনি কানাডাপ্রবাসী। তিন বোন দেখেছেন, কীভাবে ওমান এত দিনের ক্রীতদাস প্রথা অধ্যুষিত সমাজ থেকে বদলাতে শুরু করেছে।
লেখিকা জোখা আলহার্থি বলেন, দাসত্বের মতো বিষয়কে এ লেখা স্পর্শ করে গেছে। আমার মনে হয়, সাহিত্য এ বিষয়ে কথা বলার সেরা মঞ্চ।
বিশ্নেষকরা বলছেন, বইটি এমন এক সংস্কৃতির ভেতরে উঁকি দিয়েছে, যা পশ্চিমাদের কাছে অপেক্ষাকৃত অচেনা। জোখার এ বই একজন গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য প্রতিভার উঠে আসার ইঙ্গিত।
জুরি বোর্ডের প্রধান ইতিহাসবিদ বেটানি হিউজেস বলেন, এ উপন্যাস সূক্ষ্ণ শিল্প এবং আমাদের ইতিহাসের অস্বস্তিকর পরিপ্রেক্ষিতকে তুলে ধরেছে। জোখার লেখার স্টাইলটি আসলে রূপক, যা সূক্ষ্ণভাবে দাসত্ব, লিঙ্গবৈষম্য ও সমাজের সব ক্লেশের বিরুদ্ধে কথা বলছে।