সরকারের নির্দেশনার পরও ময়মনসিংহে বন্ধ হয়নি অধিকাংশ কোচিং সেন্টার। কোচিং পরিচালকরা বলছেন শিক্ষার্থী ধরে রাখতে তারা কোচিং চালিয়ে যাচ্ছেন। আর প্রশাসন বলছেন সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মনিটরিং টিম কাজ করছে।
জেএসসি পরীক্ষাকালে ময়মনসিংহ নগরীর কোচিং সেন্টার খ্যাত বাউন্ডারি রোড, নাহা রোড, জিলা স্কুল রোড এবং সাহেব আলী রোডে গিয়ে দেখা যায় অধিকাংশ কোচিং সেন্টার চালু রয়েছে। তবে জেলা প্রশাসন কণিকা ক্যাডেট কোচিংয়ের পরিচালক মাহবুবুল আলমকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৭ দিনের জেল এবং কয়েকটি কোচিং সেন্টার সিলগালাসহ জরিমানা করেছে। এরপরেও অধিকাংশ কোচিং সেন্টার চালু রয়েছে।
এ ব্যাপারে সাড়া বাংলা বিদ্যা কোচিং সেন্টারের পরিচালক মোখলেছুর রহমান বলেন, স্কুলে ভালো পড়াশোনা হয় না। তাই আমার কোচিং সেন্টারে জিলা স্কুল এবং বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। সকালে কয়েকটি ব্যাচের মডেল টেস্ট পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কোচিং সেন্টার বন্ধে সরকারের নিষেধাজ্ঞার পরেও শিক্ষার্থী ধরে রাখতে রিস্ক নিয়ে পড়াচ্ছি।
বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া তাবাসুম, আবা আরিফিন তিমা এবং মাহমুদা সুলতানা রিয়া বলেন, আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা ২৭ নভেম্বর থেকে। তাই কোর্স সম্পূর্ণ না হওয়ায় মোখলেছ স্যার বলছে কোচিংয়ে আসার জন্য, তাই আসছি। স্যার বললে আমাদের বাধ্য হয়েই আসতে হয়। কোচিং বন্ধ করে দিলে আমরা আসব না।
অভিভাবক আশরাফ জামান এবং সুরাইয়া শারমিন বলেন, কোচিং খোলা রাখলে আমার মেয়ে না আসলে অন্যের মেয়ে আসবে। তাহলে আমার মেয়ে ওই বিষয়ে পিছিয়ে পড়বে। তাই বাধ্য হয়ে মেয়েকে নিয়ে আসতে হচ্ছে। স্যার না করে দিলে আর আসব না।
বাউন্ডারি রোডে নিজ বাসায় কোচিং করাচ্ছেন আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক একেএম মাকসুদুল আলম। তিনি বলেন, সামনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা। তাই তাদের কথা চিন্তা করে আমি কোচিং করাচ্ছি। এতে অন্যায়ের কিছু দেখছি না।
বাউন্ডারি রোডে অগ্রণী কিন্ডার গার্টেনের আড়ালে চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় জিলা স্কুল, বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি নামকরা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কোচিং করানো হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক রাকিবুল ইসলাম বলেন, কোচিং নয়, কিন্ডার গার্টেন হিসেবেই এখানে ক্লাস নেয়া হচ্ছে।
সাহেব আলী রোডে নিজের নামেই প্রতিষ্ঠিত হোসেন আলী ক্যাডেট কোচিং সেন্টারের পরিচালক হোসেন আলী বলেন, ছাত্র রাজনীতি করার পাশাপাশি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা সম্পূর্ণ করে সুনামের সহিত কোচিং পরিচালনা করে যাচ্ছি। প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা আমাকে এক নামেই চিনে। তাদের বাচ্চারাও আমার কাছে পড়াশোনা করে।
জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কোচিং সেন্টার বন্ধে মাঠ পর্যায়ে আমাদের মনিটরিং টিম কাজ করছে। ইতোমধ্যে অনিয়মের অভিযোগে কয়েকটি কোচিং সেন্টার সিলগালা, জরিমানা ও একজনকে সাজাও প্রদান করা হয়েছে। এখনও যদি কেউ সরকারি সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে কোচিং পরিচালনা করে তার বিরুদ্ধেও কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে।