যুবলীগ নেতাদের বয়সসীমা ৫৫ বছর নির্ধারণ করে দেয়ায় চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী বর্তমান কমিটির বেশির ভাগ নেতাই বাদ পড়ছেন। প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে মাত্র চারজন নেতা হওয়ার দৌঁড়ে টিকে আছেন। সম্পাদকমণ্ডলীর বেশির ভাগ সদস্যও বাদ পড়ছেন। ফলে চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীর তালিকায় যুক্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি নতুন নাম। আগে জ্যেষ্ঠ নেতারা প্রার্থী হওয়ায় যাঁরা চুপ ছিলেন তাঁরাও কাঙ্ক্ষিত পদ পেতে জোরালো তৎপরতা শুরু করেছেন। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন তৈমুর ফারুক তুষার।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সূত্র মতে, বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেয়ায় ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। নানা অপকর্মে যুবলীগের বর্তমান কমিটি বিতর্কিত হয়ে পড়ায় অনেকেই মনে করছেন এবার যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। পরিচ্ছন্ন ও মেধাবী সাবেক ছাত্রনেতাদের ঠাঁই হবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে।
দীর্ঘ সাত বছর আগে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ স্বাক্ষরিত কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্যরা হলেন—অধ্যাপক মীজানুর রহমান, শেখ ফজলুর রহমান মারুফ, শেখ শামসুল আবেদীন, চয়ন ইসলাম, ড. আহমদ আল কবির, সাইদুর রহমান শহীদ (শহীদ সেরনিয়াবাত), আলতাফ হোসেন বাচ্চু, জাহাঙ্গীর কবির রানা, সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, মুজিবুর রহমান চৌধুরী, ফারুক হোসেন, মাহবুবুর রহমান হিরণ, আব্দুস সাত্তার মাসুদ, আতাউর রহমান, বেলাল হোসাইন, এনায়েত কবির চঞ্চল, আবুল বাশার, মোহাম্মদ আলী খোকন, আনোয়ারুল ইসলাম, এ বি এম আমজাদ হোসেন, শাহজাহান ভূইয়া মাখন, নিখিল গুহ, মোতাহার হোসেন সাজু ও ডা. মোখলেছুজ্জামান হিরু। তাঁদের মধ্যে এনায়েত কবির চঞ্চল মারা গেছেন। বাকিদের মধ্যে শেখ মারুফ, শহীদ সেরনিয়াবাত, মুজিবুর রহমান চৌধুরী, ফারুক হোসেন এত দিন চেয়ারম্যান পদ পেতে তত্পর ছিলেন। কিন্তু গতকাল সোমবার বয়সসীমা ৫৫ বছর নির্ধারিত হওয়ায় তাঁরা সবাই বাদ পড়ে গেছেন।
যুবলীগের সূত্রগুলো জানায়, প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে আতাউর রহমান, বেলাল হোসাইন, আনোয়ারুল ইসলাম, মোতাহার হোসেন সাজুর বয়স ৫৫ বছরের মধ্যে। এই চারজনের মধ্যে আতাউর রহমান সাধারণ সম্পাদক ও বাকি তিনজন চেয়ারম্যান পদপ্রত্যাশী।
বেলাল হোসাইন দীর্ঘদিন ধরেই যুবলীগের কেন্দ্রীয় দায়িত্বে আছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও ছিলেন। সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হিসেবে বিভাগের নেতাকর্মীদের কাছে বিশেষ জনপ্রিয়তাও রয়েছে তাঁর।
আনোয়ারুল ইসলামও যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা উঠে এসেছেন তৃণমূল থেকে। শিক্ষিত ও বিনয়ী হিসেবে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও তাঁর সুনাম রয়েছে।
মোতাহার হোসেন সাজু এক/এগারোর সময়ে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগের পক্ষে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। বর্তমানে তিনি পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক। ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা এর আগে যুবলীগের সহ-আইন সম্পাদক ছিলেন।
যুবলীগের কমিটির পাঁচ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেন—মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, মঞ্জুর আলম শাহীন, মামুনুর রশীদ, সুব্রত পাল ও নাসরিন জাহান চৌধুরী শেফালী। তাঁদের মধ্যে মহি ও সুব্রত পাল ছাড়া বাকিরা স্থায়ীভাবে বিদেশে রয়েছেন। বয়স ৫৫ বছরের মধ্যে থাকা মহি ও সুব্রত উভয়েই সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী।
সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে এস এম জাহিদ ও আমীর হোসেন গাজীর বয়স ৫৫ বছর পার হয়ে গেছে। অন্যরা হলেন—মুহা. বদিউল আলম, ফজলুল হক আতিক, আবু আহমেদ নাসিম পাভেল, আসাদুল হক, ফারুক হাসান তুহিন, এমরান হোসেন খান ও আজহার উদ্দিন। তাঁদের মধ্যে আবু পাভেল ও তুহিন সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন।
সম্পাদকদের মধ্যে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সাজ্জাদ হায়দার লিটন সাধারণ সম্পাদক হতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কাউন্সিলের প্রধান উপদেষ্টা। সাবেক এই ছাত্রনেতা অতিরিক্ত সচিব মর্যাদায় বাংলাদেশ ডেইরি কাউন্সিলের সদস্য হিসেবেও কাজ করছেন। এ ছাড়া অর্থবিষয়ক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী। এ ছাড়া সম্পাদকমণ্ডলীর নেতাদের মধ্যে পাঁচ/সাতজন ছাড়া বেশির ভাগের বয়স পেরিয়ে যাওয়ায় তাঁরা আগামী কমিটিতে থাকতে পারছেন না।