যশোর বোর্ডের আবর্জনার স্তুপ এখন ফুলবাগান

যশোর প্রতিনিধি |

যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডকে সবার দৃষ্টি নন্দন করতে সম্মুখে ফুলের বাগান করা হয়েছে। ময়লা-আবর্জনার স্তুপ পরিস্কার করে লাগানো হচ্ছে হরেক রকমের গাছ। মাদক সেবীদের আড্ডাও উচ্ছেদ করা হয়েছে। শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেনের এ সাহসী উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বোর্ড কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা।

জানা গেছে, যশোর শিক্ষাবোর্ডের প্রবেশপথের পূর্ব-পশ্চিমের বিশাল অংশ জুড়ে দীর্ঘ কয়েকযুগ ধরে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ করে রাখা ছিল। ওই অংশটি দখল করে অনেকে ইট, বালি, খোয়ার ব্যবসা করতেন। মেইন রাস্তার সাথে হওয়ায় বাস মালিক সমিতি ওখানে বাস রাখতেন। পূর্বের বোর্ড চেয়ারম্যানরা কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় ওই জায়গার সাথে মেইন রাস্তার একটি অংশ ছোট ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গিয়ে ছিল। তবে, ওখানে শিক্ষাবোর্ডের মেহগনি গাছ ও অস্থায়ী ড্রেন থাকার কারণে দখলদাররা স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করতে পারেনি।

সন্ধ্যা হলেই ওখানে নিয়মিত মাদকের আঁকড়া বসত। পুলিশ একাধিকবার অভিযান চালিয়ে মাদকসেবীদের আটক করেছে। বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন যোগদান করার সাত মাসের মধ্যেই এসব অবৈধ ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়টি ফুল বাগান করেছেন। 

গত ১৫ আগস্ট সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদত বার্ষিকীর দিন আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল শেষে ওইখানে ফুল গাছসহ হরেক রকমের বৃক্ষরোপণের উদ্বোধন করা হয়। তারপর থেকে ওইখানে গন্ধরাজ, জুঁই, নীলকণ্ঠ, মাধবীলতা, বেলি, গটর, পাতাবাহার, জবা, ঝাউ, কাগজি লেবুসহ কয়েক শত সৌন্দর্য বর্ধনকারী গাছ লাগানো হয়েছে। এলাকার সৌন্দর্য বাড়াতে আশপাশের রাস্তার পাশেও এসব বাহারি ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। 

শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষাবোর্ডের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য সম্মুখভাবে ফুলের গাছ লাগানো হচ্ছে। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর স্মরণে ফুল গাছসহ হরেক রকমের বৃক্ষরোপণের মাধ্যমের ফুল বাগানের যাত্রা শুরু করা হয়েছে। কয়েক শত ফুল গাছ ইতিমধ্যে লাগানো হয়েছে। পরিচর্যার জন্য বাঁশ দিয়ে ঘেরা হয়েছে। এলাকার সৌন্দর্য বাড়াতে রাস্তার আইল্যান্ডের উপরও ফুল গাছ লাগানো হয়েছে। এখানে প্রচুর ছোট ছোট মেহগনি গাছ ছিল। দখলদাররা এসব গাছ কেটে স্থাপনা নির্মাণ করার চেষ্টা চালাচ্ছিল। আমি নিজে উপস্থিত থেকে তাদের উচ্ছেদ করেছি। ওইসব মাদকসেবীরা কর্মচারীদের সামনে আমার উদ্দেশ্যে হুমকি-ধামকি ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। ভাল কাজ করতে আমি কোন ভয় পাই না। বোর্ডের স্বার্থে আমি কারো সাথে কখনো আপোষ করবো না। দুষ্কৃতকারীদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না।

কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি কামাল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, চেয়ারম্যান স্যার রাস্তার সামনে ফুল বাগান করে বোর্ড অফিসসহ এলাকার পরিবেশ ভাল করেছেন। স্যারকে এ উদ্যোগ নেয়ার জন্য অভিনন্দন।

কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, কয়েক যুগ ধরে বোর্ড অফিসের জায়গাসহ মেইন রাস্তার একটি অংশ দখলদার হাতে ছিল। ছোট ছোট দোকানগুলো নেশার আঁখড়া ছিল। নেশাকে কেন্দ্র করে এখানে মার্ডার পর্যন্ত হয়েছে। ফুলের বাগান হওয়ায় এখানে নেশার আঁখড়া ধ্বংস হয়ে গেছে। পরিবেশও ভাল হয়েছে। এ জন্য চেয়ারম্যান স্যারকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন।

শিক্ষাবোর্ড কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আল হাবিব বাপি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ওইখানে একটি চায়ের দোকানে বসে গাঁজার নেশা হত। নিয়মিত পুলিশ টহল দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যেত না। অপরাধের মাত্রা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছিল। চেয়ারম্যান স্যারের ফুলের বাগান করার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। 

নওয়াপাড়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, চেয়ারম্যান স্যার একজন রুচিশীল মানুষ। তার কাজের মাধ্যমে সেটা প্রমাণিত হচ্ছে। কয়েক যুগের ময়লার স্তুপকেও তিনি ছয় মাসের মধ্যেই ফুলের বাগান করেছেন। এটা অবশ্যই নন্দিত উদ্যোগ। 
ঝিকরগাছা গঙ্গানন্দপুর কলেজের অধ্যক্ষ জয়ন্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, যশোর শিক্ষাবোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান অত্যন্ত একজন দক্ষ ও বিচক্ষণ কর্মকর্তা। তাই এলাকার পরিবেশ ভাল করতে তিনি অফিসের সামনে থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করে ফুল বাগান করেছেন। স্যারের তাই সাধুবাদ জানাই।

ডা. আব্দুর রাজ্জাক কলেজের অধ্যক্ষ জে এম ইকবাল হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, চেয়ারম্যান নিজে একজন পরিচ্ছন্ন মানুষ। অফিসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে তিনি এটা করেছেন। স্যারকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ।

নতুনহাট পাবলিক কলেজের অধ্যক্ষ মোয়াজ্জেম হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, চেয়ারম্যান একজন বড় মনের মানুষ। তিনি নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন সহ্য করতে পারেন না। তাই অল্প সময়ের মধ্যে কয়েক যুগের ভাগাড় ফুলের বাগানে পরিণত করেছেন। স্যার অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054590702056885