একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ওরফে দেইল্যা রাজাকারের মুক্তি চেয়েছেন এমপিওভুক্ত জামাতপন্থী শিক্ষকরা। আলেম মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম ফোরাম এ দাবির তীব্র বিরোধিতা করেছে। সংগঠনটির নেতাদের দাবি, যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত আসামির মুক্তি দাবি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা করছে জামাতে ইসলাম ও সংশ্লিষ্টরা। শনিবার (২৮ মার্চ) এ দাবি জানিয়ে দৈনিক শিক্ষাডটকমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
আলেম মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম ফোরামের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হোসাইন আহমাদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী যখন ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস, সারাদেশ যখন ব্যস্ত এই মহাবিপদ মোকাবেলায়, ঠিক সেই মুহূর্তে ইসলামদ্রোহী ও আদালতের পর্যবেক্ষণে যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলামি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। জামায়াতের দোসররা এই সংকটময় পরিস্থিতিতে, মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত অপরাধীদের মুক্তির দাবি তুলে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের পাঁয়তারা করছে। একটি স্বাধীন, সার্বভৌম দেশে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তির মুক্তির দাবি তোলা মানে মানবতাবিরোধী অপরাধের সমর্থন দেয়া, যা একটি গুরুতর অপরাধ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘আলেম মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ফোরাম’ ইতোমধ্যে দেশের প্রায় একশজন বরেণ্য আলেমের মতামত সংগ্রহ করেছে। সবাই ঐক্যমত পোষণ করেছেন, এই মুহুর্তে কিছুতেই সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হুসাইন সাঈদীর সাজা স্থগিত করা যাবে না। তাকে মুক্তি দিলে দেশে আবার অরাজকতা সৃষ্টি হবে ও ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট হবে। কাজেই তার সাজা বহাল রাখা হোক। দেশে সংকটময় মুহূর্তে স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী জামায়াত ও তাদের আলেম নামধারী দোসরদের সব ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে সরকারের প্রতি দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। একই সাথে এ দাবির সাথে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার দাবিও জানানো হয়েছে। n
জানা যায়, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয় ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ। ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে স্থানীয় তৃণমূল পর্যায়ের রাজাকারদের বিচার কাজ চলছে। এ ছাড়া তদন্ত কাজ এবং আসামি গ্রেফতারও অব্যাহত রয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত ও প্রসিকিউশন সংস্থার তথ্যমতে, ১০ বছরে ৪১ মামলার রায়ে ট্রাইব্যুনালে ৯৬ যুদ্ধাপরাধীর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডাদেশ (ফাঁসি) হয়েছে ৭০ জনের। আমৃত্যু সাজা হয়েছে ২৫ জনের এবং ২০ বছর সাজা হয়েছে একজনের। সর্বোচ্চ আদালতে মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তির পর সাজা কার্যকর হয়েছে ছয় যুদ্ধাপরাধীর। অন্যদিকে, সর্বোচ্চ আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে আরও ২৯টি আপিল।
এদিকে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত কুখ্যাত সাইদীর মুক্তি দাবি করা শিক্ষকদের চিহ্নিত করে শাস্তি চেয়েছে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণট্রাস্টের সদস্য-সচিব অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু আজ ২৫ মার্চ দৈনিক শিক্ষায় পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এই দাবি করেন।