রংপুর বিভাগের আট জেলায় গত তিন সপ্তাহে ১৫টি ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। এর বেশির ভাগই ঘটেছে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এসব ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেয়েরা কতটা নিরাপদ? ধর্ষণের অভিযোগে চার শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ৭ ফেব্রুয়ারি রংপুর মহানগরীর জলকর এলাকার উষা আইডিয়াল কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলামকে জুতাপেটা করে পুলিশে দেন অভিভাবকরা। শিক্ষকের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা।
একই দিন ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের চাকলারহাটের অরণ্য স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক আঞ্জুনুল হক সরকার মিন্টুর বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়। গত ১ ফেব্রুয়ারি সকালে কুড়িগ্রামের থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জিয়াউর রহমানকে ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় গ্রেফতার করে পুলিশ।
গত ২ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তালতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলামকে ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ৮ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও কামারপাড়ার শিয়ালগাড়া তরফকামাল এলাকার স্কয়ার প্রি-ক্যাডেট কোচিং সেন্টারের পরিচালক বেলজিয়াম মিয়াকে ছাত্রী ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ২৬ জানুয়ারি গাইবান্ধা সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অমিত পার্থ দাসের বিরুদ্ধে পাঁচ ছাত্রী যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ আনে।
গত ৩১ জানুয়ারি দিনাজপুর শহরে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করেন প্রাইভেট শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম। রংপুরের কুতুবপুর ইউনিয়নে গত শনিবার দুপুরে রাজ মোহনের ছেলে রঘু লাল (২৩) পাঁচ বছরের এক মেয়েকে যৌন নির্যাতন করেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে রংপুরের হারাগাছের সারাই ইউনিয়নে ঘরে সিঁধ কেটে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে অপহরণ করে পাশের বাড়িতে নিয়ে যৌন নির্যাতন করা হয়েছে। গত ২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নে এক মেয়েকে ধর্ষণ করেন নিজাম উদ্দিনের ছেলে কাল্টু মামুদ (৫০)।
এছাড়া ৩ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুর শহরে এক মাদরাসাছাত্রী, ২০ জানুয়ারি দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কাটলা ইউনিয়নে তরুণীকে যৌন নির্যাতন করা হয়।
এ বিষয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি আমরা মেয়েদের নিরাপত্তা দিতে না পারি, তবে তা উদ্বেগের বিষয়।’
রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) সাইফুর রহমান সাইফ বলেন, ‘বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। ইদানীং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টারগুলোতে যৌন হয়রানির ঘটনা বেশি ঘটছে। এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক সচেতনতা বাড়ানোর কার্যক্রম হাতে নিয়েছে পুলিশ।’