করোনা সংক্রমণের ভয়ে রোগীশূন্য হতে চলেছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। হাতেগোনা কয়েক জন রোগী থাকলেও তারা ঠিকমতো চিকিৎসা না পেয়ে হতাশ বলে জানা গেছে। অথচ সপ্তাহখানেক আগেও এই হাসপাতালে ছিল রোগীর কোলাহল। শুক্রবার সন্ধ্যায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে এমন ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। হাসপাতালের বাইরে কিছু লোকজন থাকলেও ভেতরে রোগী নেই বললেই চলে।
রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কে সেবাকেন্দ্র ছেড়ে গেছে সবাই। বেশির ভাগ ওয়ার্ডের শয্যাগুলো এখন খালি পড়ে আছে। যে কয়জন রোগী আছেন, তারা নিতান্তই বাধ্য হয়ে সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তারাও জানান, একটু সুস্থ হলেই তারাও বাড়ি চলে যাবেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাতে আসা রফিকুল ইসলাম গোলাপ নামে এক ব্যবসায়ী সাংবাদিকদের বলেন, আমার স্ত্রীর জরুরি ডায়ালাইসিস করা দরকার। কিন্তু দুই দিন ধরে ঘুরে ডায়ালাইসিস করাতে পারছি না। ডাক্তার, নার্স কাউকে ঠিক মতো পাওয়া যাচ্ছে না।
জরুরি বিভাগে থাকা এক রোগীর স্বজন বলেন, তিন দিন ধরে রিপোর্ট দেখানোর জন্য চেষ্টা করছি, কিন্তু ডাক্তার নেই। যারা আছেন, তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। বাইরে যে প্রাইভেট ডাক্তারের কাছে যাব, সেই উপায়ও নেই। বাইরের ডাক্তাররা চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালের জরুরি রোগী ছাড়া ভর্তি নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। হৃদরোগ বিভাগের সিসিইউ আর পিসিসিইউতে রোগী নেই। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা উপকরণ না থাকায় দুশ্চিন্তায় চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনরা। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর অভাবে হাসপাতালে কমে গেছে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের উপস্থিতি।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সানজিদা তরিনা নামে এক ইন্টার্ন চিকিৎসক সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সবেমাত্র পিসিআর মেশিন আনা হয়েছে। এখন দ্রুত করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা যাবে। কিন্তু রোগী ও চিকিৎসকের সুরক্ষার জন্য পিপিইসহ প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই নেই।
চিকিৎসক নাজমা বেগম বলেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) নেই। বাধ্য হয়ে গাউন পরে কাজ করতে হচ্ছে। একটা গাউনই বারবার ব্যবহার করায় এতে ঝুঁকি আছে। তারপরও রোগীদের সেবা দিচ্ছি। এক হাজার শয্যার রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেখানে স্বাভাবিক দিনে রোগী ভর্তি থাকে দেড় থেকে দুই গুণ। সেখানে শয্যার অর্ধেকও রোগী নেই। সুরক্ষার অভাব আর করোনা আতঙ্কে অনেক ওয়ার্ড রোগীশূন্য হয়েছে।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, করোনা পরীক্ষার কিট, পিসিআর মেশিনসহ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের (পিপিই) চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে অধিদপ্তরে। গত বৃহস্পতিবার করোনা শনাক্তকরণে পিসিআর মেশিন আনা হয়েছে। চাহিদাপত্র অনুযায়ী বাকি প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এলে বোঝা যাবে তা আমাদের জন্য পর্যাপ্ত কি না।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও জেলার আট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোতে একই চিত্র বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।