রক্তে অর্জিত ভাষার প্রতি আমরা কতটুকু যত্নশীল?

আসিফ হাসান রাজু |

বাঙালি জাতির রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি। সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান রয়েছে। সেই উপাদানের মধ্যে বলা হয় ভাষা হলো যে-কোনো সংস্কৃতির মৌলিক সত্তা। সেই সত্তাকে অগ্রাহ্য করলে সংস্কৃতির মৌলিক সত্তাকে অস্বীকার করা হয়। পৃথিবীতে আমরা সেই জাতি যারা কিনা ভাষার জন্য নিজেদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে কুণ্ঠাবোধ করিনি। কিন্তু রক্তে অর্জিত সেই ভাষার প্রতি আজ আমরা কতটুকু যত্নশীল? এমন প্রশ্ন আজ হরহামেশা সামনে চলে আসে। মাতৃভাষার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ থেকেই ৫২’র ভাষা আন্দোলনে নিজেদের জীবন উজাড় করে দিয়ে গিয়েছেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা। আর আজ আমরা প্রতিনিয়ত সেই রক্তে অর্জিত ভাষাকে নানাভাবে বিকৃত করে চলেছি। আধুনিক সময়ের তরুণ, শিক্ষিত শ্রেণির মানুষ হিসেবে আমরা অনেক বেশি ভালোলাগা অনুভব করি বাংলাভাষার নিজস্ব বর্ণমালা ব্যবহারের চেয়ে ইংরেজি অক্ষর দিয়ে বাংলা লিখতে। ফলে অনেকের কাছে ইংরেজি ও বাংলার মিশ্রণে তৈরি নতুন ধরনের ভাষা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

আধুনিকতার নামে নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলাভাষার ব্যবহার, প্রয়োগ এবং উচ্চারণে ভিন্ন ভাষার মিশ্রণ ও শব্দের বিকৃত উপস্থাপন প্রবণতা আজ প্রকটভাবে দেখা যাচ্ছে। আর এই মিশ্রিত ভাষাকে অনেকে বলছে এফএম ভাষা, কেউ বলছে শটকার্ট আবার কেউ বাংলিশ বলে সম্বোধন করছে’। বাংলা গানের পরিবর্তে আজ আমাদের সমাজে অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হিন্দি গান। যেকোনো অনুষ্ঠান, আড্ডা সকল জায়গাতে এখন হিন্দি জনপ্রিয়। আমাদের শিশু, কিশোর-কিশোরীদের কাছেও অনেক বেশি জনপ্রিয় এই হিন্দি ভাষার বিভিন্ন কার্টুন। ফলে একজন শিশু জন্ম থেকেই বেড়ে উঠছে হিন্দিকে ধারণ করে। বর্তমান সময়ে মানুষের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হলো টেলিভিশন। সেই টেলিভিশনের অধিকাংশ চ্যানেলগুলো হিন্দি ভাষার। ফলে বেড়ে উঠার সঙ্গে সঙ্গে একজন শিশু নিজ ভাষার চেয়ে হিন্দি ভাষা দ্বারা এখন অতিমাত্রায় প্রভাবিত। এভাবে চলতে থাকলে রক্তে অর্জিত এই বাংলাভাষা ক্রমেই তার নিজস্ব স্বকীয়তা হারাবে। এছাড়া নিকট ভবিষ্যতে বাংলা ভাষার মৌলিকতা ও অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এক্ষেত্রে আনিসুজ্জামানের কথা প্রণিধানযোগ্য—এভাবে যদি ভাষার বিকৃতি চলতে থাকে তাহলে ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে এটা বিশ্বাস করানো কষ্ট হবে যে, বাংলাভাষায় রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল সাহিত্যচর্চা করেছেন, তখন দেখা যাবে মৌলিক ভাষাকে বাংলাদেশের ভাষা না বলে পশ্চিমবঙ্গের ভাষা বলে বিবেচনা করা হবে।’ তাই মাতৃভাষার এ বিকৃতি রোধে এখনি শিক্ষক সমাজের যথেষ্ট উদ্যোগী হওয়া দরকার। অপসংস্কৃতি ও বিকৃত ভাষা যাতে প্রভাব না ফেলে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। একইসঙ্গে বাংলা একাডেমিরও যথেষ্ট সক্রিয় হওয়া দরকার।

 

লেখক: শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029199123382568