সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিতর্কিত নাম সেফাতুল্লাহ ওরফে সেফুদা। এবার তার নাম ব্যবহার করা হয়েছে সরাসরি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের প্রশ্নপত্রে। বিষয়টি নিয়ে জোর সমালোচনা শুরু হয়েছে।
অন্তর্জালে ছড়িয়ে পড়া এক ছবিতে দেখা গেছে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের দশম শ্রেণির প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষায় সৃজনশীল ধাঁচে করা ওই প্রশ্নের উদ্দীপক অংশে সেফাতুল্লাহর নাম ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা বলে মন্তব্য করেছে কলেজটির কর্তৃপক্ষ।
প্রশ্নটির উদ্দীপক অংশে লেখা হয়েছে, “অদ্ভুত এক ধরণের মানুষ, সেফাতুল্লাহ সেফুদা। সোশ্যাল মিডিয়ায় সে বিভিন্ন কুরূচিপূর্ণ মন্তব্য করে। তরুণদের উদ্দেশ্যে সে বলে, ‘মদ খাবি, মানুষ হবি, আমি আরো এক গ্লাস খাইলাম’। তার কথার প্রতিবাদ করে একজন বিজ্ঞ আলেম বললেন, ‘তার মধ্যে যদি ইমানের সর্ব প্রথম এবং সর্বপ্রধান বিষয়ের প্রভাব পরিলক্ষিত হত, তাহলে সে হয়ে উঠত একজন আত্মসচেতন এবং আত্নমর্যাদাবান ব্যক্তি’।”
নিয়ম অনুযায়ী উদ্দীপকের আলোকে জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতামূলক চারটি প্রশ্ন করতে হয়। সেখানে লেখা প্রশ্নগুলো হলো- আকাইদ কী?, ইসলামের নাম ইসলাম রাখা হয়েছে কেন?, বিজ্ঞ আলেমের বক্তব্যে যে বিষয়টি ফুটে উঠেছে, তা আমাদের জীবনে কী প্রভাব ফেলতে পারে তা ব্যাখ্যা করো এবং তরুণদের উদ্দেশে দেওয়া সেফুদার বক্তব্যটি কিসের শামিল? এর ফলাফল বিশ্লেষণ করো।
তবে প্রশ্নপত্রে সেফাতুল্লাহর নাম ব্যবহার করাকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শওকত আলম। তিনি বলেন, এটি একটি দুর্ঘটনা। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সেফাতুল্লাহ অস্ট্রিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি। তার পুরো নাম সিফাত উল্লাহ মজুমদার।
কে এই সেফাতউল্লাহ?
সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি নানা ধরনের অশ্লীল, অসঙ্গতিপূর্ণ ভিডিওবার্তা ছড়িয়ে বেশ আলোচনায় ছিলেন সিফাত উল্লাহ ওরফে সেফুদা নামে এই প্রবাসী বাংলাদেশি। নানা বিষয় নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে অল্প সময়ে 'তারকা' বনে যান সেফুদা। প্রথমের দিকে সেফুদা নামটি তার নামের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। তখন তার ফেসবুক লাইভ দেখার মতো মানুষও ছিল না।
সেই সময় শুধু সিফাতউল্লাহ নামেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিত ছিলেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের এক ক্রিকেটারের সাথে এক তরুণীর ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় সিফাত উল্লাহ ফেসবুকে একটি লাইভ করেন। তখন থেকেই মূলত তার লাইভে দর্শক বাড়তে থাকে।
বর্তমানে অস্ট্রিয়া প্রবাসী এ বাংলাদেশির এমন আচরণে অনেকটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে তার পরিবার। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তিনি অস্ট্রিয়ার রাজধানীর ভিয়েনায় বসবাস করছেন।
অল্প সময়ে ফেসবুক তারকা বনে যাওয়া এ সেফুদা মূলত মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। তার এমন কর্মকাণ্ডে পরিবারসহ আত্মীয়-স্বজন খুবই লজ্জিত বলেন তার স্ত্রী। জানা যায় তার পুরো নাম সেফাতউল্লাহ মজুমদার। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন l
ভিয়েনা বাঙালি কমিউনিটির পরিচিত মুখ ও প্রবাসী সাংবাদিক ফিরোজ আহমেদ জানান, ভিয়েনা বাংলাদেশ কমিউনিটির এক পারিবারিক ঝগড়ার কারণে কোর্টের রায়ে দীর্ঘদিন ভিয়েনায় জেল খাটেন সেফাতউল্লাহ। মুক্ত হবার পর অস্ট্রিয়ার আইন অনুযায়ী তার লিগ্যাল হবার সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে। স্ত্রী সন্তানদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তিনি। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। পরবর্তীকালে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েন সেফাতউল্লাহ।
সম্প্রতি ইসলাম ধর্ম এবং পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার দায়ে সেফুদার বিরুদ্ধে অস্ট্রিয়ায় এবং ঢাকায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুইটি পৃথক মামলাও হয়েছে।