রাতের আঁধারে সমাপনীর খাতায় উত্তর লিখলেন শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষক

সাখাওয়াত হোসেন সাখা, রৌমারী (কুড়িগ্রাম) |

রাতের আঁধারে ৭ জন প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার্থীর খাতায় নতুন করে উত্তর লেখার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী এবং দুই বিদ্যালয়ের দুই প্রধান শিক্ষক। রাতের আঁধারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কক্ষে ঢুকে তারা এ কাজ করেন বলে জানা যায়। অবশ্য গোপনে পরীক্ষার খাতায় পুনরায় লিখে দিতে কেউ না দেখেলেও ৭ পরীক্ষার্থীর খাতায় একই হাতের লেখা হওয়ায় পরীক্ষকের সন্দেহ হয়। পরে তদন্তে বিষয়টি ধরা পড়ে। 

পরীক্ষকের সন্দেহ হলে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন। সাথে সাথে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী (পিয়ন) সাদ্দাম হোসেনকে ডেকে নেন ইউএনও দীপঙ্কর রায়। পরে পিয়ন সাদ্দামের কাছ থেকে পিইসিই পরীক্ষার খাতার বিষয়ে জানতে চেষ্টা করেন তিনি। সাদ্দামের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্ত হন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাহেদুল ইসলাম।

পরে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাহেদুলকে ডেকে বিস্তারিত তথ্য পান ইউএনও। ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরও নাম উঠে আসে। তারা হলেন উপজেলার গোয়াল গ্রাম এলাকার সাক্সেস মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু মুসা ও সৃজন শিক্ষা মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু শাহিন। এই দুই প্রতিষ্ঠানের ৭ জন পরীক্ষার্থীকে উপস্থিত হওয়ার জন্য চিঠি দেন ইউএনও। 

শুক্রবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা অফির্সাস ক্লাবে ওই অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তাসহ চারজন হাজির হন। 

চলতি বছরের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ১৮ নভেম্বর শুরু হয়ে শেষ হয় ২৬ নভেম্বর। খাতা মূল্যায়নের কাজ চলাকালে গত সপ্তাহে  উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে ওই ৭ জন পরীক্ষার্থীর খাতায় নতুন করে লিখে দেন দুই স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা। এই স্কুল দুটি মূলত কিন্ডারগার্টেন। কিন্তু এমনভাবে নামকরণ করা হয়েছে যে, বোঝার উপায় নেই। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক শিক্ষক দৈনিকশিক্ষাকে জানান, সৃজন মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন ও সাকসেস মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু মুছা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাহেদুল ইসলামকে ১ লাখ টাকা ঘুষ দেন। বিনিময়ে ওই ৭ পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র সরিয়ে বাইরের অন্য হাতের লেখা উত্তরপত্র ঢুকিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু গোপনে বাইরের লেখা উত্তরপত্র ঢোকাতে গিয়ে এক বিষয়ের উত্তরপত্র অন্য বিষয়ের প্যাকেটে চলে যায়।

যে বিষয়ে ৭ পরীক্ষার্থীদের খাতা দেখার পর একই হাতের লেখার অভিযোগ ওঠে তাদের মধ্যে সাক্সেস মডেল স্কুলের ২ জন পরীক্ষার্থীর রোল নং ৩৫৫৬ ও ৩৫৫৭ এবং সৃজন শিক্ষা মডেল স্কুলের ৫ জন পরীক্ষার্থীর রোল যথাক্রমে ৩৬০৬, ৩৬২৯, ৩৬৩১, ৩৬৩৪ ও ৩৬৪০। এই ৭ পরীক্ষার্থী কলাবাড়ী বিবিসি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পিইসিই পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরে তাদের ওই প্রশ্নে ওই ৭ জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয়া হয়। ওই ৭ জন পরীক্ষার্থীর খাতা দেখা পর হাতের লেখা এবং উত্তরগুলো পুরো গরমিল হয়। পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলে অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তাসহ চারজনকে থানায় সোর্পদ করা হয়। 

জানতে চাইলে রৌমারীর ইউএনও দীপঙ্কর রায় দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িত শিক্ষা কর্মকর্তাসহ চার জনকে থানায় সোর্পদ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

শিক্ষা কর্মকর্তাসহ চার জন গ্রেফতার হওয়ার বিষয় সত্যতা স্বীকার করেন রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম।

এই খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন ও শিক্ষার্থীরা ঘটনার বিচার দাবি করেন। এ বিষয়ে টেলিফোনে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম কোনও মন্তব্য করেননি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026919841766357