মাত্র দুই বছরের মধ্যে অকেজো হয়ে গেছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের একমাত্র সিটিস্ক্যান মেশিনটি। প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৭ খিষ্টাব্দে বসানো হয় অত্যাধুনিক এই মেশিন। ২০১৯ খিষ্টাব্দ পার করার আগেই সেটি একেবারে অকেজো ঘোষণা করে এখন পরিকল্পনা চলছে নতুন মেশিন বসানোর। চার মাস ধরে মেশনটি বিকল থাকায় রোগীরা বাধ্য হচ্ছে হাসপাতালের বাইরে গিয়ে সিটিস্ক্যান করাতে।
এদিকে হাসপাতালের সিটিস্ক্যান মেশিনটি অকেজো হওয়ার সুযোগে এক শ্রেণির দালাল রোগীদের প্রায় জিম্মি করে নিয়ে যাচ্ছে নিজেদের পছন্দমতো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। এতে রোগীদের যেমন ভোগান্তি বেড়েছে, তেমনি অতিরিক্ত টাকা খরচ হচ্ছে।
রামেক হাসপাতাল সূত্র মতে, সিটিস্ক্যান মেশিনটি ২০১৭ খিষ্টাব্দের মার্চ মাসে স্থাপন করা হয় হাসপাতালের রেডিওলোজি বিভাগে। তখন থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সেখানে সিটিস্ক্যান করা হতো। তবে মাঝে-মধ্যেই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মেশিনটি বন্ধ হয়ে থাকত। আবার মাঝে মাঝে সচল থাকত। এভাবে অনিয়মিত সার্ভিস দিয়ে আসছিল। কিন্তু চার মাস ধরে এটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। আর সচল করা হয়নি। গত ১২ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল এসে মেশিনটিকে একেবারেই অকেজো ঘোষণা করে দিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে নতুন মেশিন সংযোজনের প্রক্রিয়া গ্রহণের কথা দিয়ে গেছে।
রামেক হাসপাতালের রেডিয়েশন কন্ট্রোল অফিসার তরুণ কুমার ধর বলেন, ‘মেশিনটি ফিলিপস কম্পানি থেকে আমাদের সরবরাহ করা হয়েছিল। তবে কোন ঠিকাদার কাজটি পেয়েছিলেন বলতে পারব না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলতে পারবে।’
হাসপাতালে সিটিস্ক্যান করতে আসা সোহেলি খাতুন বলেন, ‘আমি শিবগঞ্জ থেকে এসেছি মাথার সমস্যা নিয়ে। ডাক্তার সিটিস্ক্যান করাতে বললেন। এরপর বহির্বিভাগ থেকে বের হতেই কয়েকজন লোক আমার কাছ থেকে ডাক্তারের দেওয়া প্রেসক্রিপশনটি নিয়ে নিল। তারা জানাল, হাসপাতালের নষ্ট মেশিনে কাজ হবে না, বাইরে গিয়ে সিটিস্ক্যান করাতে হবে। কম টাকায় বাইরে করানো যাবে। এরপর বাইরের একটা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে সিটিস্ক্যান করিয়ে চার হাজার টাকা নিল তারা। আবার সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য আরো ২০০ টাকা কমিশন দিতে হলো।’
আরেক ভুক্তভোগী সীমা দাস বলেন, ‘মেডিক্যাল (রামেক হাসপাতাল) থেকে বের হতেই কয়েকজন লোক এসে বলল, তাদের ভালো মেশিন আছে। সেখানে নিয়ে গিয়ে পাঁচ হাজার টাকা আদায় করে তারা। কিন্তু হাসপাতালে করলে দুই হাজার টাকাতেই হয়ে যেত।’
হাসপাতালে আসা মনির হোসেন বলেন, ‘দিনমজুরের কাজ করি। প্রতিদিনের আয় দিয়েই সংসার চলে। হাসপাতালে সিটিস্ক্যান করাতে খরচ হয় দুই হাজার টাকা। কিন্তু বাইরে করাতে গেলে গুনতে হচ্ছে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এত টাকা এখন কোথায় পাব?’ এক রোগীর স্ত্রী পারভিন বানু বলেন, ‘আমার স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাত পেয়েছে। এখন সিটিস্ক্যান করা লাগবে। কিন্তু রাজশাহী মেডিক্যালে এই সুযোগ আমরা পাচ্ছি না। এত বড় মেডিক্যালে কিভাবে মেশিন নষ্ট থাকে? আমরা বাইরে গিয়ে সিটিস্ক্যান করাতে এত টাকা কোথায় পাব?’
হাসপাতালের উপপরিচালক সাইদুল ফেরদৌস মো. খায়রুল আলম বলেন, ‘সিটিস্ক্যান মেশিনটি একেবারেই নষ্ট হওয়ায় রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এবং বাইরে অতিরিক্ত অর্থও গুনতে হচ্ছে। এখন নতুন মেশিন বসানোর পরিকল্পনা চলছে। আশা করি, দ্রুতই এটি স্থাপন করা হবে। নতুন মেশিন বসলে সমস্যার সমাধান অনেকটাই হবে।’