রায়পুরে গাইড বই কিনতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীরা!

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি |

সরকারিভাবে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ হলেও অবৈধ নোট-গাইড বইয়ের বাণিজ্য থামছেই না। লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে কিছু অসাধু শিক্ষক এসব অবৈধ গাইড বই বাজারজাতের মাধ্যমে বাণিজ্যিক সুবিধা আদায় করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক আর পুস্তক বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট চড়া দামে এসব বই বিক্রি করছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ক্লাসে বুকলিস্ট দিয়ে নির্দিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নোট, গাইড, গ্রামার, ব্যাকরণ বই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছেন তারা। এতে শিক্ষার্থীদের বাড়তি পড়ার চাপেও পড়তে হচ্ছে। অভিভাবকদের ব্যয় করতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। তবে পুস্তক বিক্রেতারা নোট-গাইড বই বিক্রি কিংবা একে ঘিরে বাণিজ্যের কথা অস্বীকার করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে নতুন বছর শুরুর আগেই রায়পুরে কিছু বড় বড় পুস্তক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান উপজেলার মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসা, প্রাইভেট স্কুল এবং স্থানীয় শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে নির্দিষ্ট কিছু প্রকাশনা শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক বই নির্বাচন করে দেওয়ার লক্ষ্যে মোটা অঙ্কের ঘুষ লেনদেন করে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসংখ্যার ওপর নির্ভর করে ওই ঘুষের পরিমাণ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানায়, নোট-গাইড ও অন্যান্য বই চড়া দামে কেনার জন্য শিক্ষার্থীদের হাতে একটি করে বইয়ের তালিকা (বুক লিস্ট) ধরিয়ে দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সরাসরি বিদ্যালয়ের নামে ছাপানো ওই তালিকায় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণির জন্য অন্তত পাঁচ-ছয়টি করে অতিরিক্ত বইয়ের নাম উল্লেখ থাকে। বই বিক্রেতাপ্রতিষ্ঠান বা লাইব্রেরির নামও উল্লেখ থাকে তালিকায়। তালিকাগুলো লাইব্রেরি বা বিক্রেতাপ্রতিষ্ঠান থেকে নিজ খরচে ছাপিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়।

রায়পুর বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির এক ছাত্রীর অভিভাবক জানান, নিষিদ্ধ নিম্নমানের গাইডকে পাঠ্যবই হিসেবে কিনতে বাধ্য করছে স্কুলের শিক্ষকরা। সরকার এসব গাইড এখনই জব্দ করলে আর হয় তো কেউ কিনবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, নিষিদ্ধ এসব গাইড বই ছাত্রছাত্রীর হাতে পৌঁছানোর আগেই প্রশাসনের উচিত জব্দ করা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যরা লাইব্রেরির কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিম্নমানের গাইডকে পাঠ্যবই হিসেবে শিক্ষার্থীদের কিনতে বাধ্য করছেন।

রায়পুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ কামাল হোসেন বলেন, গাইড বই বিক্রি নিষিদ্ধ। যদি কোনো শিক্ষক এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকেন তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিষিদ্ধ গাইড ও সহায়ক বই পাঠ্যভুক্ত করার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিল্পী রানী রায় বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ তিনি পাননি। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054068565368652