রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের বিরুদ্ধে দুটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। আজ সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাইনুল ইসলাম এই আদেশ দেন।
নথি থেকে জানা গেছে, রাজধানীর কারওয়ানবাজারে রড, ইট, সিমেন্টের ব্যবসায়ী মেসার্স মাসুদ এন্টারপ্রাইজের মালিক সাইফুল্লাহ মাসুদ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন। তাঁর কাছ থেকে ২০১৮ থেকে ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সাহেদ দুই কোটি ৫৮ লাখ ৩০ হাজার ৫৫ টাকার রড, সিমেন্ট, ইট ক্রয় করেন। তিনি কিছু টাকা পরিশোধ করলেও অনেক টাকা বাকি থাকে।
পরবর্তী সময়ে একইভাবে এক কোটি টাকার রড, ইট, সিমেন্ট নেন সাহেদ। এই এক কোটি টাকার জন্য সাহেদ চারটি ব্যাংক চেক দেন। কিন্তু চারটি চেক ব্যাংক প্রত্যাখ্যান করে। তারপর সাইফুল্লাহ মাসুদ টাকা চান। কিন্তু সাহেদ টাকা দেননি। বরং ভয়ভীতি দেখান ও হত্যার হুমকি দেন।
এ নিয়ে গত বছরের ৩ মার্চ মাসুদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ জানান। পরবর্তী সময়ে এ ব্যাপারে চলতি বছরের ৮ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সাইফুল্লাহ মাসুদ। কিন্তু এতেও কোনো কাজ হয়নি। তারপর থেকে এ পর্যন্ত সাহেদ আর কোনো টাকা পরিশোধ করেননি।
আরও পড়ুন : রিজেন্টের সাহেদ যে কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
রিজেন্ট হাসপাতালকাণ্ডে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজিকে শোকজ
রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলা : র্যাব
রিজেন্টের হেড অফিসসহ দুই হাসাপাতাল সিলগালা
আজ বিচারক বাদী মাসুদের জবানবন্দি নিয়ে আদালত সাহেদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী দিন রেখেছেন আদালত।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে গত কয়েকদিনের সবচেয়ে আলোচিত ব্যাক্তি এই সাহেদ করিম। ইতোমধ্যে সাহেদের বিরুদ্ধে আরও ২০ মামলার খোঁজ পেয়েছে র্যাব। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে পাওয়া গিয়েছে মোট ৫৬টি মামলা। শনিবার (১১ জুলাই) উত্তরা পশ্চিম থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাসপাতাল ও প্রধান কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে সাহেদের পাসপোর্ট জব্দ করে। পুলিশ জানিয়েছে, মামলার তদন্তের স্বার্থে এই হাসপাতাল ও প্রধান কার্যালয় থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে অভিযানের সময় কম্পিউটারে থাকা বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নষ্ট করে ফেলে রিজেন্ট কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে প্রথম বেসরকারি হাসপাতাল হিসেবে এই রোগের চিকিৎসা দিতে এগিয়ে আসে রিজেন্ট হাসপাতাল। তবে তাদের পরীক্ষা না করেই করোনাভাইরাসের ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়ার প্রমাণ পেয়ে ৭ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা শাখায় অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয় র্যাব। সিলগালা করে রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ও। এরপর দিন ৮ জুলাই চুক্তি ভঙ্গ করে করোনা রোগীদের থেকে বিল আদায়, ভুয়া প্রতিবেদন তৈরিসহ নানা অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর শাখাটিও সিলগালা করে দেয় র্যাব। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম জানান, চেয়ারম্যান সাহেদ নিজেই এসব ডিল করতেন। অপকর্মগুলো রিজেন্ট গ্রুপের হেড অফিস থেকে সম্পাদিত হতো।
হাসপাতালদুটো থেকে এ পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি করোনা পরীক্ষার সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে। তারা আইইডিসিআর, আইটিএইচ ও নিপসম থেকে ৪ হাজার ২০০ রোগীর বিনা মূল্যে নমুনা পরীক্ষা করিয়ে এনেছে। পাশাপাশি নমুনা পরীক্ষা না করেই আরও তিন গুণ লোকের ভুয়া করোনা রিপোর্ট তৈরি করেছে। সরোয়ার আলম আরও বলেন, প্রতি পরীক্ষার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৩ হাজার ৫০০ করে টাকা নিয়েছে। এর মানে হলো তারা এ পর্যন্ত প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। যদিও হাসপাতালটির সঙ্গে সরকারের চুক্তি ছিল ভর্তি রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেবে।
এরপর রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদসহ সংশ্লিষ্ট সব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ঘটনায় চেয়ারম্যানসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে র্যা ব। ওই মামলায় রিজেন্ট হাসপাতালের নয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রেফতার হলেও মালিক মোহাম্মদ সাহেদসহ তার কয়েকজন সহযোগী ধরাছোঁয়ার বাইরেই আছেন।