বরগুনার বহুল আলোচিত শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় আজ। আর এ রায়কে কেন্দ্র করে আদালতপাড়ায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
সবার নজর এখন আদালতের দিকে। তবে মানুষ বেশি কৌতূহলী মিন্নিকে নিয়ে। মিন্নি দোষী না নির্দোষ তার প্রমাণ হবে আজকের রায়ের মধ্য দিয়ে। ১৬ সেপ্টেম্বর আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে জেলা আইনজীবী সমিতির সম্পাদকের হেফাজতে দেন জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান। আজ মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হবে।
গত বছর ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনের সড়কে নয়ন বন্ড ও তার বন্ধুরা রিফাত শরীফকে ধারালো চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে বরগুনা থানায় মামলা করেন।
মামলায় ১২ জনকে আসামি করা হয়। আর প্রধান আসামি করা হয় নয়ন বন্ডকে। ৬ জুলাই বাদী মামলায় মিন্নিকে আসামি করার জন্য বরগুনা থানায় আবেদন করেন। ১৬ জুলাই আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি গ্রেফতার হয়। ১৯ জুলাই মিন্নি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। মিন্নিকে বরগুনা জেলা জজ ৩০ জুলাই জামিন নামঞ্জুর করলে সেই আদেশের বিরুদ্ধে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে হাইকোর্ট ২৯ আগস্ট জামিন দেয়।
রাষ্ট্রপক্ষ মিন্নির জামিন বাতিল চেয়ে সুপ্রিমকোর্টের চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করে। চেম্বার জজ ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। সে থেকে মিন্নি জামিনে আছে।
তদন্ত কর্মকর্তা ১ সেপ্টেম্বর দুই খণ্ডে ২৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বরগুনা সদর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক আসামি ১০ জন। তারা হল রাকিবুল হাসান রিফাত শরীফ, আল কাইয়ুম রাব্বি আকন, রেজোয়ানুল ইসলাম টিকটক হৃদয়, হাসান, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, সাগর, আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি, কামরুল হাসান সায়মুন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত ও মুছা।
১৬ সেপ্টেম্বর প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক, যুক্তিতর্ক খণ্ডন ও উচ্চ আদালতের আইন আদালতে উপস্থাপন শেষ হওয়ার পর এ রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করেন বিচারক। আদালত সূত্র জানায়, মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৭৬ সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস মিন্নি আদালতের রায়ে বেকসুর খালাস পাবে। মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফকে সেদিন রক্ষা করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছে।
শুধু তাই নয়, আহত রিফাত শরীফকে রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়। অথচ তদন্ত কর্মকর্তা সেই ভিডিও জব্দ করেনি। রাষ্ট্রপক্ষ গত বছর পহেলা জানুয়ারি মিন্নির বিরুদ্ধে জামিন বাতিলের আবেদন করে। আদালত বরগুনা থানাকে সেই আবেদনটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়।
বরগুনা থানার পুলিশ পরিদর্শক সরজিৎ সরকার ৯ ফেব্রুয়ারি মিন্নির বিপক্ষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তারপরও আদালত মিন্নির জামিন বহাল রেখেছে। মিন্নিকে আমার হেফাজতে দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বরগুনার পাবলিক প্রসিকিউটর ভুবন চন্দ্র হাওলাদার বলেন, আদালতে ৭৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। সবাই বাদীর মামলা সমর্থন করে সাক্ষ্য দিয়েছে। আমরা আদালতে আসামিদের ফাঁসি দাবি করেছি। আমাদের বিশ্বাস অধিকাংশ আসামির ফাঁসি হবে।
রিফাত হত্যা মামলায় ২৪ জনকে আসামি করে দুটি ভাগে চার্জশিট দেন তদন্ত কর্মকর্তা। এর মধ্যে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক ও ১৪ জন কিশোর।