শিশুশিক্ষা বিষয়ক প্রকল্প ‘ম্যাকগভার্ন-ডেল ইন্টারন্যাশনাল ফুড ফর এডুকেশন অ্যান্ড চাইল্ড নিউট্রেশন প্রোগ্রাম’ এর আওতায়‘রুম টু রিড’ ১০টি শিশুতোষ গল্পের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছে। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এই মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ইউএসডিএ এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি।
প্রকাশিত বইগুলো হলো, ‘বাদল ও মৎস্যকন্যা’, ‘কলি আর ধলির গল্প’, বন বিহঙ্গের কথা’, ‘ভূতের বাড়ি ফেরা’, ‘চাঁদের বুড়ি ও জলপরি’, ‘ডিং ও টিটিং’, ‘টোট-টেং’, ‘তাতাই ও যক্ষবাবু’, ‘ওটা কোথায়’ এবং ‘আলোর খোঁজে সমুদ্রতারা’।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল (এনডিসি)। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি রুম টু রিড খুবই সফলভাবে প্রাথমিক স্তরে শিশুদের পড়ার দক্ষতা ও পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার কাজ করছে। শিক্ষাক্ষেত্রে রুম টু রিড বাংলাদেশসহ বিশ্বে এক অনন্য দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছে। বাংলাদেশে পাঠ্য বইয়ের বাইরে শিশুদের উপযোগী গল্পের বইয়ের অভাব রয়েছে। এক্ষেত্রে রুম টু রিড শিশুদের উপযোগী মানসম্মত বই তৈরি করার মাধ্যমে বাংলাদেশের শিশুদের জন্য সে সুযোগ তৈরি করে চলেছে।
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি সামাজিক অবক্ষয়রোধে শিশুদের মধ্যে পাঠাভ্যাস তৈরি ও উন্নত রুচি-সংস্কৃতি তৈরি করতে রুম টু রিড এর এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক। শিশুদের মধ্যে পাঠের সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার জন্য রুম টু রিডকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সাথে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
রুম টু রিড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ও অনুষ্ঠানের সভাপতি রাখী সরকার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, কক্সবাজার জেলায় প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত মানসম্মত শিক্ষা উপকরণের স্বল্পতা, পাঠাগারে শিক্ষার্থীর উপযোগী বই পড়ার সুযোগের অভাব এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব শিক্ষার্থীর সাক্ষরতা দক্ষতা বৃদ্ধির পেছনে অন্যতম বাধা। এ লক্ষ্যে রুম টু রিড কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার মানসম্মত শিক্ষার উন্নয়ন ও শিশুর পঠন দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ইউএসডিএ ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এর সাথে যৌথভাবে কাজ করছে। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও তার আওতাভুক্ত সকল প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান এই মহতী উদ্যোগে ভূমিকা রাখার জন্য।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব ও প্রোজেক্ট ডিরেক্টর মো. রুহুল আমিন খান, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের যুগ্ম সচিব ও পরিচালক মো. শওকত আলী, এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির হেড অব প্রোগ্রাম রেজাউল করিম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, শিক্ষানুরাগী এবং সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তারা।
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা রুম টু রিড শিশুর মানসম্মত শিক্ষার উন্নয়নে সরকার ও দাতা সংস্থাগুলোর সাথে একযোগে কাজ করছে। সাক্ষরতা কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ১ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৩ লক্ষ শিশুর সাথে সরাসরি কাজ করেছে এবং ৫ হাজার ৭০০ শ্রেণিকক্ষ পাঠাগার স্থাপন করেছে। বর্তমানে ঢাকা, নাটোর ও কক্সবাজার জেলায় মোট ৫৭১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে সরাসরি যুক্ত থেকে শ্রেণিকক্ষে পাঠাগার স্থাপন, শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ প্রকাশনা ও সরবরাহের মাধ্যমে শিশুদের পঠন দক্ষতা ও পড়ার অভ্যাস তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে। কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার নির্বাচিত ১৩৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১১টি মাদরাসায় বাংলা ভাষা শিক্ষা সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে এবং ৮৭৭টি শ্রেণিকক্ষ পাঠাগার স্থাপন করেছে।