রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য পাঠ্যক্রম প্রণয়নের উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা পরিবারের শিশুদের জন্য স্কুলিং বা প্রাথমিক শিক্ষাদানের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার ও ইউনিসেফ।

সম্প্রতি দেশটির সেনাবাহিনী কর্তৃক পৈশাচিক নির্যাতন- অত্যাচারের শিকার হয়ে   উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয় এসব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি।

ইউনিসেফ থেকে পাওয়া তথ্যমতে বাংলাদেশে সম্প্রতি পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিশুর সংখ্যা ২ লাখ ৯০ হাজার। এদের জন্য প্রায় এক হাজার তিনশত অস্থায়ী স্কুল নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে ইউনিসেফ। বর্তমানে ২ শত অস্থায়ী স্কুলে শিশুদের লেখাপড়ার কাজ চলছে। ইউনিসেফের এই উদ্যোগের সাথে আছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত শিশুদের যথার্থ পাঠদানের জন্য পাঠ্যক্রম তৈরি কাজও চলছে। এ লক্ষ্যে গত ২২ অক্টোবর (রোববার) একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। পাঠ্যক্রমে ৪-১৪ বছর বয়সী শিশুদের মানসিক বিকাশ এবং স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী প্রয়োজনীয়তার বিষয়সমূহ বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। ইউনিসেফ বলেছে, রাখাইনে এইসব শিশুরা আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পায়নি।

রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা শিশুরা বেশীর ভাগই পরিবারের কারো না কারো সাথে এসেছে। আবার অনেক শিশু বাবা-মা এমন কি আপন ভাই বোনকে হারিয়ে প্রতিবেশীর সাথে সীমান্ত পার হয়ে এসছে। এই সীমান্ত পার হওয়া এতা সহজ ছিল না। ঝড়-বৃষ্টি ও দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়ার মধ্যে পাহাড়-পর্বত ও খাল-বিল হেটে ও সাতরে পার হয়ে কিংবা নৌকায় করে সাগরে ভেসে শেষ পর্যন্ত যারা বেঁচে গেছে তারাই এপারে বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে পৌঁছেছে।

এরপরের গল্প আবারো এক ভিন্ন সংগ্রামের। টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাস কখনো বা তীব্র রোদ। নিরাপদ আশ্রয় তো দূরে থাক একটু মাথা গোজার ঠাঁই পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে দিনের পর দিন, অনেক কালো রাত। খাদ্য ও ঘুম ওদরে জন্য ছিল প্রায় দুঃস্বপ্ন। এরপর আবার নতুন ভূ-খন্ডে নতুন পরিবেশে অচেনা জায়গায় হারিয়ে যাওয়ার ভয়। ভিন্ন কথায় পাচারকারীদের দৌরাত্ম। অবশেষে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে গড়ে তোলা শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই হয়েছে তাদের।

ইউনিসেফ পরিচালিত এক স্কুলের শিক্ষক শ্যামল দাস বললেন, ওদের চোখেমুখে আতঙ্ক। বিশ্বাস করতে পারে না কাউকে। কারন নিজের চির চেনা জন্মভূমিতে ওরা দেখেছে সেদেশের সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগিদের নিষ্ঠুরতা। ওরা দেখেছে কুপিয়ে বা গুলি করে হত্যা, মৃতদেহ খন্ড খন্ড করে ফেলা, ধর্ষণ, বাড়িঘরে আগুন আর প্রান ভয়ে ছুটে পালানো প্রতিবেশী ও গ্রামবাসি।

“আমরা চেষ্টা করছি সদ্য অতীত ওই নিষ্ঠুরতার ঘটনাগুলো ওরা ভুলে যাক। এখান থেকে ওরা নিজেদের নতুন করে গড়ে তুলুক। কিন্তু তাদেও উপর ঘটে যাওয়া অত্যাচার নির্যাতনের ভয়াবহতা এতোটাই তীব্র ছিল যে, ওইসব মনে করে শিশুরা এখনো আতঁকে ওঠে স্তব্ধ হয়ে যায়। লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে পারে না। অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে।”

ইউনিসেফের তথ্যমতে রোহিঙ্গা শিশুদের বেশীর ভাগই মেয়ে শিশু এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কিশোরী। এরা যৌন নির্যাতন ও পাচারের উচ্চ ঝুকিতে রয়েছে। একমাত্র নিয়মিত পড়ালেখায় ব্যস্ততা তাদেরকে শরণার্থী শিবির কেন্দ্রীক করে রাখতে পারে, নিজেদের জীবন ও নিরাপত্তা সম্পর্কেও সচেতন করে তুলতে পারে।

তবে কিছু দিন আগে বাংলাদেশে আশ্রিত পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের বাংলা পড়ানোর কোন সুযোগ নেই এবং উখিয়ার কুতুপালং-এ নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত ক্যাম্পে বেশ কিছু এনজিও সংস্থা শিক্ষার্থীদের বাংলা পড়ানো হচ্ছে যা বেআইনি বলে মন্তব্য করেছিলেন মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান।

গত ১৫ই অক্টোবর কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্প ও তার আশেপাশের বিভিন্ন মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ পরিদর্শন তিনি এমন্তব্য করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030179023742676