র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়ার কারণ ওয়েবসাইটে তথ্যাদি হালনাগাদ না করা : ড. মাকসুদ কামাল

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

প্রশ্ন : আমাদের প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়টি শতবর্ষে পদার্পণ করতে যাচ্ছে আর মাত্র দু’বছর পর। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র ও শিক্ষক হিসেবে ঢাবির সঙ্গে আপনার সম্পর্ক। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশসেরা প্রতিষ্ঠানটিতে নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি শতবর্ষপূর্তি উদ্যাপনের ক্ষেত্রে আপনি সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিষয়ে আপনার অনুভূতি এবং শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই।

মাকসুদ কামাল : দেশের প্রাচীনতম এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষক হিসেবে আমি ব্যক্তিগতভাবে গৌরবান্বিত। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হলে পূর্ববাংলার মানুষের প্রতিবাদের ফলে এক ধরনের ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ পথপরিক্রমায় এতদঞ্চলের মানুষের শিক্ষাদীক্ষা, আর্থ-সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার এই বিশ্ববিদ্যালয় আজ শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। শতবর্ষকে সামনে রেখে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে বেশকিছু পরিকল্পনা ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষ হাতে নিয়েছে। যেমন- বঙ্গবন্ধু ওভারসিজ স্কলারশিপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পুনরায় চালু করা (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে এই বৃত্তি চালু করেছিলেন, পরবর্তী সময়ে ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দেয়); এই বৃত্তির আওতায় তরুণ শিক্ষকদের high ranking বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে উচ্চতর ডিগ্রির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে, উদ্ভাবন ও গবেষণায় যা পূর্বশর্ত। মানসম্মত গবেষণাগার ও শিক্ষার উপযুক্ত অবকাঠামো গড়ে তোলা, শিক্ষার্থীদের আবাসিক সমস্যা সমাধানকল্পে সরকারের কাছে প্রকল্প বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। অনুষদ থেকে প্রকাশিত জার্নালগুলো আরও আধুনিক ও online ভিত্তিক করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বস্তুত, শতবর্ষকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উন্নয়নের বেঞ্চমার্ক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। একাডেমিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন পরিকল্পনার পাশাপাশি অন্য কার্যক্রমগুলো হল- শতবর্ষ পূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষে একটি ল্যান্ডমার্ক টাওয়ার নির্মাণ করা; অনুষদভিত্তিক সংশ্লিষ্ট জার্নালের শতবর্ষ সংখ্যা (Centenary Volume) প্রকাশ করা; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিষয়ে ‘History of Dhaka University’ এবং ‘The Role of Dhaka University in Making and Shaping Bangladesh’ শীর্ষক দুটি গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

সোমবার (০১ জুলাই) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল যুগান্তরকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানা যায়। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সাইফুল ইসলাম।

প্রশ্ন : ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠার পর জ্ঞান-গবেষণা-উদ্ভাবনে অবদানের জন্য যুক্তরাজ্যের বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তুলনা করে ঢাবিকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে অভিহিত করা হতো। কিন্তু ধীরে ধীরে জ্ঞান-গবেষণায় এর পিছিয়ে পড়ার কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?

মাকসুদ কামাল : বস্তুত প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে Oxford বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের Administrative System এবং আবাসিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কারণে অনেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে অভিহিত করেন। যেমন- ভর্তির সময় সংযুক্ত হল থেকে একজন শিক্ষার্থীর ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে সনদপ্রাপ্তি পর্যন্ত যাবতীয় কার্যক্রম ঙীভড়ৎফ-এর মতো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুসৃত হয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠাকালীনের চেয়ে বর্তমানে স্থাবর সম্পদের পরিমাণ কমে যাওয়া সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতির উচ্চশিক্ষার চাহিদা মেটানোর জন্য ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করে আসছে। ফলে শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা ও শিক্ষা-গবেষণার মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। এতদসত্ত্বেও আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উন্নত জার্নালগুলোতে গবেষণা প্রকাশ করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উল্লেখযোগ্য গবেষণাকর্ম ‘Nature'mn high impact factor জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। আশা করি, এই ধারা আরও বৃদ্ধি পাবে।

প্রশ্ন : ঢাবির রাজনৈতিক অর্জনগুলোও ছিল মূলত ডাকসুকেন্দ্রিক আন্দোলনের ফসল। কিন্তু দীর্ঘদিন ডাকসু নির্বাচন বন্ধ থাকায় জাতীয় নেতা তৈরিতে ভাটা পড়েছে বলে অনেকে মনে করেন। শেষ পর্যন্ত আদালতের নির্দেশনায় ভর করে ডাকসু নির্বাচন হলেও আগের ডাকসুর ভূমিকা কি ফিরে আসবে?

মাকসুদ কামাল : ১১ মার্চ, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচন শুধু আদালতের নির্দেশনার ফসল নয়। বস্তুত, আদালতের নির্দেশনার আগেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডাকসু নির্বাচনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছা, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, ছাত্র সংগঠনগুলোর আন্তরিক সহযোগিতা এবং সর্বোপরি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যাপক অংশগ্রহণের ফলে দীর্ঘদিন পর কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি সত্ত্বেও সফল ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দায়িত্বশীল ও রুচিশীল, দেশপ্রেমিক শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া অনুধাবন ও বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র সংসদের প্রয়োজন রয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা তথা যুগোপযোগী মানবসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ তৈরিতে ছাত্র সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। আজকের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসবে আগামী দিনের নেতৃত্ব। আমি বিশ্বাস করি, আগামীতেও নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং শিক্ষার্থীরা জাতীয় নেতৃত্ব দেয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করবে।

প্রশ্ন : অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অতিমাত্রায় দলীয় রাজনীতির প্রতি অনুগত। অনেকেই মনে করেন, শিক্ষকরা শিক্ষা-গবেষণার কাজ বাদ দিয়ে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে ক্লাস-কনসালটেন্সিতে মনোযোগী হয়ে পড়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছে না। আপনার মতামত কী?

মাকসুদ কামাল : নতুন জ্ঞান সৃজন ও জ্ঞান বিতরণ শিক্ষকদের প্রাথমিক দায়িত্ব। কেউ যদি নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানের কোনো ক্ষতিসাধন না করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বিতরণের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করেন, তাতে দোষের কিছু নেই। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এমনটিই হয়ে থাকে। কনসালটেন্সি একটি যোগ্যতার বিষয়। দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকরা কনসালটেন্সির মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করে জাতি গঠনে বিশেষ অবদান রাখেন। তবে নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুমতিবিহীন ক্লাস-কনসালটেন্সি অনৈতিক। অধিকন্তু, এমন কার্যক্রম দায়িত্বহীনতার পরিচায়ক। অতিমাত্রায় দলীয় রাজনীতির প্রতি অন্ধ আনুগত্যও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হবে জাতির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক। শিক্ষা-গবেষণায় কিছু ব্যত্যয় হয়ে থাকলেও তা শুধু রাজনৈতিক কারণে হয়েছে বলে আমি মনে করি না। শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণার প্রতি আরও আগ্রহী করা যেতে পারে।

প্রশ্ন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত এবং বর্তমান সময়ের ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতির মধ্যে মৌলিক ও গুণগত পার্থক্যগুলো কী?

মাকসুদ কামাল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকাশের সময়কালকে কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করতে পারি। ১৯২১ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানটি ব্রিটিশ শাসনামলে বিকাশের প্রথম পর্যায় অতিক্রম করেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার পাশাপাশি পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনেও নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৭১ পরবর্তী সময়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিভিন্ন সময়ে স্বৈরাচারী সামরিক শাসন ও অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ উন্নয়নের সর্বোচ্চ ধাপে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে। এই পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের একবিংশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার প্রতি অধিকতর মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

প্রশ্ন : বর্তমানে দেশে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বিদ্যমান। সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদ পার করছে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও শিক্ষা ও গবেষণার প্রতি উদার দৃষ্টিভঙ্গি লালন করেন। এমন পরিস্থিতিতে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকা সমস্যা নাকি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানসিকতা, জ্ঞান-গবেষণার প্রতি অনীহাই মূল সমস্যা বলে আপনি মনে করেন?

মাকসুদ কামাল : প্রশ্নটি আংশিক সঠিক। সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রচুর গবেষণা কাজ রয়েছে এবং চলছে। প্রতি বছর স্ব-স্ব অনুষদের শিক্ষকদের High Impact Factor জার্নালে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গবেষণাকর্ম প্রকাশিত হচ্ছে। সৃজনশীল, মানসম্মত ও মৌলিক গবেষণা বিষয়ে আমাদের আরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে। সৃজনশীল ও মৌলিক গবেষণার জন্য আধুনিক এবং যুগোপযোগী অবকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সম্যক সচেতন।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের প্রাচীনতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও ঢাবি বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং তো দূরের কথা, খোদ এশিয়ার সেরা ৪০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাতেও নাম ওঠাতে পারেনি। এর মূল কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?

মাকসুদ কামাল : র‌্যাঙ্কিংয়ের বিষয়টি আপেক্ষিক। Times Higher Education র‌্যাঙ্কিংয়ে আমরা নেই, কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত কিউ.এস র‌্যাঙ্কিংয়ে এশিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ১২৭তম এবং ওয়ার্ল্ডে ৮০১তম। প্রতিষ্ঠানসমূহ যেসব উপাত্তের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের র‌্যাঙ্কিং করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- মানসম্মত গবেষণা ও গবেষণাগার, একাডেমিক রেপুটেশন, গবেষণার উদ্ধৃতিকরণ, গ্রাজুয়েটদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের হার, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের সুনাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শিল্প খাতের যৌথ গবেষণা ও আবিষ্কার বাবদ আয়, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত, বিদেশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক সংখ্যা, শিক্ষার্থীপ্রতি বার্ষিক ব্যয় ইত্যাদি। উল্লেখিত বিষয়সমূহের মধ্যে বিদেশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা, শিক্ষার্থীপ্রতি মাথাপিছু ব্যয়, গবেষণা বরাদ্দ, মানসম্মত গবেষণাগার, বিশ্ববিদ্যালয়-শিল্প খাত থেকে যৌথ আয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমাদের আরও অগ্রগতি প্রয়োজন। আপনার প্রশ্ন অনুযায়ী, র‌্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান না থাকার আরও বড় কারণ হল- ওয়েবসাইটে তথ্যাদি হালনাগাদ না করা, উদ্ধৃতিকরণ (Citation)-এর জন্য স্কোপাস, গুগল-স্কলার বা রিসার্চগেটে অন্তর্ভুক্তি না থাকা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনা বিনির্মাণ, একটি জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টি, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরি করাসহ জাতির সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ঢাবির যে অবদান তা পৃথিবীর অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে কিনা, তা আমার জানা নেই।

প্রশ্ন : র‌্যাঙ্কিংকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক না থাকা, এমনকি তাদের চাহিদামতো অর্থ না দেয়ায় র‌্যাঙ্কিংয়ে স্থান পায় না ঢাবি- এমন অভিযোগ শোনা গেছে এবং এ জন্য সামনে বরাদ্দ রাখা হবে বলেও খবর বেরিয়েছে। বিষয়টির সত্যতা কতটুকু? সত্য হলে উদ্ভাবন-গবেষণায় মনোযোগ না দিয়ে এমন উদ্যোগ প্রকারান্তরে নিজেদের দায়িত্ব এড়ানোর মতো নয় কী?

মাকসুদ কামাল : র‌্যাঙ্কিংকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেয়ার জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে, এই তথ্যটি সঠিক নয়। তবে র‌্যাঙ্কিংকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ যাতে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি পেতে পারে, সে লক্ষ্যে তথ্যসমূহ হালনাগাদ করা এবং তা ওয়েবসাইটে আপলোড করার জন্য ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রশ্ন : উদ্ভাবন-গবেষণায় অনীহা বা পিছিয়ে থাকার ক্ষেত্রে ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে দেয়া শিক্ষকদের অবাধ স্বাধীনতার কোনো দায় আছে বলে আপনি মনে করেন কী? অনেক সমালোচক বলে থাকেন, এখনও অধ্যাদেশটি থেকে যাওয়া আমাদের উচ্চশিক্ষার জন্য লাভের পরিবর্তে ক্ষতিই বয়ে আনছে। আপনার মতামত কী?

মাকসুদ কামাল : উচ্চশিক্ষার সঙ্গে স্বায়ত্তশাসনের ধারণার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। পৃথিবীর বড় বড় মনীষীগণ বাহ্যিক চাপমুক্ত থেকে গবেষণাকর্মের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। কবিগুরু রবীন্দ নাধ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর একটি ভাষণে বলেছিলেন, ‘অধ্যাপকগণকে আমি আমার অধীনস্থ মনে করি না। তাঁহারা স্বাধীন শুভবুদ্ধির দ্বারা কর্তব্য সম্পন্ন করিয়া যাইবেন ইহাই আমি আশা করি এবং ইহার জন্যই আমি সর্বদা প্রতিক্ষা করিয়া থাকি। কোন অনুশাসনের কৃত্রিম শক্তির দ্বারা আমি তাঁহাদিগকে পুণ্যকর্মে বাহ্যিকভাবে প্রবৃত্ত করিতে ইচ্ছা করি না। তাঁহাদিগকে আমার বন্ধু বলিয়া এবং সহযোগী বলিয়া জানি।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও সেই দর্শনে বিশ্বাস করতেন। সে জন্যই তিনি নতুন রাষ্ট্রের শুরুতেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩ প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা দান করেছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন উন্নত গবেষণা এবং জ্ঞান সৃষ্টির জন্য শিক্ষকদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার থাকা প্রয়োজন। ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা দেয়া হয়েছে, অন্যদিকে সমাজ ও রাষ্ট্রের নিকট সিনেটের মাধ্যমে এর জবাবদিহিতার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য সমাজের সর্বস্তরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সিনেট গঠিত হয়েছে। সিনেটের পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়। সুতরাং এই স্বায়ত্তশাসন হল জবাবদিহিতামূলক এবং এর মূল লক্ষ্য হল একাডেমিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। তবে যেটি প্রয়োজন তা হল- সিনেটকে সর্বাত্মকভাবে কার্যকর রাখা। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক স্বায়ত্তশাসনই নয়, এর পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বায়ত্তশাসনও নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

প্রশ্ন : মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণা নিশ্চিত করতে হলে সবার আগে দরকার মানসম্মত ও শিক্ষানুরাগী শিক্ষক। তেমন শিক্ষক পেতে হলে বিদেশের সেরা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ডিগ্রি নেয়া মেধাবীদের শিক্ষক নিয়োগ দেয়া ও নামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের খণ্ডকালীন হিসেবে আনার বিকল্প নেই। অথচ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগে যেমন স্বচ্ছ ও স্ট্যান্ডার্ড কোনো পদ্ধতি নেই, তেমনি বিশ্বসেরা শিক্ষকদের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদানেরও প্রচলন নেই। এ সংক্রান্ত কোনো বিবেচনা, শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতি পরিবর্তনের পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের আছে কিনা এবং থাকা দরকার বলে আপনি মনে করেন কি না?

মাকসুদ কামাল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতি আন্তর্জাতিক মানের। শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতায় কখনও কখনও ব্যত্যয় ঘটেছে। তবে তা উল্লেখযোগ্য নয়। নিয়োগ ও পদোন্নতি পদ্ধতি আরও স্বচ্ছ ও যুগোপযোগী করার জন্য কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা আছে বলে আমি জানি, তবে স্বচ্ছতার শেষ কোথায়? Tenure-track পদ্ধতিতে উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে শিক্ষা-শিখন ও গবেষণার জন্য শিক্ষক আনা যেতে পারে। পৃথিবীর বহু দেশে এই পদ্ধতি চালু আছে। সার্কভুক্ত দু-একটি দেশও এই পদ্ধতি অনুসরণ করে। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট অবশ্যই বাড়াতে হবে। পাশাপাশি আমাদের দেশের যে সব মেধাবী লোকজন বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ গ্রহণ এবং শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের আকৃষ্ট করার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি।

প্রশ্ন : উদ্ভাবন-গবেষণায় উৎসাহী করার জন্য শিক্ষকদের যেমন বরাদ্দ দরকার, তেমনি ছাত্রদের জন্যও বিভিন্ন বৃত্তির ব্যবস্থা করা গেলে তারাও নিজেদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাপনার জন্য খণ্ডকালীন চাকরি, টিউশনি ইত্যাদির পেছনে না ঘুরে পড়াশোনায় মনোযোগী হবে। এতে দেশেরই লাভ। শিক্ষকদের জন্য গবেষণা বরাদ্দ, ছাত্রদের জন্য বৃত্তি চালু করার কথা বিভিন্ন সময় বলা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী?

মাকসুদ কামাল : বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ছাত্রদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বৃত্তি প্রদান করছে। সরকার, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জেলা, উপজেলা ও অঞ্চলভিত্তিক সভা-সমিতি থেকেও শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পাচ্ছে। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এ বিষয়ে আরও অধিকতর ভূমিকা পালন করতে পারে, যা পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে অনুসৃত হয়ে আসছে। শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা সুদে ব্যাংক লোন প্রথা চালু করাটা বৃত্তি থেকেও বেশি কার্যকর বলে আমার ধারণা। এতে একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষাজীবন শেষে কর্মজীবনে প্রবেশ করার তাগিদ বেশি করে অনুভব করবে এবং নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করবে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষকদের গবেষণা বরাদ্দ বাড়ানো গেলে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবন-গবেষণা কাজে নিয়োজিত করা যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক গবেষণা নেটওয়ার্ক/কোলাবরেশন বাড়ানোর প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।

প্রশ্ন : এ সংক্রান্ত ফান্ড তৈরির জন্য বেসরকারিভাবে কি ঢাবি এগোতে পারে না? বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেমন এর নজির রয়েছে, তেমনি উদ্যোগ নিলে দেশ-বিদেশে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ও নেতৃত্বে থাকা ঢাবির সাবেক ছাত্রদের যথেষ্ট সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা তো রয়েছেই। এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা নেয়া যায় কী?

মাকসুদ কামাল : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় চার বছর পূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট ভবনের এক অনুষ্ঠানে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনকে যুক্ত করে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ড’ নামে একটি তহবিল গঠনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। দিনব্যাপী কোনো কর্মসূচি নিলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অ্যালামনাই হিসেবে তিনি উপস্থিত থেকে তহবিল গঠনে সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে আমি মনে করি এবং তা সময়ের দাবি।

প্রশ্ন : শতবর্ষ পূর্তিকে সামনে রেখে অনুষ্ঠান আয়োজনের বাইরে গিয়ে নতুন নতুন জ্ঞান-উদ্ভাবন-গবেষণায় নেতৃত্ব দিতে কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কিনা?

মাকসুদ কামাল : শতবর্ষকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে অনেক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- শ্রেণীকক্ষ, গবেষণা অবকাঠামো, শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধান ও পরিবেশ উন্নয়নের জন্য ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প; সহশিক্ষা কার্যক্রম ও সভা-সেমিনারের লক্ষ্যে ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে টিএসসি’র আধুনিকায়ন; উন্নত ও মানসম্মত গবেষণার জন্য ৫৫০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয়। গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো ও অনুষদ থেকে প্রকাশিত জার্নালসমূহ যুগোপযোগী করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে আমার জানা আছে। পূর্বাচলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করে সেখানে একটি মেডিকেল ফ্যাকাল্টি ও হাসপাতালসহ চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী আধুনিক গবেষণাগার প্রতিষ্ঠার চিন্তা-ভাবনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের রয়েছে। শতবর্ষে পদার্পণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি বিস্তৃত সুযোগ তৈরি করেছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে যুগোপযোগী ও বিশ্বমানের মানবসম্পদ সৃষ্টির প্রত্যয় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করছে।

প্রশ্ন : ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতির পাশাপাশি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনেরও সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন আপনি। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অভিভাবক হিসেবে তাদের সমস্যা ও দাবি-দাওয়া সম্পর্কে কিছু বলুন।

মাকসুদ কামাল : দেশে বর্তমানে স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি ৩৮টি বিশ্ববিদ্যালয় চালু আছে। বছরান্তে এর সংখ্যা প্রায় ৫০-এ গিয়ে দাঁড়াবে। ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবির্ভাবের মধ্যদিয়ে মানুষের সাংস্কৃতিক ও মনোজাগতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয়। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের সুযোগ গ্রহণ করার জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সাংস্কৃতিক ও মানবিক শিক্ষার পাশাপাশি আরও বেশি পরিমাণে প্রযুক্তি ও কর্মমুখী শিক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। এ জন্য মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে কারিকুলামের বিশদ রিভিশন প্রয়োজন। সরকারকে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করার পদক্ষেপ নিতে হবে। শ্রীলংকা, নেপাল ও ভারতের মতো উচ্চশিক্ষাখাতে বাজেট বাড়াতে হবে। বহুমাত্রিক দক্ষতা অর্জনের জন্য তরুণ শিক্ষকদের ব্যাপক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষার জন্য অধিকতর শিক্ষাবৃত্তি, অবকাঠামো ও গবেষণা বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। শিক্ষকদের জন্য যুগের চাহিদা অনুযায়ী স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রণয়ন করা আজ সময়ের দাবি।

প্রশ্ন : প্রতিবেশী দেশ ভারত, পকিস্তান, এমনকি শ্রীলংকা থেকেও সামাজিক বিভিন্ন সূচকে আমরা এগিয়ে রয়েছি; কিন্তু উল্লেখিত সবগুলো দেশ থেকেই শিক্ষা-গবেষণায় আমাদের অবস্থান অনেক পেছনে। শিক্ষা-গবেষণায় আমাদের উন্নতি করতে হলে নেতৃত্ব নিয়ে ঢাবিকেই এগিয়ে আসতে হবে। শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে নতুন করে সে চ্যালেঞ্জ নিতে ঢাবি কতটুক প্রস্তুত বা আদৌ এ সংক্রান্ত কোনো প্রস্তুতি-পরিকল্পনা রয়েছে কিনা?

মাকসুদ কামাল : শতবর্ষকে সামনে রেখে ঢাবি’র উল্লেখিত পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা পাব বলে আমরা বিশ্বাস করি। দেশের অপরাপর বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুসরণ করে থাকে। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতির প্রভাব অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়া স্বাভাবিক। শতবর্ষের নিকটে দাঁড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘বিশেষ মর্যাদা (Special Status)’ প্রদানের মাধ্যমে একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠানটিকে সম্মানিত করা হবে, অন্যদিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরকে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং জাতি গঠনে অধিকতর ভূমিকা পালনে উৎসাহিত করবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (যিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন) ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘বিশেষ মর্যাদা’ দিতে চেয়েছিলেন। বাঙালি জাতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দুর্ভাগ্য হল, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ওইদিন জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়। শতবর্ষকে সামনে রেখে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আমাদের আবেদন, তিনি যেন জাতির পিতার অসম্পূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘বিশেষ মর্যাদা (Special Status)’ প্রদান করেন। তাহলে উল্লেখিত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের করে ঢাবিও শিক্ষা-গবেষণায় সমানতালে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।

প্রশ্ন : আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মাকসুদ কামাল : আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি - dainik shiksha পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032219886779785