ইজারা দেয়ার সময়ই নির্দেশনা ছিল, সড়ক কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোরবানির পশুর হাট বসানো যাবে না। কিন্তু এ নির্দেশনার তোয়াক্কা না করেই লক্ষ্মীপুরের বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের মাঠে পশুর হাট বসিয়েছেন ইজারাদাররা। এতে ওইসব বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি গবাদি পশুর মলমূত্রে নষ্ট হচ্ছে সার্বিক পরিবেশ।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার কোরবানি উপলক্ষে রায়পুর উপজেলায় ১৬টি, রামগঞ্জে ২৩টি, সদরে ১৭টি, রামগতিতে আটটি ও কমলনগর উপজেলায় পাঁচটি পশুর হাট ইজারা দেয়া হয়েছে। তবে কোনোভাবেই এসব হাট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রধান সড়কে বসানো যাবে না। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ইজারাদারদের নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি সতর্কও করা হয়েছে।
কিন্তু পশুর হাট বসানোর জন্য প্রশাসনের যে নির্দেশনা রয়েছে, ইজারাদাররা তা মানছেন না। জেলার বেশকিছু পশুর হাট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠেই বসানো হয়েছে। স্থানীয়রা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
এবার রামগঞ্জে পশুর হাট ইজারা দেয়া হয়েছে ২৩টি। এর মধ্যে নয়টি হাট বসানো হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে। ইজারাদাররা এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানকালেই গরু-ছাগল কেনাবেচার ব্যবস্থা করেছেন।
সরেজমিন উপজেলার পানপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির মাঠে বসানো হয়েছে কোরবানির পশুর হাট। হই-হট্টগোলের মধ্যে পাঠদান সম্ভব না হওয়ায় শ্রেণিকক্ষের বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে শিক্ষার্থীরা। নিরুপায় হয়ে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় ছুটি দিতে বাধ্য হন।
এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসমাইল হোসেন বলেন, শুনেছি ইজারাদার নাকি প্রশাসনের কাছ থেকে বিদ্যালয়ের মাঠে হাট বসানোর অনুমতি এনেছে। তাই কিছু বলতে পারছি না। তবে এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি।
এভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে পশুর হাট বসানোর অনুমতি আছে কিনা, জানতে চাইলে এ হাটের ইজারাদার বিপ্লব বলেন, ওই স্কুলের পাশের মাঠে গরুর হাট বসানোর জন্য প্রশাসন থেকে অনুমতি পেয়েছি।
শুধু রামগঞ্জেই নয়, একইভাবে সদর উপজেলায়ও একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ দখল করে বসানো হয়েছে কোরবানির পশুর হাট। লক্ষ্মীপুর-রামগঞ্জ সড়কের পাশে পালেরহাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও পূর্ব গোপীনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি মাঠ দখল করে চলছে পশু কেনাবেচা। ফলে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইজারাদারের দাবি, বিদ্যালয়ের মাঠে হাট বসানোর জন্য উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নেয়া হয়েছে। তা ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও এ বিষয়ে সমন্বয় করা হয়েছে।
এদিকে রামগতির তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ এবং কমলনগর ও রায়পুর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বসানো হয়েছে কোরবানির পশুর হাট।
রায়পুর কাজির দীঘির পাড় সমাজ কল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিন বলেন, ইজারাদাররা মিথ্যা কথা বলে স্কুল মাঠ দখল করে পশুর হাট বসিয়েছেন। এতে বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ঠিকভাবে পাঠদান করা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল ও রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাছির জাহান জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ ও প্রধান সড়ক ছাড়া অন্য খালি স্থানে পশুর হাট বসানোর অনুমতি রয়েছে। এ বিষয়ে ইজারাদারদের সতর্কও করা হয়েছে। এর পরও অনিয়ম করলে তাদের ইজারা বাতিল করা হবে।